কলকাতা: কলকাতা পুরনিগমের ৮৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তিনি। তিনি মনীষা বসু। গত মঙ্গলবার, কলকাতার মহানাগরিক ফিরহাদ হাকিমের শপথগ্রহণের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মনীষা। তারপরেই জ্বরে কাবু হয়ে পড়েন তিনি। শরীর খারাপ লাগতে শুরু করে। গতকাল অর্থাৎ রবিবার রাতে মনীষার রিপোর্ট পজিটিভ (COVID19 Positive) আসে।
একা মনীষা নন, আক্রান্ত হয়েছেন তাঁর স্বামী দেবাশিস বসুও। ওই শপথগ্রহণের অনুষ্ঠান থেকে আসার পরেই অনেকেরই মতো অসুস্থ বোধ করছিলেন মনীষা। তারপরেই জ্বর আসে তাঁর। পরীক্ষা করাতে কোভিড ধরা পড়ে। তবে, তিনি করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনে আক্রান্ত কি না তা এখনও জানা যায়নি।
তবে কেবল মনীষাই নন, আক্রান্তের তালিকায় রয়েছেন খোদ মেয়র ফিরহাদ হাকিমের ঘরে কর্মরত ডাটা এন্ট্রি অপারেটরও। বুধবার তাঁর করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে। মঙ্গলবার এই কর্মীর উপরেই যাবতীয় অনুষ্ঠানের একাধিক বিষয়ের দায়িত্বভার ন্যস্ত ছিল বলে খবর।
সূত্রের খবর, ফিরহাদ হাকিমের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন এমন প্রায় ৪০ শতাংশ মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। উত্তর কলকাতার এক বোরো চেয়ারম্যান ছাড়াও বেশ কয়েকজনের করোনা পজিটিভ ধরা পড়েছে বলে খবর। পুরনিগমের বেশ কয়েকজন কর্মীও জ্বর-জ্বর অনুভব করছেন। যাঁদের যাঁদের শরীরে উপসর্গ দেখা গিয়েছে, তাঁদের প্রত্যেকের করোনা পরীক্ষা করানো হচ্ছে।
উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার কলকাতার মেয়র হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন ফিরহাদ হাকিম। শপথ গ্রহণ পর্বে ছিল ঠাসা ভিড়। অধিংকাংশের মুখেই দেখা যায়নি মাস্ক। শারীরিক দূরত্ববিধিরও কোনও বালাই ছিল না। এই পরিস্থিতিতে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের পর পরই এতজন জ্বর জ্বর অনুভব করায় স্বাভাবিকভাবেই দুশ্চিন্তা বাড়ছে।
প্রাথমিকভাবে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার ফিরহাদ হাকিমের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে যাঁরা উপস্থিত ছিলেন, তাঁদের মধ্য়ে অনেকেই আগে থেকে অসুস্থ ছিলেন। পরে অনুষ্ঠান থেকে ফিরে, রাতে তাঁরা করোনা পরীক্ষা করিয়েছেন বলে সূত্রের খবর।
কলকাতার মেয়রের শপথগ্রহণের অনুষ্ঠানে এভাবে ঠাসাঠাসি ভিড় ও সেই অনুষ্ঠানেই এভাবে আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে সরকারকেই বিঁধছে বিরোধী শিবিরগুলি। অধুনা বিজেপি বিধায়ক ও রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী সাফ দাবি করেন, ওইভাবে শপথগ্রহণের অনুষ্ঠানে ভিড় ও করোনাবিধি না মানার ফলেই এ ভাবে সংক্রমণ বাড়ছে। তাঁর কথায়, “পার্কস্ট্রিটের জনজোয়ার আর মেয়রের শপথগ্রহণ থার্ড ওয়েভের আঁতুড়ঘর।” তাঁর আরও সংযোজন, “মেয়রের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে খোঁজ নিয়ে দেখুন, সেখানেও এক আধজন করোনা আক্রান্ত। অনেকেরই জ্বর এসেছে। টেস্ট করালে অনেক কাউন্সিলরেরও করোনা ধরা পড়বে। ওখান থেকেই থার্ড ওয়েভ আসছে।”
২০২১ৃ-এর পুর নির্বাচনে ৮৭ নম্বর ওয়ার্ড থেকে জয়ী হন তৃণমূলের মনীষা বসু। পুরভোটআবহে, তাঁর স্বামী দেবাশিস বসুর সঙ্গে হুডখোলা জিপে মনীষাকে নিজ ওয়ার্ডে প্রচার করতেও দেখা গিয়েছে। পুরনির্বাচনে মনীষার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন তনিমা চট্টোপাধ্যায়। প্রায় ৬৪.৯৭ শতাংশ ভোটে জয় পান মনীষা।
উল্লেখ্য, এক সময় ৮৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ছিলেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়। পরে তাঁর বোন তনিমা চট্টোপাধ্যায় এই ৮৭ নম্বর ওয়ার্ড থেকে তৃণমূলের টিকিটে জিতে কাউন্সিলর হয়েছিলেন। কিন্তু ২০১৫ -তে বদল আসে এই ওয়ার্ডে। বিজেপির টিকিটে জিতে কাউন্সিলর হন সুব্রত ঘোষ। এ বার বিজেপির প্রার্থী বদল হয়। অনুশ্রী চট্টোপাধ্যায়কে টিকিট দেয় বিজেপি। ৮৭ নম্বর ওয়ার্ড এ বার মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত ছিল।