
কলকাতা: বিশ্ববিদ্যালয় কখনও বিতর্কের কেন্দ্র হতে পারে না। বৃহস্পতিবার কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী উপাচার্য হিসাবে দায়িত্বগ্রহণ করলেন আশুতোষ ঘোষ। সোমবার তিনি দেখা করেছিলেন আচার্য তথা রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের সঙ্গে। আর এদিন দীর্ঘ টালবাহানা পেরিয়ে অবশেষে শহরের অন্যতম শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব নিলেন তিনি। বার্তা দিলেন বিতর্ক থেকে দূরে থেকে আসল কাজে মন দেওয়ার। বার্তা দিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের খোলনলচেও বদলে দেওয়ার।
উপাচার্য আশুতোষ ঘোষের কথায়, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে একাধিক শূন্যপদ রয়েছে। শিক্ষক, ক্লার্ক, অফিসার পদ দীর্ঘদিন ফাঁকা পড়ে রয়েছে। সেগুলিকে কীভাবে পূরণ করা যায় সেটা দেখতে হবে। একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের পোস্টই যদি ফাঁকা পড়ে থাকে, তা হলে সেই সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি উৎকর্ষ হবেই বা কী করে? তাই এই শূন্যপদ পূরণে যা যা করার দরকার সবটাই করব। এছাড়াও পড়ুয়াদের জন্য চাকরিকে সুনিশ্চিত করতে হবে। প্লেসমেন্ট সেল খুলতে হবে।’
একাংশের মতে, সাম্প্রতিক বছরে পড়েছে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান। সে NIRF র্যাঙ্কিংই হোক বা ছাত্রভর্তি, প্রতিটি ক্ষেত্রেই ‘পিছিয়ে পড়েছে’ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। আর এই অভিযোগ অস্বীকার করছেন না সদ্য নিযুক্ত উপাচার্যও। তাঁর কথায়, ‘এই সমস্য়াগুলির তড়িঘড়ি সমাধান দরকার। না হলেও আরও বড় বিপদ এগিয়ে আসবে বলেই মনে হয়। বেসিক সায়েন্সেও পড়ুয়া ভর্তি কমেছে। চাকরি না পাওয়ার আতঙ্কে তৈরি হয়েছে অনীহা।’ আশুতোষবাবুর মতে, এই অনীহাই গবেষণার দিকে ছেলেমেয়েদের ঠেলছে না। ফলত প্রভাব পড়ছে বিভিন্ন কেন্দ্রীয় র্যাঙ্কিংয়ে। অবশ্য শুধুই অনীহা নয়, এই তালিকায় অণুঘটক হিসাবে ‘ফান্ডিংকেও’ জুড়েছেন তিনি।
আশুতোষ ঘোষ বলেন, ‘আমাদের গবেষণার জন্য বরাদ্দ অনেকটাই কমে গিয়েছে। ফান্ডিং যে কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই শূন্য়তা পূরণে আমরা যাদবপুরের মতো কৌশল গ্রহণ করব বলেই ভাবছি। ওরা প্রাক্তনীদের থেকে অনেকটা ফান্ডিং পায়। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে কখনওই সেটা হয়নি। তবে দেখা যেতে পারে। আপাতত গোটাটাই আলোচনা সাপেক্ষ।’
সাম্প্রতিক অতীতে, বিশেষ করে ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য শান্তা দত্তের সময়কালে বারংবার বিতর্কে জড়িয়েছে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। তবে সদ্য নিযুক্ত উপাচার্যের মতে, ‘বিশ্ববিদ্যালয় কখনও বিতর্কের কেন্দ্র হওয়া উচিত নয়।’ শুধু তাই নয়, সরকারের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের তৈরি হওয়া সংঘাত প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘যে কারওর সঙ্গে দ্বন্দ্ব হতে পারে। কিন্তু আমাদের মাথায় রাখা প্রয়োজন, কী কারণে সেই দ্বন্দ্ব হচ্ছে এবং তা দ্রুত মিটিয়ে নেওয়াই দায়িত্ব। বিশ্ববিদ্যালয় দ্বন্দ্ব তৈরির জায়গা নয়।’ অবশ্য কলকাতা বিশ্ববিদ্য়ালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্র্রাক্তন উপাচার্য এখনও বজায় রেখেছেন প্রতিবাদের সুর। এদিন তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় স্বশাসন রক্ষা করতেই চাইবে। সরকার তাতে নাক গলাচ্ছে, প্রতিবাদে বাঁধা দিচ্ছে, যদি কোনও উপাচার্য এবং সিন্ডিকেট স্বাধিকার বজায় রাখতে চায়, তা হলে সংঘাত বেঁধে যাবে। আর এই ঘটনাটাই বারবার ঘটেছে। তাতে বারবার বিশ্ববিদ্যালয় জয়ী হয়েছে। আর ওনাদের আমার উপর রাগ চড়েছে। কিন্তু এতে আমার কিছু করার নেই। কেউ যেচে পায়ে পা মারিয়ে ঝগড়া করতে যায় না। আমি এখনও বলব, যে কোনও উপাচার্যের বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধিকার রক্ষার্থে সিন্ডিকেটকে সঙ্গে নিয়ে চলা উচিত।’