কলকাতা: পুরভোটে তৃণমূলের বড় জয়ের দিন হাজরাতে বিক্ষোভের মুখে পড়েন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari)। আশুতোষ কলেজের (Ashutosh College) পাশে শুভেন্দু অধিকারীকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখান তৃণমূল ছাত্র পরিষদের (Trinamool Chhatra Parishad) সমর্থক বলে পরিচিত পড়ুয়াদের একাংশ। বিরোধী দলনেতার নিরাপত্তারক্ষীরা কোনওভাবে শুভেন্দু অধিকারীকে (Suvendu Adhikari) উদ্ধার করে গাড়িতে তুলে নিয়ে চলে যান। কিন্তু, সেই বিক্ষোভে কার্যত দেখা যায়, বিরোধী দলনেতা তাঁর মেজাজ হারিয়েছেন। এমনকী, কর্তব্যরত এক পুলিশ কর্মীর উপরে তাঁকে ‘চোটপাট’ করতেও দেখা যায়। ঘটনাস্থলে উপস্থিত প্রত্যক্ষদর্শী ও বিক্ষোভকারীদের একাংশ দাবি করেছেন ওই অধিকর্তাকে ধাক্কাও মেরেছেন বিজেপি বিধায়ক। তারপরেই গাড়িতে উঠে গিয়েছেন। ঘটনাকে কেন্দ্র করে সোমবার ব্যাপক উত্তেজনা ছড়ায়। যদিও, বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি (Dilip Ghosh) দাবি করেছেন এমন হতেই পারে। অস্বাভাবিক নয়।
বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতির কথায়, “শুভেন্দু মেজাজ হারাতেই পারেন। আমি তাতে কিছু মনে করি না। কারণ, যেখানেই ওঁ যাচ্ছেন সেখানেই ওঁকে কালো পতাকা দেখানো হচ্ছে, বিক্ষোভ করা হচ্ছে। রাস্তা আটকে দেওয়া হচ্ছে। বারবার এরকম হলে কী করে কেউ মাথা ঠিক রাখবেন। ওঁর মেজাজ হারানোই স্বাভাবিক। তাই যা হয়েছে ঠিকই হয়েছে।”
সোমবার ঠিক কী হয়েছিল? ওইদিন, আশুতোষ কলেজের পাশেই পুলওয়ামায় শহিদ জওয়ানদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এক কর্মসূচির আয়োজন করেছিল একটি সংগঠন। সেখানেই আমন্ত্রিত ছিলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। ওই অনুষ্ঠানে শহিদ জওয়ানদের শ্রদ্ধা জানাতে আসলে শুভেন্দু অধিকারীকে ঘিরে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সমর্থক পড়ুয়ারা তুমুল বিক্ষোভ শুরু করে। তারা বিভিন্ন ভাষায় শুভেন্দু অধিকারীকে কটূক্তি করতে থাকে বলেও অভিযোগ ওঠে।
বিরোধী দলনেতা সেখানে পৌঁছাতেই তাঁর আপ্তসহায়ক এবং নিরাপত্তা রক্ষীদের সঙ্গে পড়ুয়াদের একপ্রস্ত ধস্তাধস্তির পরিবেশ তৈরি হয়। সেই সঙ্গে চলতে থাকে গো ব্যাক স্লোগান। তারপরই কোনওরকমে শুভেন্দুকে সেখান থেকে উদ্ধার করে নিয়ে গাড়িতে তুলে নিয়ে যান তাঁর নিরাপত্তারক্ষীরা। শুভেন্দু গাড়িতে ওঠার সময়েও কটূক্তি করতে থাকে পড়ুয়াদের একাংশ। আর তাতে বেজায় চটে যান বিরোধী দলনেতা। তখনই পুলিশকর্মীকে ‘চোটপাট’ করার বিষয়টি সামনে আসে।
পরে, এই ঘটনায় টুইটও করেন নন্দীগ্রামের অধুনা বিজেপি বিধায়ক। যদিও, তৃণমূল ছাত্র পরিষদের এক নেতার কথায়, “ওঁ কীধরনের কথা বলেন, কী আচরণ করেন তা সবাই দেখছে জানে। এটা যদি ওঁর শিক্ষার পরিচয় হয়, তাহলে কিছু বলার নেই। আমরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে ওঁর অশালীন বাক্যবন্ধ প্রয়োগ করা ও অসম্মান করার বিরুদ্ধেই প্রতিবাদ শুরু করি।”
বস্তুত, এই প্রথম নয় , কিছুদিন আগেই তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক কুণাল ঘোষ, তৃণমূল কাউন্সিলর সব্যসাচী দত্ত বলেছিলেন, শুভেন্দু বিজেপিতে থাকতে পারছেন না, তৃণমূলে ফিরতে চান। তা নিয়ে খোদ শুভেন্দু টুইট করে সে জল্পনা উড়িয়ে দেন। তবে অধিকারী পুত্র তৃণমূল ত্যাগের পর থেকেই দেখা গিয়েছে, মেদিনীপুরে তাঁর নিজ গড়ে হোক বা কলকাতায়, যেখানেই তিনি গিয়েছেন ‘বিক্ষোভের’ সম্মুখীন হয়েছেন। অথবা, তাঁর মিছিল আটকে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
কিছুদিন আগে বিকাশভবনে তাঁর যাত্রাকে কেন্দ্র করে ব্যাপক উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। নেতাইয়ে যেতে গিয়েও আদালতের অনুমতি সত্ত্বেও তাঁকে বাধা দেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ ওঠে। পুরভোটের আগে আগেই বিধাননগরে বিজেপির দলীয় কার্যালয় ভাঙচুর করার প্রতিবাদে থানা ঘেরাও অভিযানে গিয়ে ‘বিক্ষোভের’ সম্মুখীন হন শুভেন্দু। এমনকী, সিঙ্গুরে যেতেও তাঁকে বাধা দেওয়া হয় বলে অভিযোগ করেন খোদ অধিকারী পুত্র। তাঁর নিজ গড়ে কাঁথিতে আক্রান্ত বিজেপি কর্মীকে দেখতে গিয়ে ‘তৃণমূলী বিক্ষোভের’ শিকার হয়েছিলেন নন্দীগ্রামের বিধায়ক। নতুন করে আশুতোষ কলেজে বিক্ষোভের ঘটনায় যে আবার একটি সংঘাতের সৃষ্টি হল তা মনে করছেন সংশ্লিষ্ট মহলের একাংশ।
আরও পড়ুন: Primary School Reopening: খুলছে ছোটদের স্কুল, প্রধান শিক্ষকদের জন্য থাকছে বিশেষ নির্দেশ