কলকাতা: গোপনাঙ্গ প্রতিস্থাপনে ভুল অস্ত্রোপচারের অভিযোগ। আর এ নিয়ে প্রতিবাদ করতেই কাঁকুড়গাছির (Kankurgachi) এক নার্সিংহোমে চিকিৎসাধীন মালদহের (Maldah) বাসিন্দা রূপান্তরকামী (Transgender) তরুণকে মারধর এবং মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠল স্বাস্থ্যকর্মীদের বিরুদ্ধে। ঘটনায় তোলপাড় চিকিৎসা মহল।
জানা গিয়েছে, সিড ঠাকুর (Sid Thakur) নামে ওই রোগী মাসখানেক আগে ফ্যালোপ্লাস্টির জন্য ভর্তি হয়েছিলেন কাঁকুড়গাছির এক বেসরকারি হাসপাতালে। সেখানেই তাঁকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করেন কয়েকজন স্বাস্থ্যকর্মী বলে অভিযোগ। মালদহের গাজোলের বাসিন্দা সিডের বাবা সঞ্জীবন ঠাকুরের অভিযোগ, গত ১৮ অগস্ট থেকে চারবার অস্ত্রোপচার করেও ট্রান্স-পুরুষের গোপনাঙ্গ ঠিক ভাবে প্রতিস্থাপিত করা যায়নি। এক মাসে পাঁচ লক্ষ টাকা খরচের পরও সন্তানের চিকিৎসা কেন ঠিক মতো হচ্ছে না এ নিয়ে প্রশ্ন করায় তাঁর সন্তানকে মারধর করা হয়। এমনকি তাঁর রূপান্তর হওয়া নিয়ে কটাক্ষ করেন স্বাস্থ্যকর্মীরাই! ঘটনার জেরে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন ওই রূপান্তরকামী যুবক। তাঁর বাবা জানিয়েছেন, সন্তানের কথা বলা প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছে এখন।
এদিকে হাসপাতালের বেডে শুয়ে সিড জানান, তাঁর হাতের কাটা জায়গায় জোর দিয়ে চাপ দেওয়া হয়। তাঁর বুকে ধাক্কা দিয়ে বলা হয় ‘মরদ হয়েছিস, মরদের মত থাক।’ তাঁকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেওয়ায় প্রবল আঘাত লাগে মাথায়। তার পর আবার কোমরে মারধর করা হয়। ওই অবস্থাতেই তাঁকে দিয়ে লিফটের দরজা বন্ধ করানো হয়। এর পর বমি হয় তাঁর। তার পর থেকে শারীরিক ও মানসিক ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। তিনি কথা বলতে পারছেন না। হাসপাতালের বেডে শুয়ে সিড হাতজোড় করে আবেদন জানান তাঁর মতো আর কোনওো রূপান্তরকামীকে এভাবে হেনস্তার শিকার হতে না হয়।
তাঁর আরও অভিযোগ, ফিজিওথেরাপির টাকা নেওয়া হলেও আয়াদের দিয়ে তাঁর সেবা করা হয়। কিন্তু তাতে তাঁর কোনও শারীরিক উন্নতি হয়নি। সিডের কথায়, ” আমি উঠে দাঁড়ালেই রক্ত, পুঁজ বেরতে থাকে। গিনিপিগের মতো এক্সপিরিমেন্ট করা হচ্ছে আমায় নিয়ে। আমার অবস্থা শোচনীয়।”
সিডের বাবার কথায়, “ডাক্তারবাবু বলে গিয়েছিলেন, আমার ছেলে যদি হাঁটতে চায় তাহলে তাকে অল্প অল্প হাঁটতে নিয়ে যেতে। কিন্তু ওরা প্রায় জোর করে টানতে টানতে নিয়ে গেল আমার ছেলেকে। আর যখন ফিরে এল, তখন ছেলে আমার সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারছে না!”
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৯ সালে প্রথম শরীরের উর্ধ্বাঙ্গের সার্জিক্যাল অপারেশন হয় সিডের। তখন তাঁর বয়স ২৩ বছর। গত ১৭ আগস্ট কাঁকুড়গাছির ওই নার্সিংহোমে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি। তিনবার তাঁর লিঙ্গ সংস্থাপন ব্যর্থ হন চিকিৎসকেরা। অবশেষে সেপ্টেম্বর মাসের শুরুতে অপারেশন সফল হয়। এর মাঝেও একাধিকবার স্বাস্থ্যকর্মীদের থেকে অপমানজনক ব্যবহার সহ্য করতে হয়েছে তাঁকে। এমনকি তাঁর ক্ষতস্থানে ইচ্ছা করে বালিশ ছুঁড়ে মারা হয়, যার ফলে ক্ষতস্থান বিষিয়ে ওঠে বলেও জানালেন সঞ্জীবন। তবে গত পরশু যে নির্যাতন হয়েছে, তা সমস্ত কিছুকে ছাপিয়ে গিয়েছে বলে দাবি সিড ও তাঁর পরিবারের।যদিও এই ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কোনও প্রতিক্রিয়া এখনও মেলেনি।
আরও পড়ুন: Unknown Fever: মালদায় ফের জ্বরের বলি মাত্র ১ মাসের শিশু!