
কলকাতা: দিঘা সফরে গিয়ে দলের অন্দরে আক্রমণের মুখে পড়েছেন দিলীপ ঘোষ। রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার থেকে প্রধান বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী, দু’জনের প্রতিক্রিয়াতেই ধরা পড়েছে অসন্তোষ। কিন্তু দিলীপ ঘোষ দাবি করেছেন, আসলে তাঁর দিঘার জগন্নাথ মন্দিরে যাওয়া, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ আসলে দলের জয়! আর সেই জয়টাই ছিনিয়ে আনতে গিয়েছিলেন তিনি। ঠিক তাঁর কথায় কতটা যুক্তি রয়েছে, তারই ব্যাখ্যা দিলেন সিপিএম নেতা বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য। সঙ্গে এও বললেন, মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে নিমন্ত্রণ করলে, সৌজন্যের খাতিয়ে তিনিও যাবেন। তাঁর মতে রাজনৈতিক স্তরের বিরোধিতা কখনও ব্যক্তিগত স্তরে নিয়ে যাওয়া উচিত নয়। সঙ্গে দিলীপের দাবি স্বার্থকতা প্রসঙ্গে বললেন, আসলে দিলীপ ঘোষ কোনওভাবেই আরএসএসের বিধিনিষেধের বাইরে গিয়ে কিছু করেননি। দলের আজ যাঁরা তাঁর বিরোধিতা করছেন, দুদিন পর তাঁরাও তাঁকে সমর্থন করবেন।
দিঘার জগন্নাথ মন্দির প্রতিষ্ঠা সম্পর্কে প্রবীণ রাজনীতিবিদ বিকাশের বক্তব্য, ”
আরএসএসের সমস্ত কর্মসূতি রূপায়িত হচ্ছে বাংলায়। আরও একধাপ এগিয়ে করা হয়েছে। সরকারি টাকায় নির্মীত হল মন্দির। সম্পূর্ণরূপে সংবিধানের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা। কিন্তু এটাও আরএসএস চায়। যখন মন্দিরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন হল, তখন সেই অনুষ্ঠানে ছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। আজ তিনি বিজেপির নেতা। উদ্বোধনের দিন সেখানে দিলীপবাবু গিয়েছেন, তিনি আরএসএসের সৈনিক। এটা কি মনে করেন, দিলীপবাবু আরএসএসের বিধিনিষেধের বাইরে গিয়ে এটা করেছেন? যাঁরা বিশ্বাস করেন, তাঁরা ললিপপ খেতে পারেন। এটা সম্পূর্ণ আরএসএসের পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হচ্ছে।”
TV9 বাংলার এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারে এসে ঠিক এটাই দাবি করেন দিলীপ ঘোষ। তিনি বলেছিলেন, “আজকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও মন্দির পলিটিক্সে আসতে হচ্ছে। জয়টা কার? এত বড় জয় বিজেপির। দলের এত বড় জয় হল, দিলীপ ঘোষ দূরে থাকবেন? জয়টা ছিনিয়ে নিতে আমি গিয়েছিলাম, আর ছিনিয়ে এনেছি।”
দিলীপের জগন্নাথ মন্দিরে যাওয়ার বিরোধিতা করেছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার, শুভেন্দু অধিকারী থেকে শুরু করে কৌস্তভ বাগচীরাও। তাঁদের প্রসঙ্গে বিকাশ বলেন, “যাঁরা আজকে বিজেপির মধ্যে দিলীপবাবুর বিরোধিতা করছেন, তাঁরা এটা করছেন, বিরোধী পরিসরটাকে আরও ঘোলাটে করে দিতে। আপনি লিখে রাখুন, দুদিন বাদে তাঁরাও এটাকে সমর্থন করবেন। যখনই নাগপুর থেকে একটা ফোন আসবে, তখনই দেখবেন তাঁরা পিছিয়ে গিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করা কোনও অন্যায় নয়। আমরা একটা সমাজে বাস করি। আমাদের বিরোধটা রাজনৈতিক, ব্যক্তিগত নয়।”
দুই বিরোধী চিন্তাভাবনার সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিত, সেই সূত্রে তিনি দলেরই প্রবীণ নেতাদের প্রসঙ্গ তুলে আনেন। বিকাশ বলেন, “জ্যোতিবাবু-বিধান রায়ের সম্পর্ক নিয়ে অনেক গল্প মানুষ শুনেছে। প্রমোদ দাশগুপ্তর স্মরণসভায় প্রকাশ্যে প্রফুল্ল সেন যে কথা বলেছিলেন, তার থেকে আমাদের শিক্ষা নেওয়া উচিত। তিনি বলেছিলেন, প্রমোদ রোজ সন্ধ্যায় আমাকে ফোন করত। খোঁজ করত, আমার স্বাস্থ্য নিয়ে জিজ্ঞাসা করতেন। প্রমোদ তো সারাদিন আমাকে কত গালাগালি করেছেন। প্রমোদ চুরুট খেত, আমি ওকে বলতাম, এক কোয়া রসুন খাও, শরীর ভাল থাকবে। এক কোয়া রসুনের ব্যবস্থাও আমি করে দিয়েছিলাম। প্রমোদ একটা কোর্ট পরেছিলেন, আমি তাঁকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, কোথায় পেলে, দুদিন পর একটা কোর্ট নিয়ে এসে আমাকে পরিয়ে পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে গেলেন।” তাঁর প্রশ্ন, “ব্যক্তিগত সম্পর্ক কেন চিড় খাবে? একটা বাড়িতে একজন ছেলে কট্টর বামপন্থী, আরেক ছেলে হয়তো দক্ষিণপন্থায় বিশ্বাসী। তাহলে কি ভাই-ভাইয়ে রোজ মারামারি করবে? তাই যাঁরা মনে করেন, রাজনৈতিক বিরোধিতা মানে, ব্যক্তিস্তরে বিরোধিতা, তাঁরা সভ্যতা বিরোধী।”
তাহলে প্রশ্ন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যদি তাঁকে আমন্ত্রণ জানান, তিনি কি যাবেন? বিকাশবাবুর সোজাসাপটা উত্তর, ‘নিশ্চয়ই যাব।’ চাকরিহারা নিয়ে এই নিয়ে একাধিকবাবুর মমতাকে বিকাশবাবুর বিষোদগার করতে দেখা গিয়েছে। সে প্রসঙ্গেই বিকাশরঞ্জন বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তো আমাকে রাজনৈতিক স্তরে গালাগালি করছেন, আমি তো তাই চাই। রাজনৈতিক স্তরে বিরোধিতা প্রকাশ্যে করো, গোপনে ছুরি মেরে নয়। আমি তাতে বিচলিত নই। এরপর মমতার সঙ্গে যদি আমার পারিবারিক কোনও অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানান, আমি যাব না? সৌজন্যবোধেই যাব। তাহলে একজন বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতার মৃত্যু হলে, যাই কেন? সারাদিন গালাগালি করেছি, মৃত্যুর পর যাব না?” তাঁর কথায়, “একটা ধারা তৈরি করা হচ্ছে, যে রাজনৈতিক বিরোধিতাকে ব্যক্তি বিরোধিতায় নিয়ে যাও।”
দিলীপের পাশে বিকাশ। দিলীপ বাবু কোনও অন্যায় করেননি। মুখ্যমন্ত্রী এক্ষুনি ডাকলে আমিও যাব দেখা করতে। সৌজন্য অবশ্যই থাকবে।