কলকাতা: সংগঠনের বৈঠক। রাজ্যের সমস্ত নেতাদের ডাকা হয়েছে সেই বৈঠকে। মঙ্গলবার সকাল থেকে হেস্টিংসে বিজেপির কার্যালয়ে দিলীপ ঘোষ, জয়প্রকাশ মজুমদার, সৌমিত্র খাঁ, সব্যসাচী দত্তরা হাজির হয়েছেন। কিন্তু দেখা যায়নি মুকুল রায়কে। এ নিয়ে জল ঘোলা চলছে সকাল থেকেই। এরইমধ্যে বিস্ফোরক দাবি করলেন ‘রায়বাবু’। এ বৈঠক নিয়ে তিনি কিছু জানেনই না, দাবি করলেন সর্বসমক্ষে।
এদিনের সাংগঠনিক বৈঠক নিয়ে মুকুল রায় বলেন, “কোন বৈঠক? আমাকে কেউ বৈঠকের ব্যাপারে জানায়ওনি। আমি এ সবের মধ্যে নেইও। আমি এখন নিজের যন্ত্রণায় জ্বলছি।” রাজনৈতিক মহলের মতে, মুকুল রায়ের মত বর্ষীয়ান সাংগঠনিক নেতা আলটপকা কথা বলার মানুষ নন। সে রেকর্ড তাঁর নেই। বরং ঠিক উল্টোটা। মুকুল রায় কোনও কথা বললে, তার যে গূঢ় অর্থ থাকে, সে প্রমাণ মিলেছে বহু ক্ষেত্রে।
ভোটের ফল প্রকাশের পর প্রথম দিন বিধানসভায় শপথ নিতে গিয়ে দলের একটি বিধায়কের সঙ্গেও কৃষ্ণনগর উত্তরের বিধায়ক মুকুল রায়কে কথা বলতে দেখা যায়নি। বরং অল্প সময়ের জন্য হলেও তৃণমূল নেতা সুব্রত বক্সী ও সে দলের এক দু’ জনের সঙ্গে কুশল বিনিময় করতে দেখা যায় মুকুলকে। সেদিন বিধানসভার বাইরে দাঁড়িয়ে মুকুল বলেছিলেন, তাঁর যা বলার, সময় মত বলবেন। সেদিন থেকেই জল্পনা, বিজেপির সঙ্গে তবে কি মুকুলের দূরত্ব বাড়ছে?
আরও পড়ুন: ভোট পরবর্তী হিংসা নিয়ে শাহকে অভিযোগ শুভেন্দুর, বাংলা ‘সামলাতে’ আশীর্বাদ চাইলেন নন্দীগ্রামের বিধায়ক
সে জল্পনা আরও খানিক উস্কে দেয় মুকুলের অসুস্থ স্ত্রীকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাসপাতালে দেখতে যাওয়া। মুকুল প্রকাশ্যে কিছু না বললেও ঘনিষ্ঠ মহলে সন্তোষ প্রকাশ করেন অভিষেকের এই সৌজন্যে। মুকুল-পুত্র শুভ্রাংশু তো আরও খানিক বেড়ে পঞ্চমুখ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেকের প্রশংসায়। এরপর থেকে মুকুল-শুভ্রাংশুর ‘ঘর ওয়াপসি’ নিয়ে নানা মহলে গুঞ্জন শুরু হয়। তৃণমূলের দিকেই ‘বাপ-ব্যাটা’ ঝুঁকছেন বলে জল্পনা জোরাল। এরইমধ্যে বিজেপির সাংগঠনিক বৈঠকে মঙ্গলবার গরহাজির থাকতে দেখা যায় মুকুল রায়কে।
সূত্রের খবর, বিতর্ক ঢাকতে দলেরই কেউ কেউ বলছিলেন, মুকুল বোধহয় ভার্চুয়ালি বৈঠকে থাকবেন। কিন্তু বৈঠক শেষ জানা গেল এদিন কোথাও কোনও আলোচনায় মুকুল রায় ছিলেন না। এরপরই মুকুল রায়ের বিস্ফোরক দাবি সামনে আসে। মুকুল স্পষ্ট জানান, তাঁকে বৈঠক নিয়ে কেউ কিছু জানায়নি। একইসঙ্গে মুকুল বলেন, এসবের মধ্যে তিনি নেই। কোন সবের মধ্যে, যদিও তা স্পষ্ট করেননি দুঁদে এই রাজনীতিক। তবে শুনিয়ে রেখেছেন নিজের ‘জ্বালা’র কথা। তিনি নাকি আজকাল ‘যন্ত্রণায়’ জ্বলছেন। মুকুল রায়ের স্ত্রী অসুস্থ। চিকিৎসাধীন। ব্যক্তিগত জীবনে স্বভাবতই তিনি অস্থির হয়ে আছেন। তবে শুধু সেই যন্ত্রণা, নাকি রাজনৈতিক ভাবে জর্জরিত তিনি, তা খোলসা করেননি তৃণমূলের এক সময়ের চাণক্য।