কলকাতা: ভোটের (Bhabanipur By Election) বাক্সে জনতা ঢেলে দিয়েছে তৃণমূল নেত্রীকে। এ যাত্রায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) সুরক্ষিত করতে পেরেছেন তাঁর মুখ্যমন্ত্রী আসনটিও। তিনবারের তৃণমূল সরকারে তিনবারই মুখ্যমন্ত্রী তিনি। নিঃসন্দেহে তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকদের জন্য এটা একটা নির্ভেজাল আনন্দের মুহূর্ত। উৎসব-হইচই চলতেই পারে। তা বলে কুকথার ফুলঝুরিও ছুটবে? এটা কি মেনে নেওয়া যায়। কথায় বলে যে কোনও জয়ই মানুষকে নত হতে শেখায়, আরও উদার হতে শেখায়। শিরদাঁড়া সোজা রেখে এগিয়ে যেতে শেখায়। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জয়ের পর বিরোধী শিবিরের দিকে তাক করে দলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষের টুইট বা বীরভূম তৃণমূল জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের বাক্যবাণ মোটেই সে কথায় সিলমোহর দিচ্ছে না।
ভবানীপুর উপনির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ২০১১ সালে তিনি যখন ভবানীপুর থেকে জিতেছিলেন, তখনও তাঁর ঝুলিতে এত মার্জিন ছিল না। এই জয়ের আনন্দ প্রকাশ করতে গিয়ে তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ টুইট করলেন, ‘ভবানীপুরে এত ঘেউ ঘেউ করার পর এখন বিজেপির দরজায় বাঁধা বুল ডগটা কী বলছে? এ থেকে যত না লাভ ছিল, BJP তে থাকলে আমাদের লক্ষ্মীলাভ। ও যত মুখ দেখাবে, কুৎসা করবে, মানুষ তত তৃণমূলকে ভোট দেবেন। বেইমান সুবিধাবাদী বুল ডগটাকে পোষার জন্য বিজেপিকে ধন্যবাদ।’
কুণাল ঘোষ এই টুইটে কারও নাম করেননি ঠিকই। তবে তাঁর নিশানায় যে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়া কোনও নেতা রয়েছেন, সে কথা স্পষ্ট। একই সঙ্গে এটাও পরিষ্কার, কুণালের তির যাঁর দিকে গিয়েছে, তিনি বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর বেশ ভালই দায়িত্ব পেয়েছেন। ভবানীপুর উপনির্বাচনে বিজেপি প্রার্থী প্রিয়াঙ্কা টিবরেওয়ালের হয়ে প্রচারও করেছেন। যা যথেষ্ট ‘রাগের’ও কারণ হয়েছেন কুণাল ঘোষদের। কিন্তু তা যতই রাগ বা বিরক্তির কারণ হোক না কেন, একজন শাসকদলের মুখপাত্রের এমন বক্তব্য সত্যিই কাম্য নয় বলেই বলছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
অন্যদিকে বীরভূম তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। ‘দিদি’র জয়ের খবর আসতেই সাংবাদিক সম্মেলন করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্নেহভাজন ‘কেষ্ট’। সেখানেই অনুব্রত মণ্ডল বলেন, “ভবানীপুরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জিতবেন না তো অন্য কেউ জিতবেন? বিজেপি একটা ছাগল-বিড়ালের দল। এখানে বলাবলির কিছু নেই। আমি বলেছিলাম ৬০ থেকে ৭০ হাজার ভোটে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জিতবেন। বিজেপিকে জিজ্ঞেস করা উচিত, তারা কী করবে! তারা ঘরে ঢুকে বসে থাকবে, না ছাগলের মতো ঘুরে বেড়াবে।”
এরই সঙ্গে অনুব্রতর সংযোজন, “লোকে দেখেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কী করেছে আর বিজেপি কী করেছে! একটা ছাগল-বিড়ালের দলের সঙ্গে কি দিদির তুলনা হয়! নন্দীগ্রামে কেস চলছে। সেখানে আবার গণনা হলে দেখা যাবে সেখানেও মমতা ৫০ থেকে ৬০ হাজার ভোটে জিতবেন। এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা।” অনুব্রতর এই বক্তব্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি তাঁর নির্ভেজাল বিশ্বাস যেমন প্রতিফলিত, একই সঙ্গে অনুব্রত এটাও বুঝিয়ে দিয়েছেন তাঁর কাছে বিজেপি ‘ছাগল বিড়ালের দল’।
ভবানীপুরে এত ঘেউ ঘেউ করার পর এখন বিজেপির দরজায় বাঁধা বুল ডগটা কী বলছে?
ও @AITCofficial এ থেকে যত না লাভ ছিল, BJP তে থাকলে আমাদের লক্ষ্মীলাভ।
ও যত মুখ দেখাবে, কুৎসা করবে, মানুষ তত তৃণমূলকে ভোট দেবেন।
বেইমান সুবিধাবাদী বুল ডগটাকে পোষার জন্য বিজেপিকে ধন্যবাদ।— Kunal Ghosh (@KunalGhoshAgain) October 3, 2021
রাজনৈতিক মহলেই প্রশ্ন উঠছে, একটা নির্বাচন ঘিরে কিংবা ভোটের ফল প্রকাশ হলেই কেন রাজনৈতিক দলের সদস্যদের মুখ এ ভাবে আগলহীন হয়ে পড়ে? তৃণমূল, বিজেপি, বাম কিংবা যে কোনও দল নির্বিশেষে এই নমুনা অতীতেও বহুবার দেখা গিয়েছে। প্রশ্ন এখানেই! রাজনীতি কি শুধু ‘খেয়োখেয়ি’র লড়াই? সেখানে কি সংযম, সৌজন্য একেবারেই থাকতে নেই?