
কলকাতা: যুবভারতী মামলায় এবার উঠে এল মেসির মূর্তি প্রসঙ্গ। কলকাতা হাইকোর্টে বিচারপতি পার্থ সারথী সেনের প্রশ্ন, সুজিত বসু যে মূর্তি করেছেন, সেটা কি সরকারি জমিতে ? না ব্যক্তিগত জমিতে বসানো হয়েছে? সরকারি জমিতে এভাবে ব্যক্তিগতভাবে কিছু বসানো যায়? পাল্টা রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বিল্বদল ভট্টাচার্য আদালতে জানান, ৬৫ কোটি টাকা আগেই দেওয়া হয়েছিল। তিনি প্রশ্ন তোলেন. “এত টাকা কীভাবে দেওয়া হয়? কারা আগের ডিরেক্টর ছিলেন? টেন্ডার কি দেওয়া হয়েছিল?” আর এ ক্ষেত্রেই উঠে আসে মানি ট্রেলের প্রসঙ্গ।
শুভেন্দুর আইনজীবী প্রশ্ন করেন, “রাস্তার ধারে মূর্তি বানানো হয়েছে। শাসকদলের নেতা সেই মূর্তি বানালেন কীভাবে? ১২ টার সময় ঘটনা ঘটল, আর ১ টায় মুখ্যমন্ত্রী কমিটি গঠন করলেন।” তাঁর বক্তব্য, বিধানসভার অনুমতি ছাড়া কোনওভাবে কমিটি হয় না।
মামলাকারীর আইনজীবী সব্যসাচী চট্টোপাধ্যায় সওয়াল করেন, “আন্তর্জাতিক আর্থিক দুর্নীতি।” সিরিয়াস ফ্রড ইনভেস্টিগেটিভ অফিস দিয়ে তদন্ত করানোর দাবি জানান তিনি। আরেক মামলাকারীর আইনজীবী বিকাশ ভট্টাচার্য আদালতে জানান, “পুলিশের তদন্তের আগেই প্রসাশনিকভাবে কমিটি হয়ে গেল। তারপর ডিজি শোকজ হয়ে গেলেন। আন্তর্জাতিকস্তরে এই খবর ছড়িয়ে পড়েছে। জুনিয়র র্যাঙ্কের অফিসার বা রাজ্যসরকারের অধীনে তদন্ত করতে দেওয়া যায় না।”
এরপর রাজ্যের তরফে সওয়াল করেন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি ঘটনার প্রেক্ষিতে দুঃখপ্রকাশ করে বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী নিজেই দুঃখপ্রকাশ করেন। রাজ্যের সর্বোচ্চ পদাধিকারীর পক্ষ থেকে দুঃখ প্রকাশ করা হয়েছে। ৭ নভেম্বর অনুষ্ঠানের অনুমতি দেওয়া হয়। শুধু শাসক নয়, অসংখ্য পেশার মানুষ হায়াতে উপস্থিত হন।” তিনি জানান, শুধু লজিস্টিক সাপোর্ট চাওয়া হয় মুখ্যসচিব ও ডিজির কাছে। ৪০০ টি পাসের ব্যবস্থা হয়, তার মধ্যে ২৭ টি ক্লোজ প্রক্সিমিটি পাস ও ৩৭৩ ডিউটি পাস। স্যোশাল মিডিয়া মনিটরিংয়ের সদস্যদের ৬ টি পাস। আরও ৭৬ পাস ক্লোজ প্রক্সিমিটিদের জন্য। তিনি জানান, মেসির থাকার কথা ছিল ১.০৫ পর্যন্ত।
তখন বিচারপতি পার্থসারথী সেন প্রশ্ন করেন, “এমন একটি অনুষ্ঠানে রাজ্য কি নিজে এসেসমেন্ট করে পাস দিয়েছিল নাকি যা চাহিদা ছিল সেটাই বিতরণ করা হয়েছে?” রাজ্যের তরফে বলা হয়, “আমাদের সে সময় ছিল না। তাহলে অনুষ্ঠান বন্ধ করতে হত। কোন পাবলিক ইভেন্টে সরকার টিকিট বিক্রি করে না। তাই টিকিটের মূল্য কত সেটা সরকার ঠিক করে না।” তখনই বিচারপতি জানতে চান, “সুজিত বসু যে মূর্তি করেছেন, সেটা কি সরকারি জমিতে ? না ব্যক্তিগত জমিতে বসানো হয়েছে? সরকারি জমিতে এভাবে ব্যক্তিগতভাবে কিছু বসানো যায়?”
রাজ্যের তরফে কল্যাণ বলেন, “এটা আমরা জানি না। মুখ্যমন্ত্রী নিজে ক্ষমা চেয়েছেন। রাজ্য আর কি করতে পারে? মেসির সঙ্গে ছবি তুলতে ১০ লক্ষ টাকা চাওয়া হয়েছে, এই অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যে । রাজ্যের উচিৎ এই সব মামলাকারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া।” কল্যাণ জানান, ২১ কোটি টাকা পাঁচটি অ্যাকাউন্টে রয়েছে। সব বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।
টিকিট বিক্রি নিয়ে প্রসঙ্গ উঠতেই শতদ্রুর আইনজীবী ইন্দ্রনীল রায় বলেন, “যদি ৪০০ জনের বেশি কেউ মাঠে আসে তাহলে সেটা উদ্যোক্তাদের দোষ হতে পারে না।” তাঁর কথায়, “এটা একমাত্র পুলিশের দোষ।” তিনি অভিযোগ করেন, পুলিশকেও সেলফি তুলতে দেখা গিয়েছে। তিনি দাবি করেন, শ্রেয়া ঘোষাল বা অরিজিতের অনুষ্ঠানে লোক ৫০ হাজার দিয়েও টিকিট কেনে।
এরপরই বিচারপতি পার্থসারথী সেন বলেন, “টিকিটের এত দামের পর দুটো প্রশ্ন থাকে। এক ব্ল্যাক মার্কেটিং আর এত টাকা দিয়েও কেউ দেখতে পায়নি।”