কলকাতা: পদ্মভূষণ পুরস্কার প্রত্যাখান করা নিয়ে দলের মতের সঙ্গে তাঁর মতের কোনও ফারাক নেই। তাঁকে আগে জানানো হলেও তিনি পদ্মভূষণ প্রত্যাখান করতেন। এমনটাই জানিয়েছেন রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী, সিপিএমের বর্ষীয়ান নেতা বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। সিপিএমের মুখপত্র গণশক্তিতে বুদ্ধদেববাবুর এই বক্তব্য প্রকাশিতও হয়েছে।মুখপত্রে বলা হয়েছে, তাঁকে পদ্মভূষণ পুরস্কার দেওয়া হবে তা জানা মাত্রই তিনি বিবৃতি দিয়ে পুরস্কার প্রত্যাখানের কথা জানিয়ে দেন। গণশক্তিতে বুদ্ধদেববাবুকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, ‘আগে জানানো হয়েছে কি হয়নি সেটা বিষয় নয়। আমাকে আগে জানানো হলেও আমি এই পুরস্কার প্রত্যাখান করতাম।’
পদ্ম পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করে হইচই ফেলে দিয়েছেন শয্যাশায়ী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। জাতীয় রাজনীতি এখন তোলপাড়। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এখনও অসুস্থ, অশক্ত। গত বিধানসভা নির্বাচনে ভোটও দিতে যাননি তিনি। জাতীয় রাজনীতিতে তিনিই এখন ঝড় বইয়ে দিলেন। উত্তেজনার উপলক্ষ্য পদ্ম সম্মান।
২৫ জানুয়ারি পদ্ম প্রাপকদের তালিকায় নাম প্রকাশ হয় বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের। বাবরি ধ্বংসের পর বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য লিখেছিলেন তাঁর বই ‘দুঃসময়’। বিজেপির ঘোর সমালোচক তিনি। সেই বিজেপি সরকার তাঁকে পদ্ম সম্মান দিচ্ছে। এই ঘোষণায় জাতীয় রাজনীতিতে হইচই পড়ে যায়। তবে ২৫ জানুয়ারি রাতেই বুদ্ধবাবু বিবৃতি দিয়ে জানান, “পদ্ম সম্মান নিয়ে আমি কিছুই জানি না। আমাকে এই নিয়ে কেউ কিছু বলেনি। পদ্মভূষণ দেওয়া হলে, তা প্রত্যাখ্যান করছি।”
বিমান বসু তারপরই সাংবাদিকদের সামনে বলেছিলেন, “এই প্রত্যাখ্যান করার জন্য আমি তাঁকে অভিনন্দন জানাই।” প্রসঙ্গত, অতীতে জ্যোতি বসুকেও ভারত রত্ন সম্মান দেওয়ার প্রস্তাব হয়। কিন্তু তা শোনা মাত্রই তিনি প্রত্যাখ্যান করেন। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের নাম তালিক পর্যন্ত পৌঁছাল কীভাবে, তার সম্মতি না নিয়েই কি তালিকা প্রকাশ? উঠছে একাধিক প্রশ্ন।
কেন্দ্রীয় সূত্র দাবি করেছে, ২৫ জানুয়ারি বিকালে পাম অ্যাভিনিউয়ের বাড়িতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের এক আধিকারিক ফোন করেন। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের স্ত্রীর সঙ্গে তাঁর কথা হয়। মীরা ভট্টাচার্য নেতিবাচক কিছু বলেননি। এরপর সেই আধিকারিক অভিনন্দন জানিয়ে ফোন রেখে দেন। দিলীপ ঘোষ বুধবারই এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন, “কমিউনিস্টরা চিরদিন দেশের সংস্কৃতিকে অপমান করেছেন।”
এক্ষেত্রে বিরোধীদের একাংশ প্রশ্ন তুলেছেন। বিজেপির সর্ব ভারতীয় সভাপতি দিলীপ ঘোষ আঙুল তুলেছেন কমিউনিস্টদের দিকে। তিনি বলেন, “কমিউনিস্টরা কাঁকড়ার মতো। কাউকেই ওপরে উঠতে দেয়নি। জ্যোতি বসুকে প্রধানমন্ত্রী হতে দেয়নি। বুদ্ধবাবুকে পদ্মশ্রী নিতে দিল না।”
এই বিতর্কে জল ঢালতেই নিজের বক্তব্য পেশ করলেন অশক্ত বুদ্ধবাবু। শুক্রবার সিপিআইএম-এর মুখপত্র গণশক্তি পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে তাঁর বক্তব্য। তিনি বলেছেন, “পদ্মভূষণ সম্মান সম্পর্কে আগে জানলেও আমি প্রত্যাখ্যানই করতাম।”