Mahalaya 2024 Special: ৪৮ বছরের কেরিয়ার, বেতার জগতের একা কুম্ভ ‘রেডিয়ো কাকু’!

Oct 02, 2024 | 12:30 AM

Mahalaya 2024 Special: সারা বছর যে রেডিয়োর মুখ দেখেন না, বছরের এই একটা সময় সেই বা আপনাকে পাত্তা দেবে কেন? আর এইখানে খানিকটা বিশ্বকর্মার মতোই আবির্ভাব ঘটে কুমোরটুলির 'রেডিও কাকু'র।

Follow Us

বাইরে তখনও আলো ফোটেনি। ভোর রাত সবে। পাখিদের ডাক শুরু হয়নি। হালকা ঠান্ডা ঠান্ডা আমেজ। ছাদে এলে ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে শিউলি ফুলের গন্ধ। ঘড়ির কাঁটা বলছে ভোর চারটে। সচরাচর এই সময়ে ঘুম ভাঙে না শহরের। তবে কিছুক্ষণ আগেই নিদ্রা ছেড়ে উঠে পড়ছেন কুমোরটুলির ‘রেডিয়ো কাকু’ ওরফে অমিতরঞ্জন কর্মকার। ঘড়ি কাঁটায় চারটে বাজতেই টুক করে অন করে দিলেন রেডিয়োর চাকাটা। সঙ্গে সঙ্গে বেতারের তরঙ্গ বেয়ে জলদগম্ভীর কণ্ঠে ভেসে এল ‘আশ্বিনের শারদ প্রাতে বেজে উঠেছে আলোকমঞ্জির/ ধরণীর বহিরাকাশে অন্তরিত মেঘমালা/ প্রকৃতির অন্তরাকাশে জাগরিত জ্যোতির্ময়ী জগতমাতার আগমন বার্তা।’ এই প্রথম নয়, গত ৪৬-৪৭ বছর ধরে মহালয়ার ভোরে এটাই রুটিন অমিতবাবুর।

এবার হয়তো আপনারা বলবেন এ আর এমন কি ব্যাপার! মহালয়ার ভোরে রেডিয়োয় মহিষাসুরমর্দিনী শোনার অভ্যেস শুধু ওনার একার তো নয়! এই দিন প্রায় সব বাড়ি থেকেই ভোরবেলা ভেসে আসে এই একই সুর।

তবে বিষয়টা কিন্তু মোটে অত সোজা নয়। এখন ডিজিটাল ইন্ডিয়ার যুগ। সবার পকেটে আর কিছু থাক না থাক একটা স্মার্ট ফোন রয়েছেই। সেখানে চাইলে মোবাইল, ল্যাপটপ থেকে রেডিয়ো সব যন্ত্রের কাজই করা যায় নিমেষে। তবু মহালয়ার সকালে মহিষাসুরমর্দিনী শুনতে হলে ভরসা সেই মা-ঠাকুমার আমলের ভাঙা রেডিয়োটাই। আসলে রেডিয়োর খসখসে স্পিকার থেকে শব্দ না বেরোলে যেন মহালয়া বলে মনেই হয় না। তবে সারা বছর যে রেডিয়োর মুখ দেখেন না, বছরের এই একটা সময় সেই বা আপনাকে পাত্তা দেবে কেন? আর এইখানে খানিকটা বিশ্বকর্মার মতোই আবির্ভাব ঘটে কুমোরটুলির ‘রেডিয়ো কাকু’র। যত পুরনো রেডিয়ো হোক না কেন আর তার যত জটিল রোগই থাকুক না কেন, ‘রেডিয়ো কাকু’র হাতের যাদুতে বেজে ওঠে তারা সকলেই।

পাঁচ দশক ধরে রেডিয়ো মেরামতি করেই জীবন কাটে অমিতবাবুর। অবশ্য লোকজনের কাছে তাঁর পরিচয় ‘রেডিয়ো কাকু’ বা ‘রেডিয়ো দাদু’ হিসাবেই। ১৯৭৬ সালের নভেম্বর মাসে হাতে খড়ি এই পেশায়। একটা সময় তিনি ছাড়াও বহু মানুষ এই পেশার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। কিন্তু সময়ের সঙ্গে চাহিদা কমেছে রেডিয়োর। তার সঙ্গে এই পেশা ছেড়ে অনান্য পেশাকে বেছে নিয়েছেন বাকিরাও। সিদ্ধার্থশঙ্কর রায় থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, রাজ্যেও মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে পালাবদল হয়ে গিয়েছে চার বার। তবু বদল হয়নি অমিতরঞ্জন কর্মকারের পেশার।

