নয়া দিল্লি: গত কয়েকদিন ধরে চলছে মলদ্বীপ বনাম লাক্ষাদ্বীপ বিতর্ক। যে বিতর্কের জেরে পদ হারিয়েছেন মলদ্বীপের তিনজন মন্ত্রী। ভারত জুড়ে উঠেছে মলদ্বীপ ভ্রমণ বয়কটের ডাক। প্রভাব পড়েছে পর্যটন ক্ষেত্রে। একদিকে দলে দলে ভারতীয় পর্যটকরা মবদ্বীপ ভ্রমণ বাতিল করেছেন। বিমানের টিকিট, রিসর্ট-হোটেল বুকিং বাতিল করেছেন। পাল্লা দিয়ে আগ্রহ বেড়েছে লাক্ষাদ্বীপ নিয়ে। লাক্ষাদ্বীপে কীভাবে যাওয়া যায়, ভ্রমণের খরচ কত, কী কী দেখার জায়গা আছে, অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টস কী কী রয়েছে – এই সকল প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন ভারতীয়রা। এর মধ্যে আচমকা লাক্ষাদ্বীপের প্রশংসা করে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্ট করেছিলেন জনপ্রিয় ইউটিউবার তথা ব্লগার ধ্রুব রাঠি। যার জেরে নেট দুনিয়ায় ট্রোলিংয়ের মুখে পড়তে হল তাঁকে।
এই বিতর্কের সূচনা হয়েছিল, প্রধানমন্ত্রী মোদীর লাক্ষাদ্বীপ সফরকে কেন্দ্র করে। লাক্ষাদ্বীপে দিয়ে সেখানকার কয়েকটি ছবি পোস্ট করে, ভারতীয় পর্যটকদের এই দেশিয় দ্বীপে ভ্রমণের আহ্বান জানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। জানিয়েছিলেন, মনে অ্যাডভেঞ্চারের ইচ্ছা থাকলে লাক্ষাদ্বীপে আসুন। এরপরই ভারতীয় নেটিজেনদের একাংশ মলদ্বীপে যাওয়ার বদলে লাক্ষাদ্বীপে যাওয়ার আওয়াজ তুলেছিলেন। তখনও পর্যন্ত কোনও বিতর্ক ছিল না। কিন্তু এরপরই, আচমকা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং ভারতীয়দের সোশ্যাল মিডিয়ায় আক্রমণ করে বসেন মলদ্বীপের বেশ কয়েকজন মন্ত্রী।
মরিয়ম শিউনা নামে এক প্রতিমন্ত্রী, সরাসরি নরেন্দ্র মোদীকে জোকার এবং ইজরায়েলের হাতে পুতুল বলে অপমান করেন। হাসান জিহান নামে আরেক প্রতিমন্ত্রী বলেন, ভারতীয়রা তাঁদের মতো পরিষেবা দিতে পারবেন না। কারণ ভারতীয়রা খুব নোংরা। তাদের ঘর থেকে কটু গন্ধ বের হয়। তিনি আরও দাবি করেন, খোলা জায়গায় শৌচকার্য করেন। মলদ্বীপের মন্ত্রীদের এই ধরনের মন্তব্যের ফলে স্বাভাবিকভাবেই তীব্র ক্ষোভ তৈরি হয় ভারতীয়দের মধ্যে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রেন্ড করতে শুরু করে ‘বয়কট মলদ্বীপ’ (#BoycottMaldives)।
Biggest hypocrite. Mr Dhruv Rathee please tell us,where did you stay at the island?under seawater?,on trees?,somewhere else?.but I know not in hotel or resort because you love raw nature & are concerned with its preservation. Why didn’t you swim to reach there preserve raw nature
— Kashish saxena (@Kashish08000) January 8, 2024
ক্রিকেটার সচিন তেন্ডুলকর, বীরেন্দ্র সেওয়াগ, অভিনেতা অমিতাভ বচ্চন, সলমন খান, অক্ষয় কুমারদের মতো সেলিব্রিটিরা মলদ্বীপে না গিয়ে লাক্ষাদ্বীপে যাওয়ার পক্ষে সোশ্য়াল মিডিয়ায় পোস্ট করেন। সেই তালিকায় ছিলেন ব্লগার ধ্রুব রাঠিও। কিন্তু, তাঁর পোস্টের জেরে তাঁকে ট্রোলড হতে হল। কী এমন পোস্ট করেছিলেন ধ্রুব রাঠি? আসলে বছর সাতের আগেই লাক্ষাদ্বীপ ভ্রমণে গিয়েছিলেন ধ্রুব। সেখানকার তিনটি ছবি পোস্ট করে, তার ক্যাপশনে তিনি লেখেন, “এটা মলদ্বীপ নয়, এটা ভারত। এই অনাবৃত প্রকৃতির সৌন্দর্য, রিসর্টবিহীন দ্বীপগুলি অতুলনীয়। আশা করি আমরা এই প্রকৃতিকে চিরকাল ধরে রাখতে পারব।”
তাঁর এই পোস্টে লাক্ষাদ্বীপের প্রশংসা করার মধ্য দিয়েই মলদ্বীপের পর্যটনকে উৎসাহ দিয়েছেন ধ্রুব রাঠি, এমনই দাবি করছেন নেটিজেনদের একাংশ। আসলে, ধ্রুব রাঠি যে তাঁর পোস্টে, লাক্ষাদ্বীপে কোনও রিসর্ট নেই বলে উল্লেখ করেছেন, তাই নিয়েই চটেছেন তাঁরা। রিসর্ট নেই এবং প্রকৃতিকে ধরে রাখার বক্তব্য থেকেই দুয়ে দুয়ে চার করছেন তাঁরা। তাঁদের মতে, ধ্রুব রাঠি সবসময়ই মোদী সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলেন। এই ক্ষেত্রেও সূক্ষ্মভাবে তাই করেছেন। লাক্ষাদ্বীপে যে রিসর্ট নেই, এটা আসলে লাক্ষাদ্বীপের সমালোচনা বলেই দাবি করছেন তাঁরা। তাঁকে ভন্ড বলে উল্লেখ করে, অনেকে তাঁকে প্রশ্ন করেছেন, ‘ধ্রুব আপনি এই দ্বীপে কোথায় ছিলেন? সমুদ্রের জলের নীচে?, গাছে? , অন্য কোথাও?’ প্রকৃতি সংরক্ষণের নামে তিনি লাক্ষাদ্বীপের উন্নয়নও চান না বলে দাবি করেছেন তাঁরা।