কলকাতা : দলের নেতা-মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে কার্যত যুদ্ধ ঘোষণা করে দিয়েছেন তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। বিগত কয়েক দিন ধরেই এই চাপানউতোর চলছে। এরইমধ্যে সোমবার আদালতে কার্যত বোমা ফাটান কুণাল ঘোষ। বলেছেন, “আইকোরের মঞ্চে যিনি ছিলেন, তিনি একজন মন্ত্রী। সেই মন্ত্রী আমায় পাগলও বলেছিলেন। মঞ্চে যিনি বক্তৃতা করেছিলেন। আজ তিনি ঘুরে বেরাচ্ছেন। তাঁকে ঘাড় ধরে জেলে ঢোকানো উচিত।” তৃণমূল মুখপাত্র সরাসরি কারও নাম নেননি ঠিকই, কিন্তু তাঁর ইঙ্গিত কোনদিকে ছিল, তা স্পষ্ট। রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের দিকেই ইঙ্গিত করেছেন তিনি। এর পাশাপাশি অনুব্রত মণ্ডলের উডবার্ন ওয়ার্ডে ভর্তি থাকা নিয়েও নাম না করে বক্রোক্তি করেছেন কুণাল। একের পর এক এমন মন্তব্যের পরই কুণালের বিরুদ্ধে ফেসবুক পোস্ট ছেয়ে গিয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় কুণালের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন দলেরই একাংশ।
মধ্য কলকাতার তৃণমূল ছাত্র পরিষদের নেতা শুভজিৎ চক্রবর্তী তাঁর ফেসবুক হ্যান্ডেলে পোস্ট করেছেন কুণালের বিরুদ্ধে। লিখেছেন, দল বিরোধী মুখপাত্রের অবিলম্বে বহিষ্কার চাই। শুধু শুভজিৎ চক্রবর্তীই নন, এমন অনেকেই ফেসবুকে কুণাল বিরোধী পোস্ট করতে শুরু করেছেন। তাহলে কি এবার দলের মধ্যেই কোণঠাসা হয়ে পড়ছেন তৃণমূল মুখপাত্র? এই ধরনের পোস্টকে কীভাবে দেখছেন কুণাল ঘোষ? জানতে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে কুণাল ঘোষ বিষয়টি নিয়ে কোনওরকম মন্তব্য করতে চাননি। প্রশ্ন করায় তাঁর সংক্ষিপ্ত জবাব, “কী নিয়ে বলছে, কেন বলছে, কিছুই জানি না।”
কুণাল বাবু বিষয়টিকে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেও, এই ধরনের ডিজিটাল বিদ্রোহ কিছুদিন আগেও দলের অন্দরে দেখা গিয়েছিল। তখন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের ডায়মন্ড হারবার মডেল নিয়ে মুখ খুলেছিলেন শ্রীরামপুরের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি অবশ্য দলবিরোধী কিছু বলেননি। বলেছিলেন, তাঁর কাছে দলের নেত্রী একজনই – মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নীচু তলা থেকে উঁচু তলা পর্যন্ত আর পাঁচজন তৃণমূল নেতা – কর্মীও এই একই কথা বলবেন। কিন্তু তখন প্রেক্ষিত ছিল আলাদা। সেই সময় দলের অন্দরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে কেন্দ্র করে পৃথক দুটি ক্ষমতার বলয় তৈরি হওয়া নিয়ে জোর জল্পনা ছড়িয়েছিল। আর তার মধ্যে পড়েই সোশ্যাল মিডিয়ায় তীব্র কটাক্ষ হজম করতে হয়েছিল কল্যাণকে। সেই সময় অভিষেকের ভাই আকাশ বন্দ্যোপাধ্য়ায় থেকে শুরু করে সুদীপ রাহা সহ অনেক অভিষেক ঘনিষ্ঠ যুব নেতাকেই কল্য়াণের বিরুদ্ধে পোস্ট করতে দেখা গিয়েছিল। শ্রীরামপুর নতুন সাংসদ চায় – এই লিখেও পোস্ট করা হয়েছিল।
সেই সময় কল্যাণের সঙ্গে বাকযুদ্ধে জড়িয়েছিলেন কুণাল ঘোষও। কল্যাণ তাঁর সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডেলে লিখেছিলেন, “তিনি লিখেছেন, ‘মানুষ থেকেই মানুষ আসে, বিরুদ্ধতার ভিড় বাড়ায়। আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ, তফাৎ শুধু শিরদাঁড়ায়।” তার পাল্টা আবার কুণাল লিখেছিলেন, “মনুষ্যরূপী এই মানবেরে চেনাটা কঠিন ভাই, অস্থি সমূহ স্থিত নিজস্থানে শিরদাঁড়াটাই নাই।”
তৃণমূলের অন্দরে এমন রাজনৈতিক কাদা ছোড়াছুড়ির ঘটনা নতুন কিছু নয়। তবে যে কল্যাণকে সাম্প্রতিক অতীতে আক্রমণ শানিয়েছিলেন কুণাল, এখন সেই কুণালই তৃণমূলের ‘ফেসবুক যোদ্ধা’দের নিশানায়।
আরও পড়ুন : Weather Update: চাঁদিফাটা রোদ্দুর থেকে রেহাই! দক্ষিণের কোন জেলায় কবে বৃষ্টি?