কুমোরটুলিতে ‘রেডিও কাকু’র ছোট্ট দোকান

একটা সময়ে মানুষের নিয়মিত রেডিয়ো শোনার অভ্যেস ছিল। আকাশবাণীতে খবর শোনা, খেলার কমেন্ট্রি শোনা বা মহালয়া শোনা, সারা বছর ভরসা রেডিয়ো। আর তাই কাজের চাপের মধ্যে থাকতেন ‘রেডিয়ো কাকু’। টিভি৯ বাংলা ডিজিটালকে অমিতবাবু বলেন, “সেই সময়টা ছিল রেডিয়োর স্বর্ণ যুগ। তখন কাজের চাপও ছিল অনেক বেশি। তবে ২০০০ সালের পর থেকে সেই বাজার নষ্ট হয়ে গিয়েছে।”

পরের দিকে রেডিয়োর কাজ কমে গেলে সংসার চালানো কষ্টকর হয়ে উঠেছিল। তবু রেডিও বন্ধ হয়নি। অমিতবাবুর বলেন, “এফএমটা ছিল। রূপঙ্কর, জোজো, অঞ্জন দত্ত, লোপামুদ্রা, নচিকেতা দা, শিলাজিত দা এরা যে এফএমটা চালু রেখেছিল তাই রেডিয়োটা ছিল। কিন্তু ২০১০ সালের পরে কাজ আরও কমে যায়।”

প্রায় ৪৮ বছর ধরে রেডিয়ো নিয়ে ঘর সংসার অমিতবাবুর। রেডিয়োর শৈশব, রেডিয়োর যৌবন এবং রেডিয়োর বার্ধক্যের সাক্ষী তিনি। এখনকার মতোই তখনও মহালয়ার আগে তাঁর দোকানে ভিড় জমাতো ক্রেতারা। অমিতবাবু জানান, ১৯৮১ সালের মহালয়া তাঁর কাছে সেরা। যখন এক আনা খরচ করলে সিনেমা দেখতে যাওয়া যেত, তখন তিনি রেডিয়ো সারিয়ে একদিনে ৭৩০টাকা রোজগার করেছিলেন।

‘রেডিয়ো কাকু’র নিজের সংগ্রহেও আছে দারুণ দারুণ সব অ্যান্টিক রেডিয়ো। ১৯২১ সালে মার্কনি রেডিয়ো, ১৯৪৪ সালের ফিলিপসের রেডিয়ো সহ আছে আরও অনেক দামি দামি রেডিয়ো। অমিতবাবু বলেন, “এই সব রেডিয়ো কিন্তু চালু। শীতকালে বার করি। এখন বর্ষা বলে বাইরে আনি না। আমার কাছে আরও অনেক দামি রেডিয়ো আছে। সবাই বলে বেচে দাও। করবো না!”

এখনও মহালয়ার চার-পাঁচ দিন আগে থেকে তাঁর দোকানে একইভাবে ভিড় জমান ক্রেতারা। খাটের তলায় অযত্নে ধুলো পড়ে যাওয়া রেডিয়ো নিয়ে এসে তাঁর কাছে আবদার, ‘মহালয়ার আগে যেভাবেই হোক সারিয়ে দিতেই হবে রেডিয়ো’। অমিতবাবুও সাধ্যমত চেষ্টা করেন তা ঠিক করে দেওয়ার। ২০২২ সালে একদিনে ৩৮টি রেডিয়ো সারিয়েছিলেন তিনি। ২০২৩ সালে নিজেই নিজের রেকর্ড ভেঙে একদিনে ৪২ টি রেডিয়ো মেরামতি করেছিলেন ‘রেডিয়ো কাকু’। এই বছর মোট কটা রেডিয়ো মেরামতি করবেন এখনও জানা নেই। তবে অমিতবাবু বলেন, “গত বছরের রেকর্ড ভাঙতে প্রস্তুত। লোকে ধুলো ভর্তি, আরশোলা, ইঁদুর সমেত রেডিয়ো নিয়ে আসে। আমি সব ঠিক করে দিই।”

