কলকাতা: রাজ্যে ভোট পরবর্তী হিংসা মামলায় (Post Poll Violence) ২১ টি ধর্ষণের মামলা ফিরিয়ে দিয়েছে সিবিআই। সিবিআইয়ের (CBI) তরফে বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়েছে, তাদের কাছে নির্দেশ ছিল, খুন, ধর্ষণ ও ধর্ষণের চেষ্টা সংক্রান্ত মামলার তদন্ত করতে হবে। যে সব মামলার ক্ষেত্রে সেই শর্ত পূরণ হয়নি, সেই মামলা তারা রাজ্য পুলিশ বা বিশেষ তদন্তকারী দলের হাতে তুলে দিয়েছে। এ বার, ভোট পরবর্তী হিংসা তদন্তে সংবাদমাধ্যমের পাশাপাশি রাজ্য সরকারকেও নিশানা করলেন বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ (Dilip Ghosh)।
দিলীপের পর্যবেক্ষণ
টুইটারে একটি ভিডিয়ো শেয়ার করে দিলীপ বলেন, “রাজ্যে ভোটের পর যেভাবে সন্ত্রাস হয়েছে সেই তথ্য লুকিয়ে রাখছে সরকার। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বাঁচাতে কিছু পা-ধরা মিডিয়া হামলে পড়ে সেই খবর প্রচার করছে। সিবিআই তদন্তভার গ্রহণের পর একের পর এক এফআইআর করেছে। প্রায় ৩৫ টা এফআইআর। যেভাবে রাজ্যে মানুষের ঘর লুঠ হয়েছে, সম্পদ লুঠ হয়েছে, ইজ্জত লুঠ হয়েছে, তারপর কী করে এই সিবিআই ধর্ষণের মামলা ফিরিয়ে দিতে পারে!”
1.1 “….Puppet media of TMC are spreading false news regarding progress of investigation by CBI on Post Poll violence…. pic.twitter.com/rjSvWYkjJk
— Dilip Ghosh (@DilipGhoshBJP) January 6, 2022
1.2 …..I appeal to the citizens of West Bengal to be aware of what is happening around you and truth will prevail…” pic.twitter.com/2x3dSHvGU2
— Dilip Ghosh (@DilipGhoshBJP) January 6, 2022
প্রবীণ বিজেপি নেতার আরও সংযোজন, “ভোট পরবর্তী হিংসা তদন্তের তথ্য লুকোনো হচ্ছে। মানুষ তো ভয়ে প্রথমে অভিযোগই জানায়নি। কতজন এখনও ঘর ছাড়া। ফিরলেই অত্যাচারের মুখে পড়তে হবে। পুলিশের কাছে গেলে আরও একপ্রস্ত অত্যাচার! সত্যি তো সামনে আসবেই। পা-ধরা মিডিয়াদের বলছি, এভাবে বেশিদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বাঁচানো সম্ভব নয়।”
কী জানিয়েছে সিবিআই?
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার সিবিআই-এর তরফ থেকে বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়েছে যে, ২১টি ধর্ষণের ক্ষেত্রে কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি বলে যে তথ্য প্রকাশিত হয়েছে, তা ভুল। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা বিবৃতিতে উল্লেখ করেছে, তাদের কাছে নির্দেশ ছিল, খুন, ধর্ষণ ও ধর্ষণের চেষ্টা সংক্রান্ত মামলার তদন্ত করতে হবে। যে সব মামলার ক্ষেত্রে সেই শর্ত পূরণ হয়নি, সেই মামলা তারা রাজ্য পুলিশ বা বিশেষ তদন্তকারী দলের হাতে তুলে দিয়েছে।
আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে, রাজ্য পুলিশের নেওয়া ৬৪ টি মামলার মধ্যে ৩৯ টি মামলার তদন্ত শুরু করেছে সিবিআই। শুধু খুন এবং ধর্ষণের ঘটনার ক্ষেত্রে তদন্তের নির্দেশ সিবিআই-কে দিয়েছিল হাইকোর্ট। তাই এই জাতীয় কিছু না হওয়ায় ২১ টি মামলা ফিরিয়ে দিয়েছে বা রাজ্য পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে সিবিআই। সোমবার শুনানির পর যে রিপোর্ট সামনে এসেছে, তাতে ভুল ব্যাখ্যা করা হচ্ছে বলে দাবি সিবিআই-এর।
জানা গিয়েছে, কেন্দ্রীয় মানবাধিকার কমিশন বা এনএইচআরসি (NHRC)-এর দাখিল করা রিপোর্টে এই অভিযোগগুলি ছিল। সেখানে বলা হয়েছিল ২১টি যৌন হেনস্তার অভিযোগের কথা। কিন্তু সিবিআই সেগুলির তদন্তভার রাজ্য পুলিশের হাতে দিয়ে দিয়েছে।
সোমবারের শুনানি
সোমবার ভোট পরবর্তী হিংসা মামলার শুনানি ছিল কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তবের ডিভিশন বেঞ্চে। এদিন সিবিআইয়ের তরফে একটি রিপোর্ট জমা দেওয়া হয়। সেখানে বলা হয়েছে, এই মামলায় ৬৪টি ধর্ষণ, শ্লীলতাহানির অভিযোগ রয়েছে তার মধ্যে ২১টির ক্ষেত্রে সাধারণ মামলা হিসেবে সিট তদন্ত করবে। হাইকোর্টে এএসজি এই তথ্য তুলে ধরেন সোমবার।
সোমবার মুখবন্ধ খামে রিপোর্ট জমা দেয় সিটও। ৬৮৯টি মামলার মধ্যে ১০টি মামলা বাদ দিয়ে রিপোর্ট জমা দেওয়া হয়েছে। বাকি দশটির রিপোর্ট জমা দেওয়া হবে আগামী এক মাসের মধ্যে। একইসঙ্গে ১০টি মামলার তদন্তের অগ্রগতির রিপোর্ট জমা পড়েছে। বাকি ৩৮টির তদন্ত চলছে। সিটের পক্ষ থেকে ৫৭৩টি কেসের রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে। সিটকে আগামী শুনানির দিন বাকি কেসের তদন্ত রিপোর্ট দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ২৪ জানুয়ারি ফের এই মামলার শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে।
ভোট পরবর্তী হিংসার ঘটনা নিয়ে হাইকোর্টে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার পাতার রিপোর্ট দিয়েছিল জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। সেখানে অসংখ্য অভিযোগ তোলা হয়। “রাজ্যে আইনের শাসন নেই। শাসকের ইচ্ছাই এখানে আইন”, এমনও রিপোর্টে দাবি করেছিল কেন্দ্রীয় মানবাধিকার কমিশন।
আরও পড়ুন: পঞ্জাবে প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা বিভ্রাট, রাজ্যপালের ‘দুয়ারে’ বঙ্গ বিজেপি!