কলকাতা: তরজা চলছেই। কিন্তু সমস্ত বিতর্কের মাঝেই ‘লক্ষ্যপূরণ’ ডায়মন্ডা হারবারের সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Abhishek Banerjee)। অন্তত তাঁর সাম্প্রতিক পোস্ট তাই বলছে। শুরুটা হয়েছিল, তাঁর ‘ব্যক্তিগত মত’ প্রকাশের মাধ্যমে। তারপরেই রাতারাতি ছবির মতো যেন বদলাতে শুরু করল ডায়মন্ড হারবার। শুধু বিতর্কের জেরে নয়, করোনা মোকাবিলায় স্বতন্ত্র পরিচয় বহন করতে সক্ষম হল অভিষেকের পরিকল্পিত ‘ডায়মন্ড হারবার’ মডেল (Diamond Harbor Model)।
সম্প্রতি, ডায়মন্ড হারবারের তৃণমূল সাংসদ ফেসবুকে একটি পোস্ট করেছেন। পোস্টে রয়েছে, কোভিড সংক্রান্ত পরীক্ষার হালহকিকত। তাতে দেখা যাচ্ছে, ডায়মন্ড হারবারে পজিটিভিটি রেট এক শতাংশেরও কম। গত ২৪ ঘণ্টায় পজিটিভিটি রেট দাঁড়িয়েছে ০.৭৯ শতাংশ। যা কার্যত রেকর্ড। শুধু তাই নয়, অভিষেক জানিয়েছিলেন, তাঁর সংসদীয় এলাকায় করোনা গ্রাফ কীভাবে নিম্নমুখী করা যায় সেদিকেই লক্ষ্য দেবেন। পজিটিভিটি রেট যাতে ১ শতাংশের নীচে নামে সেই লক্ষ্য পূরণের কথাও বলেছিলেন সাংসদ। সংশ্লিষ্ট মহল বলছে অবশেষে লক্ষ্যপূরণ করলেন অভিষেক।
আজ থেকে ঠিক ৩ সপ্তাহ আগে কী বলেছিলেন অভিষেক? পুরনির্বাচন প্রসঙ্গে মন্তব্য করতে গিয়ে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তাঁর ‘ব্যক্তিগত মত’ প্রকাশ করে জানিয়েছিলেন, বাংলার যা পরিস্থিতি তাতে আগামী কিছুদিন কোনওরকম জমায়েত, খেলা-মেলা বন্ধ রাখা উচিত। বলেছিলেন, “এখন মেলা, খেলা, ভোট সব বন্ধ রাখা উচিত। দু’মাস সব বন্ধ রাখা উচিত। মানুষ বাঁচলে আমরা বাঁচব”। এমনকী, নিজের সংসদীয় এলাকাতেও যেকোনও মিটিং-মিছিলে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন অভিষেক। ডায়মন্ড হারবারেব নমুনা পরীক্ষায় জোর দেওয়ার পাশাপাশি, ডক্টর অন হুইলস থেকে শুরু করে একাধিক পদক্ষেপের বাস্তবায়ন ও ঘটেছে। রেকর্ড নমুনা পরীক্ষার কথা ঘোষণা করে এর আগে নিজেই পোস্ট করেছিলেন অভিষেক। ফের সেইরকমই রেকর্ড সাফল্যের খতিয়ান তুলে ধরলেন তিনি।
উল্লেখ্য, অভিষেকের ‘ব্যক্তিগত মত’ প্রকাশের এক সপ্তাহের মধ্যে পুর নির্বাচন পিছিয়ে দেয় কমিশন। শুধু তাই নয়, কোভিড পরিস্থিতি মোকাবিলায় অভিষেকের মস্তিষ্কপ্রসূত ‘ডায়মন্ড হারবার’ মডেল কেবল স্বীকৃতি পায়নি এমন নয়, গোটা রাজ্যে সংক্রমণ রুখতে ওই মডেলকেই কাজে লাগানো যায় কি না তা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। পাশাপাশি, অভিষেকের এই ডায়মন্ড হারবার মডেলকে কেন্দ্র করে তাঁরই বিরুদ্ধ মুখ খোলেন দলীয় সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। স্পষ্ট জানিয়ে দেন, তিনি ভাইপো নন, তাই তিনি অমন মডেল গড়ার অনুমতি পাননি। নয়ত, তিনিও করে দেখাতেন। এমনকী, অভিষেক তৃণমূল নেত্রীর বিরোধী মন্তব্য করছেন বলেও উল্লেখ করেন কল্যাণ। শাসক দলের অন্দরেই তা নিয়ে তীব্র কোন্দল শুরু হয়।
সেই ঘা এখনও শুকোয়নি। তারইমধ্যে, নির্বাচন কমিশন পুরনির্বাচনের দিনক্ষণ পেছোতেই হাইকোর্ট ও কমিশনকে ধন্যবাদ জানিয়ে টুইট করেন অভিষেক। টুইটে এও জানান, গোটা রাজ্যের পজিটিভিটি রেট যাতে ৩ শতাংশের কম হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। পরবর্তীতে গোয়ায় সাংবাদিক সম্মেলনেও নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেন সাংসদ। তাঁর ডায়মন্ড হারবার মডেলের সাফল্যের কথাও তুলে ধরেন অভিষেক। উল্লেখ্য, গোটা বিতর্ক নিয়ে একটিবারের জন্যও মুখ খোলেননি তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের মতে, অভিষেকের ‘ব্যক্তিগত মতপ্রকাশ’ থেকে ডায়মন্ড হারবারে পজিটিভিটি রেট সর্বনিম্ন হওয়া, এই গোটা সময়ের মধ্যে ঘটে যাওয়া সমস্ত ঘটনাবলির পারম্পর্য যেন চোখে পড়ার মতো। কার্যত, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় নামক একটি ‘ব্র্যান্ড’ প্রস্তুত করার নিঃশব্দ পরিকল্পনা করেছেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অন্তত এমনটাই মনে করছেন সংশ্লিষ্ট মহলের একাংশ।