কলকাতা: বগটুইয়ের বড়শাল পঞ্চায়েতের উপ্র প্রধান ভাদু শেখ খুনের ঘটনার তদন্তে সিবিআই। শুক্রবার স্পষ্ট করে দিল কলকাতা হাইকোর্ট। প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব ও বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজের ডিভিশন বেঞ্চ স্পষ্ট জানায়,রাজ্য পুলিশ তদন্ত করতে পারবে না। ভাদু শেখ হত্যা মামলা ও বগটুই গণহত্যা মামলার মধ্যে ‘লিঙ্ক’ রয়েছে। সেক্ষেত্রে বগটুইয়ের পাশাপাশি ভাদু হত্যাতেও সিবিআই তদন্তের দাবি উঠছিল প্রথম থেকে। শুক্রবার প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ রায় দেয়, সিবিআই উপপ্রধান খুনেরও তদন্ত করবে। এর আগে এই মামলার তদন্ত করছিল রাজ্য পুলিশ। ২ মের মধ্যে ভাদু শেখের তদন্ত রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
২১ মার্চ রাতের ঘটনা পরম্পরা বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে যে ‘গণহত্যার’ বীজ বপন করা হয়েছিল উপ প্রধান ভাদু শেখের খুনের ‘মোটিভেই’। সেই রাতে সাড়ে আটটা নাগাদ ‘খুন’ হয়েছিলেন ভাদু শেখ। প্রকাশ্যে বোমা মেরে খুন করা হয়েছিল তাঁকে। অভিযোগ তেমনটাই। তার এক ঘণ্টার মধ্যেই গোটা গ্রামের পরিস্থিতি বদলে গিয়েছিল। পুলিশ জানিয়েছে, সাড়ে ন’টা থেকে টানা এক ঘণ্টা ধরে প্রথমে চলেছিল বোমাবাজি। জানা যায়, তারপর উন্মত্ত এক দল চালিয়েছিল তাণ্ডবলীলা। একাধিক বাড়িতে ঢুকে নির্বিচারে কুপিয়ে খুন করে পেট্রোল ঢেলে জ্বালিয়ে দিয়েছিল অর্ধমৃত মানুষগুলোকে। জ্বালিয়েছে একাধিক বাড়ি। গ্রামবাসী ও স্বজনহারাদের সেই অভিযোগের ভিত্তিতে চলছে তদন্ত। সেই ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে সিবিআই আগেই। কিন্তু ভাদুর তদন্ত করছিল পুলিশ। এই ঘটনার সিবিআই তদন্তের দাবি উঠছিল। হাইকোর্টে সওয়াল করেছিলেন একাধিক আইনজীবী। সেই মামলার শুনানিতে প্রধান বিচারপতির পর্যবেক্ষণ, দুটো ঘটনাই অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত।
উল্লেখ্য, বগটুই-কাণ্ডে কলকাতা হাই কোর্ট সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেওয়ার পরই ভাদু শেখ খুনেও কেন্দ্রীয় বাহিনীকে দিয়ে তদন্তের আর্জি জানিয়ে মামলা হয়। তাতে গত শুনানিতে হাই কোর্ট সিবিআই এ ব্যাপারে কী ভাবছে জানতে চেয়েছিল। সিবিআই-এর পক্ষ থেকে বৃহস্পতিবারই আদালতে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল যে তারা ইতিমধ্যেই ঘটনার খোঁজ খবর করা শুরু করেছেন। ভাদু শেখ খুনের তদন্ত করতে তাদের আপত্তি নেই। তবে এজির পক্ষ থেকে ভাদু-খুনে রাজ্য পুলিশের তদন্তের পক্ষেও সওয়াল করেছিলেন। শুক্রবার সব দিক খতিয়ে দেখে কলকাতা হাইকোর্ট এই নির্দেশ দিল।
মামলাকারী আইনজীবী কৌস্তভ বাগচী বলেন, “আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছিলাম, ভাদু শেখ খুনে সিবিআই তদন্ত করুক। আমরা রিট পিটিশনও করেছিলাম, ভাদু শেখ খুন ও তার পরবর্তী পর্যায়ের ঘটনার মধ্যে ইন্টারলিঙ্ক রয়েছে। দুটি আলাদা ঘটনা নয়। তাই আমরা বলেছিলাম, দুটো ঘটনাই সিবিআই তদন্ত করুক। কোর্টের নির্দেশে একটা জায়গায় অস্পষ্টতা ছিল। আমি এটা আদালতের নজরে আনি। আমাকে একটা অ্যাপ্লিকেশন ফাইল করতে বলা হয়েছিল। আজ প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ এই বিষয়টিতে মান্যতা দিল।”
তবে এদিন সিবিআই-এর বক্তব্য ছিল, ঘটনার পর ১১ দিনের বেশি কেটে গিয়েছে। তাই অনেক তথ্য নষ্ট হয়ে যেতে পারে। সিবিআই এক্ষেত্রে তথ্য সংগ্রহের জন্য বিভিন্ন প্রযুক্তি ব্যবহার করবে বলেও সিবিআই এদিন আদালতে জানায়।
এদিনের হাইকোর্টের নির্দেশ প্রসঙ্গে বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, “কয়েকদিন আগেই বলেছিলাম, দুটো ঘটনাই একে অপরের সঙ্গে জড়িত। প্রথম থেকেই যে বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের তত্ত্ব উঠে আসছে, তা যদি খতিয়ে দেখতে হয়, তাহলে সিবিআই তদন্তের প্রয়োজন। আমরা এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাচ্ছি।”