কলকাতা: কিছুদিনের জন্য স্কুল খুলেছিল বটে। কিন্তু করোনার ফের বাড়বাড়ন্ত হতেই তালা পড়েছে স্কুলের গেটে (Schools Closed)। দীর্ঘদিন ধরে এভাবে স্কুল থেকে দূরে থাকার কারণে, তার মানসিক প্রভাব পড়ছে পড়ুয়াদের উপর। এই পরিস্থিতিতে করোনা কালে পড়ুয়াদের মানসিক দিক দিয়ে সমর্থন জোগাতে লাগাতার ওয়েবিনার (Webinar for Students) করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য শিক্ষা দফতর। স্কুল বন্ধ থাকায় পড়ুয়াদের উপর যে মানসিক প্রভাব পড়ছে, তা স্বীকার করছে বিকাশ ভবন (Bikash Bhavan)। এই অবস্থা কাটিয়ে তুলতে চায় শিক্ষা দফতর। সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যতদিন স্কুল খোলা যাচ্ছে না, ততদিন এই ধরনের পদক্ষেপ করে যাবে বিকাশ ভবন।
উল্লেখ্য, করোনা পরিস্থিতির জেরে দেশব্যাপী লকডাউন ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই কোপ পড়েছে সামগ্রিক শিক্ষা ব্যবস্থায়। প্রায় দুই বছর হতে চলল, স্বাভাবিক পঠনপাঠন থেকে বহু ক্রোশ দূরে পড়ুয়ারা। এই পরিস্থিতিতে পড়ুয়াদের জন্য বিশেষভাবে কার্যকর হয়ে উঠেছে অনলাইন ক্লাস। নিয়মিত অনলাইনে ক্লাস চলছে পড়ুয়াদের। মুঠোফোনটাই হয়ে উঠেছে আস্ত একটা ক্লাসরুম। কিন্তু তারপরও একটি দূরত্ব থেকেই যাচ্ছে। বিশেষ করে, স্কুলে গিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে কথা, টিফিনের সময়ে একসঙ্গে খেলাধুলো সবই বন্ধ রয়েছে। আর দীর্ঘদিন ধরে সহপাঠীদের থেকে দূরে থাকার ফলে এখন তার সরাসরি প্রভাব পড়তে শুরু করেছে পড়ুয়াদের মনে। এই পরিস্থিতিতে পড়ুয়াদের মানসিক স্বাস্থ্যের কথা মাথায় রেখে ওয়েবিনার শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিকাশ ভবন।
রাজ্য শিক্ষা দফতরের উদ্যোগে এই কাউন্সেলিং সেশনের নাম দেওয়া হয়েছে ‘উজ্জীবন’। আগামিকাল অর্থাৎ, রবিবার থেকে শুরু হচ্ছে এই ওয়েবিনার। আগামিকালের বিষয় স্থির করা হয়েছে – কোভিডকালে শিক্ষার্থীমন। আলোচনায় থাকবেন বিশিষ্ট মনোবিদরা। রাজ্য উচ্চ শিক্ষা দফতর ও স্কুল শিক্ষা দফতর উভয়ের উদ্যোগেই এটি চালু হচ্ছে। জুম কলের মাধ্যমে এই ওয়েবিনারে যোগ দেওয়া যাবে। এর পাশাপাশি, যাঁরা জুম কলে যোগ দিতে পারবেন না, তাঁদের জন্য ফেসবুক ও ইউটিউব লাইভেও এই ওয়েবিনারগুলি দেখানোর ব্যবস্থা করছে বিকাশ ভবন।
বিশিষ্ট মনোবিদ উর্মি চট্টোপাধ্যায় বিকাশ ভবনের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। তাঁর মতে, “এই মহামারী আমাদের বিধ্বস্ত করে দিয়েছে। আমরা কেউ প্রস্তুত ছিলাম না। মহামারী যে শুধু বড়দের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলেছে, এমনটা নয়, সেই সঙ্গে ছোটরাও ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। বিশেষ করে উৎকণ্ঠা, কথা বলার ক্ষেত্রে সমস্যা থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিচ্ছে ছোটদের ক্ষেত্রে। বর্তমান করোনা পরিস্থিতির কারণে বাইরে বেরোনোর উপায় নেই, সব অনলাইনেই হচ্ছে,খেলাধুলোর জায়গা নেই – এমনই বেশ কিছু সমস্যা রয়েছে। আরও একটি বড় সমস্যা আইসোলেটেড লার্নিং। প্রত্যেক পড়ুয়া নিজের নিজের বাড়িতে বসেই পড়াশোনা করছে। স্কুলে গেলে বন্ধুদের সঙ্গে যে দেখা হয়, তার উপায় নেই। একসঙ্গে টিফিন শেয়ার করে খাওয়ার উপায় নেই। পড়াশোনা স্বাভাবিক মাধ্যমে না হলে এই সমস্যাগুলি থাকবেই।” আর এই সব কারণেই আরও বেশি করে কাউন্সেলিং প্রয়োজন বলে মনে করছেন তিনি।
তিনি আরও জানিয়েছেন, “করোনাকালে পড়ুয়াদের রুটিনে ভীষণরকম পরিবর্তন এসেছে। ডিসিপ্লিন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। অনেকেই সারাদিন মোবাইল নিয়ে বসে থাকছে। পড়াশোনার জন্য এটি দরকার, তবে অনেকেই এটির ভুল ব্যবহার করছে। সারা রাত জেগে গেম খেলছে। ইনস্টাগ্রামে রিল করছে। এক টানা বসে পড়ার অভ্যেসটাই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এই কারণেই কাউন্সেলিং দরকার। পড়ুয়াদের মধ্যে, মনোনিবেশে সাংঘাতিকভাবে সমস্যা হচ্ছে। সব নোটস আসছে মোবাইলে অনলাইনে। পড়া পাঠাচ্ছে, সেটাও হোয়াটসঅ্যাপে। মানুষের মধ্যে একটি অভ্যেস রয়েছে শর্টকাট – স্বাভাবিক পড়ার অভ্যেস যদি চলে যায়, তাহলে পরবর্তীকালে কর্মক্ষেত্রেও এর প্রভাব পড়তে পারে।”
এর পাশাপাশি ছোটদের পার্সোনালিটিতে বদল আসছে বলেও মনে করছেন তিনি। মনোবিদ উর্মি চট্টোপাধ্যায়ের মতে, বাইরে বেরোনোর ইচ্ছে কমে যাচ্ছে – নিজেদের মধ্যে গুটিয়ে যাচ্ছে পড়ুয়ারা। একটু উচু ক্লাসের পড়ুয়াদের মধ্যে আবার অন্য চিন্তা। কবে পরীক্ষা হবে, কবে চাকরি পাব – তাদের এই অবসাদ – অনিশ্চয়তা, নিরাপত্তাহীনতা ভুগছে তাঁরা। এই পরিস্থিতিতে বিকাশ ভবনের এই উদ্যোগ পড়ুয়াদের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করবে বলেই মনে করছেন তিনি।
আরও পড়ুন : World Bank Loan for Bengal: রাজ্যের জন্য সুখবর, বাংলাকে প্রায় ১০০০ কোটির ঋণে অনুমোদন বিশ্ব ব্যাঙ্কের