তবে ৪৮ বছরের কেরিয়ারে ‘রেডিয়ো কাকু’র সবচেয়ে বড় রেকর্ড, তাঁকে কেউ আঙুল তুলে বলতে পারেননি ‘তোমায় রেডিয়ো দিয়ে মহালয়া শুনতে পারিনি আমি’।

বাইরে তখনও আলো ফোটেনি। ভোর রাত সবে। পাখিদের ডাক শুরু হয়নি। হালকা ঠান্ডা ঠান্ডা আমেজ। ছাদে এলে ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে শিউলি ফুলের গন্ধ। ঘড়ির কাঁটা বলছে ভোর চারটে। সচরাচর এই সময়ে ঘুম ভাঙে না শহরের। তবে কিছুক্ষণ আগেই নিদ্রা ছেড়ে উঠে পড়ছেন কুমোরটুলির ‘রেডিয়ো কাকু’ ওরফে অমিতরঞ্জন কর্মকার। ঘড়ি কাঁটায় চারটে বাজতেই টুক করে অন করে দিলেন রেডিয়োর চাকাটা। সঙ্গে সঙ্গে বেতারের তরঙ্গ বেয়ে জলদগম্ভীর কণ্ঠে ভেসে এল ‘আশ্বিনের শারদ প্রাতে বেজে উঠেছে আলোকমঞ্জির/ ধরণীর বহিরাকাশে অন্তরিত মেঘমালা/ প্রকৃতির অন্তরাকাশে জাগরিত জ্যোতির্ময়ী জগতমাতার আগমন বার্তা।’ এই প্রথম নয়, গত ৪৬-৪৭ বছর ধরে মহালয়ার ভোরে এটাই রুটিন অমিতবাবুর।

এবার হয়তো আপনারা বলবেন এ আর এমন কি ব্যাপার! মহালয়ার ভোরে রেডিয়োয় মহিষাসুরমর্দিনী শোনার অভ্যেস শুধু ওনার একার তো নয়! এই দিন প্রায় সব বাড়ি থেকেই ভোরবেলা ভেসে আসে এই একই সুর।

তবে বিষয়টা কিন্তু মোটে অত সোজা নয়। এখন ডিজিটাল ইন্ডিয়ার যুগ। সবার পকেটে আর কিছু থাক না থাক একটা স্মার্ট ফোন রয়েছেই। সেখানে চাইলে মোবাইল, ল্যাপটপ থেকে রেডিয়ো সব যন্ত্রের কাজই করা যায় নিমেষে। তবু মহালয়ার সকালে মহিষাসুরমর্দিনী শুনতে হলে ভরসা সেই মা-ঠাকুমার আমলের ভাঙা রেডিয়োটাই। আসলে রেডিয়োর খসখসে স্পিকার থেকে শব্দ না বেরোলে যেন মহালয়া বলে মনেই হয় না। তবে সারা বছর যে রেডিয়োর মুখ দেখেন না, বছরের এই একটা সময় সেই বা আপনাকে পাত্তা দেবে কেন? আর এইখানে খানিকটা বিশ্বকর্মার মতোই আবির্ভাব ঘটে কুমোরটুলির ‘রেডিয়ো কাকু’র। যত পুরনো রেডিয়ো হোক না কেন আর তার যত জটিল রোগই থাকুক না কেন, ‘রেডিয়ো কাকু’র হাতের যাদুতে বেজে ওঠে তারা সকলেই।

পাঁচ দশক ধরে রেডিয়ো মেরামতি করেই জীবন কাটে অমিতবাবুর। অবশ্য লোকজনের কাছে তাঁর পরিচয় ‘রেডিয়ো কাকু’ বা ‘রেডিয়ো দাদু’ হিসাবেই। ১৯৭৬ সালের নভেম্বর মাসে হাতে খড়ি এই পেশায়। একটা সময় তিনি ছাড়াও বহু মানুষ এই পেশার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। কিন্তু সময়ের সঙ্গে চাহিদা কমেছে রেডিয়োর। তার সঙ্গে এই পেশা ছেড়ে অনান্য পেশাকে বেছে নিয়েছেন বাকিরাও। সিদ্ধার্থশঙ্কর রায় থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, রাজ্যেও মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে পালাবদল হয়ে গিয়েছে চার বার। তবু বদল হয়নি অমিতরঞ্জন কর্মকারের পেশার।

