কলকাতা: সামনেই বাংলায় শিল্প সম্মেলন। তার আগেই নবান্নের শীর্ষকর্তাদের সঙ্গে বিশেষ বৈঠক আদানি গোষ্ঠীর (Adani group)। বৃহস্পতিবারই নবান্নে রাজ্যের মুখ্য সচিব হরেকৃষ্ণ দ্বিবেদীর সঙ্গে আদানি গোষ্ঠীর এক শীর্ষ আধিকারিক বৈঠক করেন বলে সূত্রের খবর। শোনা যাচ্ছে, শুক্রবার আরও একটি বৈঠক রয়েছে তাঁদের। তাজপুরে গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ নিয়েই বৈঠক হতে পারে বলে খবর নবান্ন সূত্রে। কিছুদিন আগেই নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠকে বসেন গৌতম আদানির (Goutam Adani)ছেলে তথা আদানি পোর্টের (Adani Port) চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার (CEO) করন আদানি (Karan Adani)। তাজপুরে রাজ্য সরকার যে বন্দর তৈরি করবে, তাতে বিনিয়োগে আদানিরা আগ্রহী বলে তখনই শোনা গিয়েছিল।
সূত্রের খবর, তাজপুর সমুদ্রবন্দর প্রকল্পে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের সম্ভাবনা রয়েছে। এই অবস্থায় ওই সমুদ্র বন্দর নির্মাণের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের পথে ধীরে ধীরে পদক্ষেপ করছে সরকার। তবে আদানি গোষ্ঠীর সঙ্গে হাত মিলিয়েই যৌথভাবে এই বন্দর নির্মাণে আগ্রহী রাজ্য সরকার এমনটাই খবর সূত্রের। এই নিয়ে বৃহস্পতিবার প্রশাসনিক শীর্ষ স্তরে বৈঠক হয়েছে। শুক্রবার আরও একটি বৈঠক হওয়ার সম্ভাবনা। যদিও, এ নিয়ে কোনও পক্ষই সরাসরি মুখ খুলতে চাননি।
রাজ্য সরকার আগেই খোলাখুলি জানিয়েছিল, তাজপুরে বন্দর পরিকাঠামো গড়তে হাতেই রয়েছে প্রায় এক হাজার একর জমি। যে এলাকায় প্রকল্পটি তৈরি হবে সেখানে যোগাযোগেরও সেভাবে কোনও সমস্যা নেই। সেদিক থেকে ইতিবাচক অবস্থানেই ছিল রাজ্য। প্রকল্পের নির্মাতা সংস্থার নির্বাচন চূড়ান্ত হলেই দ্রুত এগোবে কাজ।
তাজপুরে তৈরি হবে গভীর সমুদ্র বন্দর। আর সেই নির্মাণের জন্য দরপত্র চেয়ে পশ্চিমবঙ্গ শিল্পোন্নয়ন নিগম আগেই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। ইতিমধ্যেই যেখানে গভীর সমুদ্রবন্দর তৈরি হবে সেই জায়গা পরিদর্শন করে গিয়েছেন আদানি শিল্পগোষ্ঠীর কর্মকর্তারা। গত বছরের শেষে নবান্নে মমতার সঙ্গে দেখা করেছিলেন খোদ গৌতম আদানি। তারপরই এই বিনিয়োগ নিয়ে জল্পনা বাড়ে।
জানা গিয়েছে, রাজ্য সরকার দরপত্র চাওয়ার পর এই প্রকল্পে আগ্রহ দেখায় ১০ টি সংস্থা। সেগুলির মধ্যে থেকে চারটি সংস্থাকে বেছে নিয়েছে রাজ্য সরকার। তার মধ্যে আদানি ছাড়াও বিদেশি সংস্থাও রয়েছে। চারটি সংস্থাই তাজপুর এলাকা পরিদর্শন করে গিয়েছে। চলতি মাসের ১৫ তারিখে দরপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন ছিল। সেই দিন পেরিয়ে যাওয়ার পরেই আদানি গোষ্ঠীর উচ্চ আধিকারিকের সঙ্গে বৈঠকে বসলেন নবান্নের শীর্ষ কর্তারা। অনুমান করা হচ্ছে, আদানিরাই ওই বন্দর তৈরির দায়িত্ব পেতে পারেন। তবে নবান্নের তরফে এ বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি। শুক্রবারের বৈঠকের পর এ বিষয়ে একটি রফাসূত্র বেরিয়ে আসতে পারে বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্ট মহলের একাংশ।
এই প্রকল্পে প্রত্যক্ষ ভাবে ১০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে বলেই দাবি সরকারের। এক হাজার একর জমির ওপর তৈরি হবে এই সমুদ্র বন্দর। প্রথম পর্যায়ে ছ’টি বার্থ ও পরের পর্যায়ে আরও ন’টি বার্থ তৈরি হবে এই বন্দরে।
সরকারি সূত্রের দাবি, পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও ত্রিপুরা, অসম, মিজোরাম-সহ একাধিক রাজ্যে বাণিজ্যের মূল প্রবেশদ্বার হয়ে উঠবে এই তাজপুর বন্দর। পলি পড়ে যাওয়ার কারণে হলদিয়া বন্দরে বড় জাহাজ ঢুকতে পারছে না। তাই মাঝ সমুদ্রে গিয়ে ‘শিপ টু শিপ’ লোডিং করতে হচ্ছে, তার ফলে খরচও বাড়ছে। কিন্তু গভীর সমুদ্র বন্দর তৈরি হলে তাজপুরে সরাসরি বড় জাহাজ ঢুকে যাবে বলে দাবি করা হয়েছে।
গত বছরের ২ ডিসেম্বর নবান্নে এসেছিলেন গৌতম আদানি। বন্দরে লগ্নি করার ক্ষেত্রে তখনই আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন তিনি। সেই সময়, রাজ্যে শিল্পের পরিবেশ কতটা সুগম, সে তথ্য আদানির সামনে তুলে ধরেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পরে টুইটে আদানি জানিয়েছিলেন, বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনে উপস্থিত থাকার পরিকল্পনা রয়েছে তাঁর। কোথায় বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে, পশ্চিমবঙ্গে বিনিয়োগের সুযোগ কেমন, সেই বিষয়েও মমতার সঙ্গে আলোচনা হয় তাঁর।
আরও পড়ুন: ‘এত ভালবাসা পাচ্ছি কারণ…’, সপা-কংগ্রেসের ‘পেট ব্যাথা’র কারণ জানালেন নমো
কোন