কলকাতা: কন্যাদায় বড় দায়! বিবাহযোগ্য কন্যার বিয়ের খরচ জোগাতে পথে বসেন অনেক মা-বাবাই। সেই দায় থেকে কিছুটা মুক্তি দিতে রাজ্য সরকারের তরফ থেকে রূপশ্রী প্রকল্প (Rupasree Prakalpa)-র সূচনা করা হয়। কন্যাশ্রী প্রচারের আলোয় আসায় সকলের কাছে প্রশংসিত হলেও এই প্রকল্প সম্পর্কে অনেকেই জানেন না, ফলে এই প্রকল্পের সুবিধা থেকেও বঞ্চিত হন অনেকে।
রূপশ্রী প্রকল্প কী?
২০১৮-১৯ র বাজেটে রাজ্যের অর্থমন্ত্রী বিবাহযোগ্য মহিলাদের এককালীন নগদ ২৫ হাজার টাকা দেওয়ার ঘোষণা করেন। এরই নাম দেওয়া হয় রূপশ্রী প্রকল্প। আর্থিকভাবে দুর্বল পরিবার নিজের মেয়ের বিয়ের খরচের জন্য যেভাবে নিজের শেষ পুঁজিটুকুও উজাড় করে দেন এবং দেনার জালে জড়িয়ে পড়েন, তা থেকে উদ্ধার করতেই এই প্রকল্পের সূচনা। ২০১৮ সালের ১ এপ্রিল থেকেই প্রকল্প কার্যকরী হয়।
এই প্রকল্পের অধীনে কারা রয়েছেন-
বিয়ের জন্য এককালীন ২৫ হাজার টাকা পাওয়ার জন্য আবেদনকারীকে নিম্নলিখিত শর্তগুলি পূরণ করতে হবে-
১. আবেদনকারীর বয়স ১৮ বা তার বেশি হতে হবে।
২. আবেদনপত্র জমা দেওয়ার সময় তাঁকে অবিবাহিত হতে হবে।
৩. প্রথম বিবাহের জন্যই আবেদন করা যেতে পারে।
৪.আবেদনকারীকে পশ্চিমবঙ্গে জন্মগ্রহণ বা বিগত পাঁচ বছর ধরে রাজ্যে বসবাস কিংবা পাত্রীর মা-বাবাকে রাজ্যের স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে।
৫. বার্ষিক পারিবারিক উপার্জন ১.৫০ লাখ টাকা বা তার কম হতে হবে।
৬. পাত্রের বয়স ২১ বছর বা তার বেশি হতে হবে।
৭. আবেদনকারীর একক ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থাকতে হবে। আইএফএস কোড (IFS Code), এমআইসিআর কোড (MICR Code) ও এনইএফটি (NFT)-র মাধ্যমে অনলাইন লেনদেন হয়, এমন ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট থাকতে হবে।
আবেদনপত্র কোথায় পাবেন?
১. গ্রামীণ অঞ্চলে ব্লক ডেভেলপমেন্ট অফিস থেকে বিনামূল্যে আবেদনপত্র পাওয়া যাবে।
২. পৌর অঞ্চলে সাব-ডিভিশন অফিস থেকে আবেদনপত্র পাওয়া যাবে।
৩. পুরসভা অঞ্চলের বাসিন্দাদের ক্ষেত্রে পৌরপ্রধানের দপ্তর থেকেই আবেদনপত্র পাওয়া যাবে।
http://www.wbcdwdsw.gov.in -এই পোর্টাল থেকেও আবেদনপত্র ডাউনলোড করা যায়।
আবেদনপত্র জমা করতে কী কী নথি ও শংসাপত্র জমা দিতে হবে?
আবেদনপত্রের সঙ্গে জমা দিতে হবে নিম্নলিখিত নথিগুলি-
১. বয়সের প্রমাণপত্র হিসাবে জন্মের নথি/ ভোটার আইডি কার্ড/প্যান কার্ড/মাধ্যমিকের অ্যাডমিট কার্ড/আধার কার্ড বা স্কুল ছাড়ার সরকারী নথি নিজে সই করে জমা দিতে হবে।
২.নিজস্ব সই সহ অবিবাহিত প্রমাণপত্র জমা দিতে হবে।
৩.পরিবারের বার্ষিক আয়ের প্রমাণপত্রও নিজের সই সহ জমা করতে হবে।
৪. স্থায়ী ঠিকানার প্রমাণপত্র জমা করতে হবে আবেদনকারীকে নিজের সইসহ।
৫.ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের পাসবুকের জেরক্স কপি জমা করতে হবে। পাস বইয়ের যে পাতায় অ্যাকাউন্ট গ্রহীতার নাম, অ্যাকাউন্ট নম্বর, ব্যাঙ্কের ঠিকানা, আইএফসি কোড ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় তথ্যগুলি থাকে, সেই পাতাটিরই জেরক্স জমা করতে হবে সই সহ।
৬.বিয়ের প্রমাণপত্র অর্থ্যাৎ বিয়ের আমন্ত্রণ পত্র কিংবা বিয়ের রেজিস্ট্রেশনের নোটিশপত্র জমা করতে হবে।
৭. পাত্রের বয়সের প্রমাণপত্র হিসাবে জন্মের সার্টিফিকেট/ ভোটার আইডি কার্ড/ প্যান কার্ড/আধার কার্ড/মাধ্যমিকের অ্যাডমিট কার্ড/সরকারি সিলমোহরযুক্ত স্কুল ছাড়ার নথি জমা করতে হবে।
৮. আবেদনকারী অর্থ্যাৎ পাত্রী ও হবু স্বামীর রঙিন পাসপোর্ট সাইজের ছবি জমা করতে হবে আবেদনপত্রের সঙ্গে।
তবে বিশেষভাবে মনে রাখতে হবে নির্ধারিত বিয়ের দিনের থেকে ৩০দিনের কম বা ৬০ দিনের আগে আবেদন করা যাবে না। উল্লেখিত শর্তপূরণে কোনও ভুল থাকলে সেই আবেদনপত্র বাতিল করে দেওয়া হবে।
কীভাবে আবেদন অনুমোদিত হয় ও টাকা পাঠানো হয়?
আবেদনকারীর যাবতীয় তথ্যপ্রমাণ আধিকারিক (বিডিও /এসডিও /কমিশনার) যাচাই করেন। এরপর ড্রয়িং অ্যান্ড ডিসবার্সিং অফিসার সরাসরি আবেদনকারীর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টেই এককালীন ২৫ হাজার টাকা পাঠান। সম্পূর্ণরূপে অনলাইন এই পদ্ধতিতে টাকা পাঠানো হয়। এর ওয়েবসাইটটি হল www.wbrupashree.gov.in ।
আরও পড়ুন: জিজ্ঞাসা: টেট উত্তীর্ণদের নিয়োগ নিয়ে নবান্নের বিজ্ঞপ্তি, জেনে নিন পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্য