কলকাতা: মাত্র আট মাসের বৈবাহিক জীবন। এখনও সংসারযাপনও সেভাবে করে উঠতে পারেননি। শহরে মৃত্যু ডেঙ্গিতে আক্রান্ত আরও এক গৃহবধূর। মৃতের নাম প্রিয়া রায় (২৮)। জ্বর নিয়ে গত রবিবার থেকে এম আর বাঙুর হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন ওই গৃহবধূ। মঙ্গলবার সকালে হাসপাতালে মৃত্যু হয় তাঁর। প্রিয়ার বাড়ি টলিগঞ্জের খানপুর রোডে। টলিগঞ্জের বাসিন্দা রাহুল সিংয়ের সঙ্গে গত ফেব্রুয়ারিতেই বিয়ে হয় নেতাজি নগরের এলাকার খানপুরের ১৬ নম্বর বস্তির প্রিয়ার। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার দুপুরে জ্বর আসে। স্থানীয় একজন চিকিৎসকের পরামর্শে প্রিয়াকে এম আর বাঙ্গুর হাসপাতালে সেদিনই ভর্তি করা হয়। মঙ্গলবার সকালেই প্রিয়ার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে এবং মৃত্যু। কিছুদিন আগেই সাত দিনের সন্তানকে রেখে মৃত্যু হয় ডেঙ্গি আক্রান্ত কোন্ননগরের এক শিক্ষিকার। একের পর এক অকাল মৃত্যুতে আজ স্তব্ধ বাংলা।
শক সিনড্রোম, হ্যামারেজিক ফিভারকে ছাপিয়ে বাংলায় এ বছর উদ্বেগের কারণ ডেঙ্গি এক্সপ্যান্ডেড সিনড্রোম।চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, আগে যেখানে প্লেটলেট ম্যানেজমেন্ট ই ছিল আসল। এখন একাধিক অঙ্গ কাবু হয়ে পড়ছে ডেঙ্গিতে। হার্ট, কিডনি, মস্তিষ্ক, লিভার, প্যানক্রিয়াস— একাধিক অঙ্গ জখম হচ্ছে ডেঙ্গিতে। ডেঙ্গির এই রূপ আগে ছিল না বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। রাজ্যে এক দশকের বেশি সময় ধরে ভাইরাসের উপস্থিতির পর ভাইরাসের মিউটেশন স্বাভাবিক। তেমন কিছু ঘটেছে কি না এ নিয়ে গবেষণা জরুরি বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা।
মৃত্যুও বাড়ছে ডেঙ্গিতে। পরিস্থিতির মোকাবিলা কীভাবে হবে তা ঠিক করতে আজ সকাল এগারোটায় ডেঙ্গি নিয়ে নবান্নে সোমবারই বৈঠক করেন মুখ্যসচিব-স্বাস্থ্যসচিব। জেলাশাসকদের নিয়ে বৈঠকে জনপ্রতিনিধিদের সচেতন থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। সক্রিয় হতে বলা হয়েছে পুলিশ প্রশাসনকেও।
কলকাতা-সহ গোটা রাজ্যেই ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা রোজ বাড়ছে।
জেলা দিয়ে শহর ঘেরার কাজ অব্যাহত রেখেছে এডিস ইজিপ্টাই। আর তারই জেরে পুজোর আগে ভয়াবহ আকার নিচ্ছে ডেঙ্গি। রাজ্যের সাত জেলা এখন ডেঙ্গি হটস্পট হিসাবে চিহ্নিত। উত্তর ২৪ পরগনা, নদিয়া, মুর্শিদাবাদ, কলকাতা, হুগলি, হাওড়া, মালদহ। গত এক সপ্তাহে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে সাড়ে ছ হাজার। কোভিড পরবর্তী সময়ে এ বছর ই ডেঙ্গির প্রকোপ সবচেয়ে বেশি বলে মনে করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।