কলকাতা: সমস্ত তথ্য হলফনামায় উল্লেখ করেননি ভবানীপুরের তৃণমূল প্রার্থী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই অভিযোগ তুলে এবার নির্বাচন কমিশনের কাছে চিঠি করলেন বিজেপি প্রার্থী প্রিয়াঙ্কা টিব্রেওয়াল। তাঁর অভিযোগ, তাঁর বিরুদ্ধে কত কেস রয়েছে, তা হলফনামায় উল্লেখ করেননি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
হলফনামায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উল্লেখ করেছেন, গত আর্থিক বছরের তুলনায় এই আর্থিক বছরে তাঁর পাঁচ লক্ষ টাকা আয় বেড়েছে। ২০২০-২১ অর্থবর্ষে তাঁর আয় ১৫ লক্ষ ৪৭ হাজার ৮৪৫ টাকা। এখন তাঁর ব্যাঙ্কে রয়েছে ১৩ লক্ষ ১১ হাজার ৫১২ টাকা। তাঁর অস্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ ১৫ লক্ষ ৩৮ হাজার ২৯ টাকা। তাঁর নামে কোনও বাড়ি, গাড়ি, চাষযোগ্য জমি এবং পৈতৃক সম্পত্তি নেই বলে হলফনামায় উল্লেখ করেছেন মমতা। তাঁর কোনও ঋণও নেই বলে জানিয়েছেন তিনি। তবে বিজেপি প্রার্থীর অভিযোগ, তাঁর বিরুদ্ধে কতগুলি কেস রয়েছে, সে কথা হলফনামায় উল্লেখ করেননি মমতা। আর সেই প্রশ্ন তুলেই কমিশনকে চিঠি করলেন তিনি।
প্রসঙ্গত, এর আগেও কমিশনের কাছে দরবার করেছিল গেরুয়া শিবির। আর তাতেও মূল ফোকাস ছিল ভবানীপুর। একুশের নির্বাচনে এপিসেন্টার ছিল নন্দীগ্রাম আর এবারের উপনির্বাচনের সব ফোকাস ভবানীপুর। বিধানসভা নির্বাচনে ভবানীপুরে বিজেপি প্রার্থী রুদ্রনীল ঘোষকে ২৮ হাজারের বেশি ভোটে হারিয়েছিলেন তৃণমূলের শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। তিনি পদত্যাগ করায় এবার সেখানে প্রার্থী মমতা স্বয়ং।
পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে বিজেপিও। উপনির্বাচনে ভবানীপুরে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন আইনজীবী প্রিয়াঙ্কা টিব্রেওয়াল। সম্প্রতি ভোট পরবর্তী হিংসা মামলাকে সামনে রেখে বার বার যাঁর নাম শিরোনামে উঠে এসেছে। দিলীপ ঘোষ, শুভেন্দু অধিকারীরাও বার বার বলেছেন, প্রিয়াঙ্কা তাঁদের লড়াকু নেত্রী। প্রিয়াঙ্কার লড়াই-ই ভোটের পরে হিংসা নিয়ে বিজেপির যে অভিযোগ ছিল, তাতে সিলমোহর এনে দিয়েছে। কলকাতা হাইকোর্ট সিবিআইকে এই ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। সিটও গঠিত হয়েছে। সেই প্রিয়াঙ্কা টিব্রেওয়ালকেই মমতার বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়েছে বিজেপি।
সোমবারই ভবানীপুরের বিজেপি প্রার্থী প্রিয়াঙ্কা টিব্রেওয়াল মনোনয়নপত্র জমা দেন। সঙ্গে ছিলেন শুভেন্দু অধিকারীরা। আবারও যেন মমতার বিরুদ্ধে সম্মুখ সমরে তিনি। মনোনয়ন জমা দিয়ে বেরিয়ে হুঙ্কারের সুরে প্রিয়াঙ্কা বলেন, “রাজ্যে হিংসা বন্ধ করতে হবে। হিংসার খুনি খেলা বন্ধ করতে হবে। ভবানীপুরের মানুষ একবার ভোট দিয়েছিল। সেটাই ছিল গণতন্ত্র। যেটা মানতে হবে। কিন্তু জোর করে আবার মুখ্যমন্ত্রী ভোট করাচ্ছেন। কারণ ওঁর চেয়ারে বসার জেদ আছে।”
নির্বাচন প্রক্রিয়াকে সুষ্ঠু করতে মূলত চারটি বিষয়ের উপর জোর দিয়েছে বিজেপি। কমিশনের কাজে যে চিঠি বিজেপির তরফে দেওয়া হয়েছে, তাতে কয়েকটি বিষয়ে ফোকাস করা হয়েছে। ৩০ সেপ্টেম্বর যে তিন বিধানসভা কেন্দ্রে ভোট রয়েছে, সেখানে সব বুথের নিরাপত্তায় কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়ের করার দাবি জানিয়েছে বিজেপি। প্রতিটা বুথেই সিআরপিএফ-কে নিরাপত্তায় রাখতে হবে। তিন কেন্দ্রে মোট ১২০ কোম্পানি বাহিনী মোতায়েন প্রয়োজন। বুথ বা নির্বাচনী কেন্দ্রের ২০০ মিটারের মধ্যে কলকাতা বা রাজ্য পুলিশের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হোক।
বিজেপি নেতৃত্বের আশঙ্কা, প্রশাসনকে দিয়ে শাসক দল ভোটারদের উপর ও নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় প্রভাব বিস্তার করতে পারে। সেক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের কড়া নজরদারির দাবি তুলেছেন তাঁরা।
আরও পড়ুন: আবারও সাংসদ অর্জুন সিংয়ের বাড়িতে বোমাবাজি, এক সপ্তাহের পর পর দু’বারের ঘটনায় কাঠগড়ায় প্রশাসন