কলকাতা: ব্যবসায়ী খুন কাণ্ডে চাঞ্চল্যকর মোড়। এলগিন রোডের গেস্ট হাউস থেকে উদ্ধার ব্যবসায়ীর নগ্ন দেহ। লি রোডের ব্যবসায়ী খুনে লুব্রিক্যান্ট উদ্ধারের পর থেকেই গোটা ঘটনার মোড় ঘুরে গিয়েছে অন্যদিকে। ইতিমধ্যে পুলিশের হাতে এসেছে আরও বেশ কয়েকটি চাঞ্চল্যকর তথ্য। পুলিশ জানতে পেরেছে, অভিযুক্ত শান্তিলালের বেশ কিছু ঘনিষ্ঠ ছবি ও ভিডিয়ো ফাঁস করে দেওয়ার হুমকি দিয়ে মুক্তিপণ দাবি করেছিল। এক্ষেত্রে পুলিশ সিসিটিভি ফুটেজ ও পরিবারের সদস্যদের বয়ানের ভিত্তিতে ঘটনার একটি পর্যায়ক্রম তৈরি করেছে।
সোমবার সন্ধ্যা ৬টা ৪০ মিনিটে পান খেতে যাবেন বলে বাড়ির নীচে নামেন শান্তিলাল বৈদ্য। সন্ধ্যা ৭ টা ৫ মিনিটে বাড়ির ল্যান্ডলাইনে ফোন আসে। বিবেক কুমার নামে তাঁর এক ভাইপো ফোন ধরেন। ফোনে ২১ মিনিটের কথাবার্তা হয়। সেখানে ২৫ লক্ষ টাকা মুক্তিপণের দাবি করা হয়। পরিবারের দাবি, শান্তিলালের বেশ কিছু ঘনিষ্ঠ ছবি ও ভিডিয়ো ফাঁস করে দেওয়ার হুমকি দেয় অভিযুক্ত। রাত ১০ টা নাগাদ ভিক্টোরিয়া সাউথ গেটে মুক্তিপণ নিয়ে আসতে নির্দেশ দেয় অভিযুক্ত। অপহরণকারী ভিক্টোরিয়া সাউথ গেটে পৌঁছয় রাত ১০টা ১৫ মিনিটে। পরিবারের দাবি, টাকা ভর্তি ব্যাগটা নেওয়ার পর শান্তিলাল বৈদ্যের ফোন তাঁদের মুখের ওপর ছুড়ে দিয়ে চলে যায় অভিযুক্ত।
শান্তিলাল বৈদ্যের ভাইপোর কথায়, “আমাদের বাড়িতে একটা ফোন আসে। সেখানে ২৫ লক্ষ টাকা দাবি করা হয়। আমরা চেষ্টা করছিলাম ফোনটা দীর্ঘক্ষণ ধরে রাখার, যাতে ট্রেস করা যায়। সেটা সম্ভব হয়নি। সময়ে টাকা না পেলে খুন করা হবে বলেও হুমকি দেওয়া হয়। ভিক্টোরিয়া গেটের সামনে টাকা নিয়ে যেতে বলা হয়। রাতে আমাদের কাছে আরও একটি ফোন আসে। তাতে বলা হয়, একটি দেহ উদ্ধার হয়েছে। শণাক্ত করে যেতে। রাত দুটোয় সেই ফোন আসে।”
দুটি বিষয় পুলিশের কাছে আগেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল। ব্যবসায়ী অপহৃত হননি, তিনি স্বেচ্ছায় ওই যুবকের সঙ্গে গেস্ট হাউসে গিয়েছিলেন। কারণ নিহত ব্যবসায়ীর ছেলের বয়ান অনুযায়ী, সোমবার রাতে বাড়িতে ঢোকার সময়েই তাঁর বাবার ফোনে একটি মেসেজ আসে। এরপর তিনি পান কেনার নাম করে বাইরে যান। কিন্তু সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, পান না কিনে তিনি সোজা রাস্তা ধরে এগিয়ে যান। সেক্ষেত্রে অপহৃত হননি তিনি। দ্বিতীয়ত, এই খুনের মোটিভ অপহরণ নয়। সেক্ষেত্রে ব্যক্তিগত যৌন সম্পর্কের টানাপোড়েন থাকতে পারে।
তদন্তকারীরা মনে করছেন, খুনী পেশাদার নয়। অন্তত ফিঙ্গার প্রিন্ট দেখে তেমনটাই মনে করছেন তদন্তাকারীরা। ভিক্টোরিয়া সাউথ গেটে ট্যাক্সি নিয়ে টাকা নিতে গিয়েছিল অপহরণকারী। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে ওই ট্যাক্সিটিকে চিহ্নিত করার চেষ্টা করছেন তদন্তকারীরা। আপাতত ব্যবসায়ী খুনে এখন জটাজাল। কোথায় লুকিয়ে রহস্য? তদন্তে কলকাতা পুলিশের হোমিসাইড শাখা।