
কলকাতা: সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপে রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে হল স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ। জট কাটল তবে আংশিক। শান্তা দত্ত নিলেন বিদায়। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় পেল স্থায়ী উপাচার্য। আর শুধুই কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় নয়, এদিন স্থায়ী উপাচার্য পেল আরও ৭টি বিশ্ববিদ্যালয়। বাকি পরে থাকল আরও ৭টি। জানা যাচ্ছে, সুপ্রিম কোর্টের গ্রিন সিগন্যাল মিললেও এইসব স্থায়ী উপাচার্যদের নিয়োগপত্র দেবেন রাজ্যপালই। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থায়ী উপাচার্য হিসেবে ওমপ্রকাশ মিশ্রের নাম প্রস্তাবে সুপ্রিম কোর্টে বিরোধিতা করা হয় রাজ্যপাল তথা আচার্যের তরফে। যেহেতু এখনও সুপ্রিম কোর্টে মামলার নিষ্পত্তি হয়নি, তাই, উপাচার্য নিয়োগে কোনও কাঁটা যে থাকল না, একথা হলফ করে বলতে পারছেন না বিশেষজ্ঞ মহলের একাংশ।
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে সোমবার রাজ্যের মোট ৮টি বিশ্ববিদ্যালয় পেয়েছে স্থায়ী উপাচার্য। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থায়ী উপাচার্য পদে বসানো হচ্ছে আশুতোষ ঘোষকে। এই বিশ্ববিদ্যালয়েরই রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক তিনি। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে বসানো হচ্ছে কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের অধ্যাপক চিরঞ্জীব ভট্টাচার্যকে। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্য়ালয়ে স্থায়ী উপাচার্য করা হল ওম প্রকাশ মিশ্রকে। এছাড়াও, গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে আশিষ ভট্টাচার্য, কাজি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে উদয় বন্দ্যোপাধ্য়ায়, রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্ণব সেন, সাধু রামচাঁদ বিশ্ববিদ্যালয়ে চন্দ্রদীপা ঘোষ ও বিশ্ব বাংলা বিশ্ববিদ্যালয়ে আবু তালেবকে স্থায়ী উপাচার্য হিসাবে নিয়োগ করা হচ্ছে বলেই খবর।
উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে সর্বদাই বিতর্কে থেকেছেন তিনি। ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য থাকাকালীন তাঁর বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছিলেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। সেই ওম প্রকাশ মিশ্র এবার বসলেন উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী উপাচার্যের পদে। তবে ওম প্রকাশ মিশ্রকে রাজনীতির আঙিনায় বরাবরই দেখা গিয়েছে, কিন্তু এই মুহূর্তে প্রত্যক্ষ রাজনীতি থেকে দূরত্ব বজায় রেখে চলেন তিনি।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য পদে থাকাকালীন বিতর্কের মুখে থেকেছেন শান্তা দত্ত। কখনও ব্রাত্য বসু বনাম শান্তা, কখনও বা তৃণমূল ছাত্র পরিষদের নেতা বনাম শান্তা। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষাকে ঘিরে শান্তা যে অবস্থান নিয়েছিলেন, রাজনীতির আঙিনায় তো বটেই, শিক্ষামহলেও বেশ সাড়া পড়ে যায়। এমনও দেখা গিয়েছে, খোদ মুখ্যমন্ত্রীর অনুরোধও প্রত্যাখ্যান করতে। আর তারপর থেকেই রাজ্য বনাম শান্তা বা তৃণমূল বনাম শান্তা বিতর্ক দানা বেঁধেছে। উপাচার্যকে শান্তাকে একাধিক বিশেষণে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি খোদ শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। এমনকি, শান্তার শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন তৃণমূল ছাত্রনেতা অভিরূপ চক্রবর্তী। পরে তাকে সেন্সর করেন শান্তা। অর্থাৎ শান্তার ইনিংস ছোট্ট হলেও টানটান ছিল।
বর্তমানে রাজ্য়ে মোট ৩৬টি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। যার মধ্য়ে ১৯টিতে স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ হলেও সমস্যা তৈরি হয়েছিল ১৭টি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ে। এই ১৭টি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রস্তাবিত উপাচার্যদের নাম নিয়ে সর্বপ্রথম সরব হয়েছিলেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। বাকি ১৯টিতে মুখ্যমন্ত্রীর পছন্দের নামে সায় দিলেও এই ১৭টি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের নামে আপত্তি জানান তিনি। এরপর শুরু হয় রাজ্য-রাজ্যপাল সংঘাত। যা এতটাই চরমে ওঠে যে সংশ্লিষ্ট পক্ষকে দ্বারস্থ হতে হয় সুপ্রিম কোর্টে। সেই সময় গোটা বিষয়টি নিয়ে নিজেদের মধ্য়ে আলোচনার মাধ্য়মে সমাধান সূত্র খুঁজে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিল শীর্ষ আদালত।
কিন্তু তা হয়নি। বরং বিবাদ আরও চরমে ওঠে বললেই চলে। ফলত পরিস্থিতি সামাল দিতে বিচারপতি সূর্যকান্তের বেঞ্চের নির্দেশে গঠিত হয় একটি কমিটি। অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি উদয় উমেশ ললিত নেতৃত্বাধীন সার্চ কমিটিকে ওই ১৭টি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী উপাচার্য খোঁজার দায়িত্ব দেয় শীর্ষ আদালত। শেষ শুনানিতেই দু’টি বিশ্ববিদ্যালয়ের জট কেটেছে। বাকি ছিল ১৫টি। যার মধ্যে এদিন ৮টি বিশ্ববিদ্যালয়ের জট কাটল বললেই চলে। বাকি পড়ে থাকল ৭টি। যেগুলির ‘ভাগ্য’ নির্ধারণ আগামী শুনানিতে।