কলকাতা: হাঁসখালি গণধর্ষণকাণ্ডে তথ্য অনুসন্ধান কমিটি গঠন করল বিজেপি। পাঁচ সদস্যের তথ্য অনুসন্ধান কমিটি তৈরি হয়েছে বলে সূত্রের খবর। কমিটিতে রয়েছেন উত্তর প্রদেশের সাংসদ রেখা ভর্মা, উত্তরপ্রদেশের মন্ত্রী বেবি রানি মৌরিয়া, তামিলনাড়ুর বিধায়ক ভানাতি শ্রীনিবাসন, মহারাষ্ট্রের প্রতিনিধি খুসবু সুন্দর। তাঁরা গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন, তারপর রিপোর্ট জমা দেবেন বিজেপির সর্ব ভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডাকে। উল্লেখ্য, বিজেপি যখনই এই ধরনের কমিটি গঠন করে, তাতে পৃথক রাজ্যের প্রতিনিধিরাই থাকেন। যে রাজ্যে ঘটনা ঘটে, সেই রাজ্যের একজন জনপ্রতিনিধি থাকেন। বাংলায় এক্ষেত্রে প্রতিনিধিত্ব করবেন বিধায়ক শ্রীরূপা চৌধুরী। রাজনৈতিক মহল মনে করছে, এই কমিটিতে যেহেতু উত্তর প্রদেশের দুজন প্রতিনিধি রয়েছেন, সেটি একটি বিশেষ বার্তাবহক। কোথাও হাঁসখালির এই ঘটনা অনেকটা হাথরসের মতোই বলে মনে করিয়ে দিতে চাইছেন জেপি নাড্ডা, রাজ্যের শাসকদলকে দিতে চাইছেন বিশেষ বার্তা। অন্তত তেমনটাই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
এ প্রসঙ্গে তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, “একটি মর্মান্তিক মৃত্যু, কিন্তু এর সঙ্গে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই। সেটা নিয়ে অত্যন্ত কুরুচিকর রাজনীতি করছে বিজেপি। তাদের কি সিবিআই-এর ওপরেও আস্থা নেই?হাইকোর্ট তো এই ঘটনায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। তারপরেও বিজেপি-র এই ধরনের সস্তা, কুরুচিকর নাটক করার মানে কি?যাদের রাজ্যে হাথরস হয়, উন্নাও হয়, তাদের রাজ্য থেকেই প্রতিনিধি। আমাদের রাজ্যে তো মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে পুলিশ ব্যবস্থা নেয়। সঙ্গে সঙ্গে গ্রেফতার হয়। উন্নাওতে তো নির্যাতিতার আত্মীয়দেরই খুন করে ফেলা হয়।”
জেলা পুলিশের তরফ থেকে এফআইআর কপি সংগ্রহ করবে সিবিআই তদন্তকারীরা। হাঁসখালি গণধর্ষণকাণ্ডে রাজ্য পুলিশের ওপর আস্থা ছিল না বলে হাইকোর্টের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন সুস্মিতা সাহা-সহ কয়েকজন মহিলা আইনজীবী। প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছিলেন। মঙ্গলবারই ছিল এই মামলার শুনানি। গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখার পর, প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব ও রাজর্ষি ভরদ্বাজের ডিভিশন বেঞ্চ এই ঘটনায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেন।
হাঁসখালি ঘটনায় ইতিমধ্যে তদন্ত শুরু করেছে রাজ্য পুলিশ। মূল অভিযুক্ত অর্থাৎ প্রভাবশালী তৃণমূল নেতার ছেলেকে গত রবিবারই গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সোমবার গ্রেফতার করা হয় আরও এক জনকে। বেশ কয়েকজনকে আটকও করা হয়েছে। এই ঘটনায় এলাকার এক হাঁতুড়ে ডাক্তার ও শ্মশান কর্তৃপক্ষের ভূমিকা প্রশ্নের মুখে।
সূত্রের খবর, এরই মধ্যে বিজেপির তদন্ত কমিটি হাঁসখালিতে যাবে। সেখানে নির্যাতিতার পরিবারের সঙ্গে দেখা করবেন তাঁরা। এলাকাবাসীদের সঙ্গেও কথা বলবেন। বগটুইকাণ্ডেও এরকম তথ্য অনুসন্ধান কমিটি গঠন করেছিল বিজেপি। কমিটিতে ছিলেন ভারতী ঘোষ-সহ চার জন অবসরপ্রাপ্ত আইপিএস। সেই কমিটির সদস্যরা যেদিন বগটুই যাচ্ছিলেন, সেদিন রাস্তায় খারাপ হয়ে যাওয়া লরির পিছনে আটকে গিয়েছিল তাঁদের গাড়ি। দেরিতে হলেও ঘটনাস্থলে পৌঁছন তাঁরা। পরে সব বিষয় খতিয়ে দেখার পর তাঁরা রিপোর্ট জমা দেন জেপি নাড্ডার কাছে। তাতে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছিল। এই রিপোর্ট নিয়ে অত্যন্ত ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বীরভূমের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের গ্রেফতারির আশঙ্কাও করেছিলেন তিনি। এক্ষেত্রেও এলাকার প্রভাবশালী তৃণমূল নেতার নাম জড়িয়েছে। বিজেপি তদন্ত কমিটির রিপোর্টে কী উল্লেখ থাকে, সেটাই দেখার।