যে তিন পথে মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে বাংলায় ধরে রাখতে পারেন মমতা

সোমবার খাতায় কলমে মুখ্যসচিব হিসাবে আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Alapan Bandyopadhyay) কাজের শেষদিন। কিন্তু ইতিমধ্যেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যসচিব হিসাবে তাঁর কাজের মেয়াদ তিন মাস বাড়ানোর অনুমতি নিয়ে রেখেছেন কেন্দ্রের কাছ থেকে।

যে তিন পথে মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে বাংলায় ধরে রাখতে পারেন মমতা
নিজস্ব চিত্র
Follow Us:
| Updated on: May 30, 2021 | 10:35 PM

কলকাতা: রবিবারও জট কাটল না আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Alapan Bandyopadhyay) পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে। সোমবার বাংলাতেই থেকে যাবেন আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়, নাকি দিল্লি যাবেন তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে শোনা যাচ্ছে, বিভাগীয় সচিবদের নিয়ে সোমবার নবান্নে বৈঠক করবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ইয়াস পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে এই বৈঠক হবে। সূত্রের খবর, সেই বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ও। যার কি না সোমবারই আবার সকাল ১০টার মধ্যে দিল্লির নর্থ ব্লকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রকের দফতরের কাজে যোগ দেওয়ার কথা। কেন্দ্রের তরফে পাঠানো হয়েছে চিঠিও।

আরও পড়ুন: রবিবার বিকেলে হঠাৎই নবান্নে সস্ত্রীক আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়

ইতিমধ্যেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা বলে তোপ দেগেছেন। সূত্রের খবর, তিনি দিল্লিতে চিঠিও পাঠিয়েছেন, আলাপনকে রাজ্যে চেয়ে। তবে কেন্দ্রের তরফেও কোনও নির্দেশ প্রত্যাহারের কথা জানানো হয়নি। আবার রাজ্যও মুখ্যসচিবের পদ থেকে আলাপনবাবুকে ‘রিলিজ অর্ডার’ দেয়নি। যা ছাড়া কেন্দ্রীয় ক্যাডারে যোগ দেওয়া যায় না বলেই মত প্রাক্তন আমলাদের। ফলে জটিলতা বহাল।

সোমবার খাতায় কলমে মুখ্যসচিব হিসাবে আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাজের শেষদিন। কিন্তু ইতিমধ্যেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যসচিব হিসাবে তাঁর কাজের মেয়াদ তিন মাস বাড়ানোর অনুমতি নিয়ে রেখেছেন কেন্দ্রের কাছ থেকে। এবার আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় যদি দিল্লি চলে যান, সে ক্ষেত্রে মুখ্যসচিব হিসাবে তাঁর মেয়াদ বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত বাতিল হয়ে যাবে।

জট খুলতে পারে যে তিন পথে-

১. সেন্ট্রাল অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রাইব্যুনাল বা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হতে পারেন মুখ্যসচিব।

২. নর্থ ব্লক-নবান্নের বোঝাপড়ায় মিটতে পারে সমস্যা।

৩. আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে জানাতে পারেন অবসরের পর তিনি আর মেয়াদ বৃদ্ধি চান না।

আইনজ্ঞমহলের মতে, রাজ্য সরকার আদালতে গেলে যুক্তি হতে পারে, আলাপনের মুখ্যসচিব পদে মেয়াদ বৃদ্ধির পরই তাঁকে দিল্লি যাওয়ার কথা বলা হয়েছে। মেয়াদ বৃদ্ধির নির্দেশও সই হয়ে এসেছে দিল্লি থেকেই। অর্থাৎ দুই নির্দেশের মধ্যে সামঞ্জস্য কোথায়? মুখ্যসচিবও প্রশ্ন তুলতে পারেন, দিল্লি গেলে তাঁর পদ কী হবে তা নিয়ে কেন্দ্রের চিঠিতে কিছু লেখা নেই। মুখ্যসচিবকে কেন্দ্রীয় ক্যাডারে বদলির নির্দেশের আগে নর্থ ব্লক রাজ্যের সঙ্গে কথাও বলেনি।

আইন কী বলে-

১৯৫৪ সালের আইএএস ক্যাডার রুল মোতাবেক (৬ (১) ধারা) অফিসারদের নিয়ে কেন্দ্র-রাজ্যের মধ্যে মতভেদ থাকলে, কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত গুরুত্ব পাবে।

প্রাক্তন আমলারা বলছেন-

রাজ্যের সম্মতি ছাড়া কোনও অফিসার কেন্দ্রীয় ডেপুটেশনে যেতে পারেন না। এ ক্ষেত্রে দুই সরকারকে আলোচনা করতে হবে, এটাই রেওয়াজ।

অতীত বলছে-

গত বছর ডিসেম্বরে বাংলায় জেপি নাড্ডার কনভয়ের উপর হামলার ঘটনায় তিন আইপিএস অফিসারকে ডেপুটেশনে ডেকে পাঠিয়েছিল কেন্দ্র। তবে তাঁদের রাজ্য ছাড়তে চায়নি। পরে বিষয়টি অবশ্য ঠান্ডা ঘরে চলে যায়। আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্ষেত্রে কী হবে তার জন্য সোমবার অবধি অপেক্ষা ছাড়া আর কোনও পথ এই মুহূর্তে দেখা যাচ্ছে না।