Baguiati Crime: জ্বালা ধরা শরীর, একটা শব্দ আর হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজের সময়! বাগুইআটির বধূর চরম পরিণতির সাক্ষী ছেলে
Baguiati Crime: ২০০৮ সালে অম্লান মণ্ডলের সঙ্গে বিয়ে অশ্বিনীনগরের বাসিন্দা প্রিয়ম শর্মার। পরিবারের অভিযোগ, বিয়ের ঠিক দেড় বছরের মাথায় তাঁদের মধ্যে অশান্তি শুরু হয়।
কলকাতা: বাড়ি থেকে অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় উদ্ধার হয়েছিল বছর পঁয়ত্রিশের গৃহবধূ। শ্বশুরবাড়ির তরফে বলা হয়েছিল, পুজো দেওয়ার সময়েই দেশলাই থেকে আগুন লেগেছে। কিন্তু গৃহবধূর ভাইয়ের খটকা লেগেছিল একটা জায়গাতেই। হোয়াটসঅ্যাপে বন্ধুকে পাঠানো একটা মেসেজের সময় ধরিয়ে দিচ্ছিল অধরা সূত্রটাকে। হাসপাতালের বে়ডে শুয়ে গৃহবধূর বলা শেষ শব্দটাও ছিল ‘মোমবাতি’। পারিবারিক অশান্তিতেই গৃহবধূকে আগুনে পুড়িয়ে খুনের অভিযোগ ওঠে স্বামী-সহ শ্বশুরবাড়ির সদস্যদের বিরুদ্ধে। কিন্তু চার মাস আগের সেই ঘটনার অভিযোগই নিতেই চাইছিল না বাগুইআটি থানার পুলিশ। তেমনই দাবি পরিবারের। অবশেষে চার মাস ধরে হোম সেক্রেটারি, ডিজিপি ও বিধাননগর কমিশনারের কাছে অভিযোগ জানিয়ে বাগুইআটি থানায় অভিযোগ জানাতে পারলেন গৃহবধূর মা ও ভাই। চার মাস পর মেয়ের খুনের অভিযোগ দায়ের করতে পেরেছেন তাঁরা। ঘটনায় আপাতত তিন জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তবে বাগুইআটি থানার বিরুদ্ধে চরম অসহযোগিতা ও কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগ তুলছে পরিবার।
ঘটনাটা ঠিক কী?
বছর পঁয়ত্রিশের গৃহবধূ প্রিয়ম মণ্ডল বাগুইআটি রঘুনাথপুরের বাসিন্দা। গত ৩ নভেম্বর বাগুইহাটি রঘুনাথপুরে গৃহবধূকে অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করেন পরিবারের সদস্যরা। তাঁকে আরজিকর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন, শরীরের ৮০ শতাংশ পুড়ে গিয়েছে ওই গৃহবধূর। ৭ নভেম্বর ওই গৃহবধূর মৃত্যু হয়। পরিবারের পক্ষ থেকে শ্বশুরবাড়ির সদস্যদের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ তোলা হয়। তাঁরা লিখিত অভিযোগ দায়ের করতে গেলে বাগুইআটি থানার পুলিশ তা নিতে অস্বীকার করে বলে দাবি মৃতের পরিবারের।
কেন শ্বশুরবাড়ির বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ তোলে গৃহবধূর পরিবার?
২০০৮ সালে অম্লান মণ্ডলের সঙ্গে বিয়ে অশ্বিনীনগরের বাসিন্দা প্রিয়ম শর্মার। পরিবারের অভিযোগ, বিয়ের ঠিক দেড় বছরের মাথায় তাঁদের মধ্যে অশান্তি শুরু হয়। নানারকমভাবে অম্লান প্রিয়মের ওপর অত্যাচার শুরু করেন বলে অভিযোগ। পরিবারকে মাঝেমধ্যে সেকথা জানিয়েছিলেন প্রিয়ম। কিন্তু ফের দুজনের মধ্যে সমঝোতা হয়ে যেত। এরইমধ্যে ২০১৫ সালে এক পুত্রসন্তানের জন্ম দেন প্রিয়ম।
অভিযোগ, এরপর অত্যাচারের মাত্রা বাড়ে দ্বিগুণ। প্রিয়মের মায়ের বয়ান অনুযায়ী, ৩ নভেম্বর তাঁদের বাড়িতে আচমকাই খবর যায় যে অগ্নিদগ্ধ হয়েছেন প্রিয়ম। খবর পেয়েই তাঁরা হাসপাতালে পৌঁছন। শ্বশুরবাড়ির তরফে বলা হয়, বেলা দেড়টা নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে। সে সময় পুজো দিচ্ছিলেন প্রিয়ম। কোনওরকমভাবে মোমবাতি থেকে আগুন লেগে গিয়েছে।
কিন্তু প্রিয়মের ভাই পরে মোবাইল চেক করে দেখেন, তাঁর দিদি বেলা ১.৪৮ মিনিটে হোয়াটসঅ্যাপে চ্যাট করেছেন শেষবার।তাহলে বেলা দেড়টায় তিনি কীভাবে অগ্নিদগ্ধ হতে পারেন? পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, মৃত্যুর আগে প্রিয়ম জানিয়েছেন, মোমবাতি থেকে আগুন লেগেছে। কিন্তু পরিবারের দাবি, সেই বক্তব্য তাঁদের কাছে স্পষ্ট করা হয়নি? প্রিয়মের ভাইয়ের অভিযোগ, বাগুইআটি থানায় বারবার গেলে তাঁদেরকে ভয় দেখানো ও হেনস্থা করা হয়।
শেষমেশ প্রিয়মের মা দ্বারস্থ হন নবান্নে। ডিজিপি ও বিধান নগর কমিশনারেটের কমিশনার কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। দীর্ঘ পাঁচ মাস পরে মেয়ের খুনের অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা হয় বিবাহবিচ্ছেদ এবং খুনের মামলায়। কী কারণে পুলিশ অভিযোগ অস্বীকার করলেন? কেনইবা পুলিশের গড়িমসি? তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
তার মা নেই। কিন্তু মায়ের জ্বলে যাওয়া শরীরটা দেখেছিল ৬ বছরের ছেলেটা। দিদার পাশে বসে তাই শুধু বলল, ‘শাস্তি চাই…’
আরও পড়ুন: ‘তৃণমূলের সঙ্গে এক টেবিলে বসে চা খেতে চাই না’, ‘রীতি’ মেনে এবারও বিএ কমিটির বৈঠক বয়কট বিজেপির