কুমোরটুলিতে ‘রেডিও কাকু’র ছোট্ট দোকান

একটা সময়ে মানুষের নিয়মিত রেডিয়ো শোনার অভ্যেস ছিল। আকাশবাণীতে খবর শোনা, খেলার কমেন্ট্রি শোনা বা মহালয়া শোনা, সারা বছর ভরসা রেডিয়ো। আর তাই কাজের চাপের মধ্যে থাকতেন ‘রেডিয়ো কাকু’। টিভি৯ বাংলা ডিজিটালকে অমিতবাবু বলেন, “সেই সময়টা ছিল রেডিয়োর স্বর্ণ যুগ। তখন কাজের চাপও ছিল অনেক বেশি। তবে ২০০০ সালের পর থেকে সেই বাজার নষ্ট হয়ে গিয়েছে।”

পরের দিকে রেডিয়োর কাজ কমে গেলে সংসার চালানো কষ্টকর হয়ে উঠেছিল। তবু রেডিও বন্ধ হয়নি। অমিতবাবুর বলেন, “এফএমটা ছিল। রূপঙ্কর, জোজো, অঞ্জন দত্ত, লোপামুদ্রা, নচিকেতা দা, শিলাজিত দা এরা যে এফএমটা চালু রেখেছিল তাই রেডিয়োটা ছিল। কিন্তু ২০১০ সালের পরে কাজ আরও কমে যায়।”

প্রায় ৪৮ বছর ধরে রেডিয়ো নিয়ে ঘর সংসার অমিতবাবুর। রেডিয়োর শৈশব, রেডিয়োর যৌবন এবং রেডিয়োর বার্ধক্যের সাক্ষী তিনি। এখনকার মতোই তখনও মহালয়ার আগে তাঁর দোকানে ভিড় জমাতো ক্রেতারা। অমিতবাবু জানান, ১৯৮১ সালের মহালয়া তাঁর কাছে সেরা। যখন এক আনা খরচ করলে সিনেমা দেখতে যাওয়া যেত, তখন তিনি রেডিয়ো সারিয়ে একদিনে ৭৩০টাকা রোজগার করেছিলেন।

‘রেডিয়ো কাকু’র নিজের সংগ্রহেও আছে দারুণ দারুণ সব অ্যান্টিক রেডিয়ো। ১৯২১ সালে মার্কনি রেডিয়ো, ১৯৪৪ সালের ফিলিপসের রেডিয়ো সহ আছে আরও অনেক দামি দামি রেডিয়ো। অমিতবাবু বলেন, “এই সব রেডিয়ো কিন্তু চালু। শীতকালে বার করি। এখন বর্ষা বলে বাইরে আনি না। আমার কাছে আরও অনেক দামি রেডিয়ো আছে। সবাই বলে বেচে দাও। করবো না!”

এখনও মহালয়ার চার-পাঁচ দিন আগে থেকে তাঁর দোকানে একইভাবে ভিড় জমান ক্রেতারা। খাটের তলায় অযত্নে ধুলো পড়ে যাওয়া রেডিয়ো নিয়ে এসে তাঁর কাছে আবদার, ‘মহালয়ার আগে যেভাবেই হোক সারিয়ে দিতেই হবে রেডিয়ো’। অমিতবাবুও সাধ্যমত চেষ্টা করেন তা ঠিক করে দেওয়ার। ২০২২ সালে একদিনে ৩৮টি রেডিয়ো সারিয়েছিলেন তিনি। ২০২৩ সালে নিজেই নিজের রেকর্ড ভেঙে একদিনে ৪২ টি রেডিয়ো মেরামতি করেছিলেন ‘রেডিয়ো কাকু’। এই বছর মোট কটা রেডিয়ো মেরামতি করবেন এখনও জানা নেই। তবে অমিতবাবু বলেন, “গত বছরের রেকর্ড ভাঙতে প্রস্তুত। লোকে ধুলো ভর্তি, আরশোলা, ইঁদুর সমেত রেডিয়ো নিয়ে আসে। আমি সব ঠিক করে দিই।”

তবে ৪৮ বছরের কেরিয়ারে ‘রেডিয়ো কাকু’র সবচেয়ে বড় রেকর্ড, তাঁকে কেউ আঙুল তুলে বলতে পারেননি ‘তোমায় রেডিয়ো দিয়ে মহালয়া শুনতে পারিনি আমি’।

Next Video