‘পরলোকে’ বারুইপুরের প্রাক্তন বিধায়ক, শিক্ষামন্ত্রীর টুইটে ‘ইহলোকে’ই আছেন নির্মল!

নির্বাচন আবহে যখন বার বার 'বহিরাগত' বলে গেরুয়া শিবিরকে তোপ দেগেছে তৃণমূল, এমনকী, 'বাংলা ভাষা জানে না, বাংলার সংস্কৃতি জানে না', বিজেপির বিরুদ্ধে এ হেন নানা অভিযোগ করেছেন শাসক শিবিরের শীর্ষ নেতারা, সেখানে শিক্ষামন্ত্রীর এমন 'অর্থবহ ভুল' যে নজরে আসবেই তা মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ

'পরলোকে' বারুইপুরের প্রাক্তন বিধায়ক, শিক্ষামন্ত্রীর টুইটে 'ইহলোকে'ই আছেন নির্মল!
(ফাইল ছবি)
Follow Us:
| Updated on: Apr 30, 2021 | 9:36 PM

কলকাতা: করোনায় কাবু দেশ। মারণ ভাইরাস প্রাণ কাড়ল আরও এক বিদায়ী বিধায়কের। শুক্রবার প্রয়াত হলেন বারুইপুর পূর্ব বিধানসভার বিদায়ী বিধায়ক নির্মলচন্দ্র মণ্ডল (Nirmal Chandra Mandal)। তাঁর মৃত্যুতে সোশ্যাল মিডিয়ায় শোক জ্ঞাপন করেছেন তৃণমূলের শীর্ষ নেতারা। কিন্তু, ‘পরলোকগত’ নির্মলচন্দ্রকে ‘ইহলোকে’ টেনে এনেছেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় (Partha Chatterjee)। তাঁর টুইটে ভুল শব্দবন্ধনী চোখ এড়ায়নি নেটিজেনদের।

করোনায় প্রয়াত, বিদায়ী বিধায়কের মৃত্যুতে শোকজ্ঞাপন করে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় লেখেন,  “আমাদের সকলের প্রিয় প্রাক্তন বিধায়ক বারুইপুরের নির্মল চন্দ্র মন্ডল আমাদের সকলকে ছেড়ে ইহলোকে চলে গেলেন।সদাহাস্যময় এই মানুষটিকে আমরা আর পাব না। তার পরিবারের সকল সদস্যকে জানাই গভীর সমবেদনা।” তাঁর এই ‘সমবেদনা’ প্রকাশের জেরে রীতিমতো অস্বস্তিতে ঘাসফুল শিবির। কারণ, ‘ইহলোক’ শব্দের অর্থ, ‘পৃথিবী’ বা ‘এই লোক’। আর ‘পরলোক’ শব্দের অর্থ ‘মরণোত্তর কাল বা অবস্থা’। সেখানে, পার্থবাবু লিখলেন, ‘ইহলোকে চলে গিয়েছেন।’ অর্থাৎ, ‘মৃত্যুর পর নির্মলবাবু পৃথিবীতে রয়েছেন’। আসলে, বাক্যবন্ধটি হতে পারত, ‘নির্মলবাবু ইহলোক ত্যাগ করেছেন।’ অথবা, ‘নির্মলবাবু সকলকে ছেড়ে পরলোকে চলে গেলেন।’

নির্বাচন আবহে যখন বার বার ‘বহিরাগত’ বলে গেরুয়া শিবিরকে তোপ দেগেছে তৃণমূল (TMC), এমনকী, ‘বাংলা ভাষা জানে না, বাংলার সংস্কৃতি জানে না’, বিজেপির বিরুদ্ধে এ হেন নানা অভিযোগ করেছেন শাসক শিবিরের শীর্ষ নেতারা, সেখানে শিক্ষামন্ত্রীর এমন ‘অর্থবহ ভুল’ যে নজরে আসবেই তা মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ। যদিও খোদ শিক্ষামন্ত্রীকে এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনও উত্তর দেননি। তবে, তৃণমূলের দলীয় সূত্রে খবর, শিক্ষামন্ত্রীর টুইটে শব্দচয়নের ভুলটি ‘সম্পূর্ণই অনিচ্ছাকৃত।’ টিভি নাইন বাংলার (TV9 Bangla) খবরের জেরে কিছু সময়ের মধ্যেই যদিও পুরনো টুইটটি বাতিল করে নতুন করে টুইট করেন শিক্ষামন্ত্রী। যদিও, নতুন টুইটে, ‘ইহলোক’ শব্দটি তুলে দিলেও  যতিচিহ্নের ব্যবহারে ‘ভুল’ করেছেন শিক্ষামন্ত্রী। সংশোধিত টুইটে তিনি লিখেছেন,  “আমাদের সকলের প্রিয় প্রাক্তন বিধায়ক বারুইপুরের নির্মল চন্দ্র মন্ডল আমাদের সকলকে ছেড়ে। চলে গেলেন।” যদিও বাক্যটি হওয়া উচিত ছিল, ‘আমাদের সকলের প্রিয় প্রাক্তন বিধায়ক বারুইপুরের নির্মল চন্দ্র মন্ডল আমাদের সকলকে ছেড়ে চলে গেলেন।’ অর্থাৎ, ‘ছেড়ে’ ও ‘চলে গেলেন’-এর মাঝে যতিচিহ্নটি হবে না।

প্রসঙ্গত, বারুইপুর পূর্বের প্রাক্তন বিধায়ক নির্মলচন্দ্র বেশ কয়েকদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন। সূত্রের খবর, কলকাতার হাসপাতালগুলিতে ভর্তি হতে না পেরে বারুইপুরের একটি হাতুড়ে চিকিৎসকের চিকিৎসাধীন ছিলেন। প্রাক্তন বিধায়কের পরিবারের অভিযোগ, প্রশাসনিক ভাবে তাঁরা কোনও সাহায্য পাননি। তাঁদের দাবি, মুখ্যমন্ত্রীর আপ্ত সহায়ক জানান, কোভিড টেস্টের রিপোর্টে না পেলে কোনও কোভিড হাসপাতালে ভর্তি করা যাবে না। এদিকে সেই রিপোর্ট আসতে অনেক দেরি হয় বলে অভিযোগ। ২৩ এপ্রিল থেকে জ্বর, সর্দি-সহ কোভিডের উপসর্গ দেখা দেয় নির্মলবাবুর। তবে বৃহস্পতিবার তাঁকে সঙ্কটজনক অবস্থায় ভর্তি করা হয় এম আর বাঙুর হাসপাতালে। শুক্রবারই তাঁর মৃত্যু হয়।