কলকাতা: রবিনসন স্ট্রিটকাণ্ডের ছায়া এবার বিধাননগরের মালির বাগান সর্দার পাড়া এলাকায়। স্ত্রীর দেহ আগলে রাখলেন আশি বছরের বৃদ্ধ।
সর্দার পাড়ায় দীর্ঘ কুড়ি বছর ধরে ভাড়া থাকতেন অবসরপ্রাপ্ত কর্মী দুলাল দাস বর্মন ও তাঁর স্ত্রী দীপ্তি। শারীরিক অসুস্থতার কারণে শ্রী দীপ্তি দাস বর্মন শয্যাশায়ী ছিলেন বেশ কয়েক বছর ধরেই। সপ্তমী থেকে বাড়ির বাসিন্দারা দুর্গন্ধ পেতে শুরু করেন। বাড়ির মালিক তাপস চৌধুরী ওই বৃদ্ধকে জিজ্ঞাসা করলে জানান, শারীরিক অসুস্থতার কারণে স্ত্রীর শরীরে ফোসকা পড়ে গিয়েছে এবং সেখান থেকেই গন্ধ বেরোচ্ছে। তবুও তিনি স্ত্রীর মৃত্যুর খবর জানাননি বলে দাবি বাড়িমালিকের।
নবমীর সকাল থেকে দুর্গন্ধ আরও প্রকট হয়। স্থানীয় বাসিন্দারা বাড়ির মালিকের কাছে বিষয়টি জানান। তারপর ওই ব্যক্তি বিমানবন্দর থানায় খবর দেন। এবং পুলিশ গিয়ে বৃদ্ধ দুলাল বর্মনকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি জানান, তাঁর স্ত্রী বেঁচে রয়েছেন। বিষয়টি মানতে চায় না পুলিশ।
একপ্রকার জোর করেই পুলিশ ঘরের ভেতরে ঢোকে। তখন ওই বৃদ্ধার পচা গলা দেহ বিছানায় পড়ে থাকতে দেখেন। দেহটি উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তবে পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, পঞ্চমীর দিনই ওই বৃদ্ধার মৃত্যু হয়েছে। মৃত স্ত্রীর সঙ্গে দীর্ঘ পাঁচ দিন ধরে একই খাটে রাত কাটিয়েছেন বৃদ্ধ।
পাঁচ দিন ধরেই স্ত্রীকে খাইয়েছেন, জল দিয়েছেন। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে বৃদ্ধ দম্পতির দুই ছেলে। বড় ছেলে বিপ্লব দাস বর্মন চাকরি সূত্রে দিল্লি থাকেন এবং ছোট ছেলে বিশু দাস বর্মন চাকরিসূত্রে গোয়ায় থাকেন। তাঁদেরকে ইতিমধ্যেই পুলিশ খবর পাঠিয়েছে। বৃদ্ধ দুলাল দাস বর্মনকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠানো হবে খবর।
এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, “অনেক বছর ধরেই ওঁরাএখানে ভাড়া থাকতেন। বেশ কিছু দিন ধরেই জেঠিমাকে দেখতে পেতাম না। জানতাম শরীর খারাপ। জ্যেঠুও তাই বলতেন। বেশ কয়েকদিন ধরে গন্ধ বেরোচ্ছিল। তবে এমনটা হবে বুঝতে পারিনি। আমাদের কাছে বিষয়টা এখনও অবিশ্বাস্য লাগছে।”
বাড়ির মালিক বলেন, “আমরা দিন তিনেক আগে থেকেই গন্ধ পাচ্ছিলাম। প্রথমে বুঝতে পারিনি গন্ধটা কোথা থেকে বেরোচ্ছে। আমরা ওঁকে প্রশ্ন করেছি। বয়স্ক মানুষ। কিন্তু ওঁ বিশ্বাস করছেন না যে মারা গিয়েছে স্ত্রী। ওঁর সঙ্গে বিছানায় শুয়েছেন খেয়েছেন। কুড়ি বছর ভাড়া রয়েছেন। কখনই দেখিনি আলাদা থাকতে। আমাদের বাড়িতেই থাকতেন। খুবই শান্ত পরিবার। ছেলেরা কর্মসূত্রে বাইরেই থাকেন।”
আরেক প্রতিবেশী বলেন, “ওঁর স্ত্রী অসুস্থ অনেকদিন ধরেই। স্বামীই সেবা করতেন। কিন্তু স্ত্রী যে চলে গিয়েছেন, তা বিশ্বাসই করছিলেন না। পুলিশ বলছে অন্ততপক্ষে তিন চার দিন আগেই মৃত্যু হয়েছে।”