কলকাতা: একুশের বিধানসভা ভোটে তিনি ছিলেন বিজেপি (BJP)-র স্টার ক্যাম্পেনার। কিন্তু ভবানীপুর (Bhabanipur) উপনির্বাচনের দোরগোড়ায় বাবুলের দলবদলের জেরে রাজনৈতিক মহলে একটাই প্রশ্ন দানা বাঁধছিল, বাবুল সুপ্রিয় (Babul Supriyo) কি তৃণমূল প্রার্থী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) হয়ে প্রচারে নামবেন?
এই প্রশ্নের নেপথ্যে পর্যবেক্ষকদের একাংশের ব্যাখ্যা ছিল ভবানীপুরে বিজেপির তারকা প্রচারকের তালিকায় বাবুলের নাম থাকলেও তিনি তৃণমূল সুপ্রিমো মমতার বিরুদ্ধে প্রচারে নামতে চাননি। বিজেপি নেতৃত্বকে তা জানিয়েও দেন। তবে বিজেপি প্রার্থী প্রিয়াঙ্কা টিবরেওয়াল (Priyanka Tibrewal) কে তিনি সামাজিক মাধ্যমে শুভেচ্ছাও জানিয়েছিলেন। এবার কি তিনি ‘বোন’-এর বিরুদ্ধে প্রচারে যাবেন? এদিকে ভবানীপুরে তৃণমূল প্রার্থী মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর দলে যোগ দিয়েছেন বাবুল সুপ্রিয়। আর মমতার বিরুদ্ধে বিজেপির প্রার্থী বাবুলের স্নেহধন্যা প্রিয়াঙ্কা। তাই তাঁকে ভোট দেওয়া মানে তৃণমূলের বিরোধিতা করা নাকি প্রকারান্তরে তৃণমূলকে সাহায্য করা? প্রিয়াঙ্কাও কি তৃণমূলে চলে যাবেন? এমনই প্রশ্ন তুলেছিলেন সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী।
আর রবিবাসরীয় বিকালে তৃণমূল ভবনে সাংবাদিক বৈঠকে বাবুলের উত্তর, তিনি ভবানীপুরে তৃণমূল নেত্রীর হয়ে প্রচারে যেতে চান না। এটা হবে তাঁর কাছে বিড়ম্বনার। ঠিক কী বলেছেন বাবুল?
বাবুল সুপ্রিয়ের কথায়, ভবানীপুরের বিজেপি প্রার্থী তাঁর আইনজীবী ছিলেন। তিনি লড়াকু মেয়ে। অনেকে কেস লড়েছেন তাঁর হয়ে। সেই ‘গুড ল’ ইয়ার’ -এর বিরুদ্ধে তিনি প্রচারে যাবেন না বলেই সাফ জানান বাবুল। বলেন, “আমি রিকোয়েস্ট করব (তৃণমূলকে) আমাকে বিড়ম্বনায় ফেলবেন না।” তিনি আরও যোগ করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হয়ে প্রচারে বাবুল সুপ্রিয়কে তৃণমূলের না থাকলেও চলবে।
উল্লেখ্য, বাবুল সুপ্রিয়র আইনজীবী হিসাবেই প্রথম নজরে আসেন বিজেপি নেত্রী প্রিয়াঙ্কা টিবরেওয়াল। বাবুল মন্ত্রী হওয়ার পরপরই বিজেপিতে আসা এই তরুণ আইনজীবীর। সেই প্রিয়াঙ্কার মমতার বিরুদ্ধে ভোটে দাঁড়ানোর তাঁকে সোশ্যাল মিডিয়ায় শুভেচ্ছাও জানান বাবুল সুপ্রিয়। সেখানেই তিনি বলেন, ব্যক্তিগত আইনজীবীকে একসময় তিনিই উৎসাহিত করেছিলেন রাজনীতিতে আসার জন্য।
ততদিনে অবশ্য বিজেপি সম্পর্কে উদাসীন বাবুল। কিন্তু বিজেপি বাবুলকে ছাড়তে চাইছিল না পুরোপুরি। প্রিয়াঙ্কার সঙ্গে তাঁর সম্পর্ককে সামনে রেখেই তারকা প্রচারক হিসেবে আসানসোলের সাংসদের নাম তালিকায় রেখেছিল তারা। কিন্তু বাবুল আগ্রহ দেখাননি। সেই অনাগ্রহের কারণ অবশ্য আচমকাই স্পষ্ট হয় শনিবারের বারবেলা। যখন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত থেকে ঘাসফুল পতাকা তুলে নিতে দেখা গেল বাবুলকে।
এদিকে প্রিয়াঙ্কা টিবরেওয়াল ভবানীপুরে প্রচারের সময় বলেন, “বাবুল বোনের বিরুদ্ধে প্রচার করবে বলে মনে হয় না।” অর্থাৎ, রাজনৈতিক অভিপ্রায় নয়, বরং ব্যক্তিগত সম্পর্ককেই সামনে রাখছেন প্রিয়াঙ্কা টিবরেওয়ালের বিশ্বাস যে সম্পর্কের জেরে যে বাবুল সুপ্রিয় তাঁকে একসময় রাজনীতিতে নামিয়েছিলেন। তিনি অন্তত দলবদল করলেও তাঁর বিরুদ্ধে প্রচার করবেন না। আর বাবুল সুপ্রিয়ও জানালেন তিনি প্রচারে যেতে চান না। কিন্তু রাজনৈতিক মহলের একাংশের ব্যাখ্যা, যে বাবুল নিজেই বলছেন, তিনি সিদ্ধান্ত আবেগের বশে নয়, জেনেশুনেই নিয়েছেন। দল চাইলে বিজেপি প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রচারে যেতে আপত্তি কেন? ভোট প্রচারেও কি রাজনৈতিক পরিচয় সরিয়ে ব্যক্তিগত সম্পর্ককে বেশি মূল্য দিচ্ছেন বাবুল? নাকি বিজেপি থেকে তৃণমূলে এসেই পুরনো দলের বিরুদ্ধে প্রচারে ঝাঁপাতে চান না তিনি? উঠছে প্রশ্ন।
আরও পড়ুন: Babul Supriyo: ‘প্রথম একাদশে থাকতে চাই, রিজার্ভ বেঞ্চে নয়’, কোনদিকে নজর বাবুলের?