
কলকাতা: AIDSO নেত্রী সুশ্রীতা সোরেনের মামলায় আটক থেকে মুক্তি পর্যন্ত প্রতি মুহূর্তের তথ্য তলব করেছিল কলকাতা হাইকোর্ট। পুলিশ লকআপের সিসিটিভি ফুটেজ জমা হল। বৃহস্পতিবার হাইকোর্টে রাজ্য জানায়, ঘটনার দিন ১৪ ঘণ্টা ১ মিনিট থানায় ছিলেন সুশ্রীতা সোরেন। মোট ৮৬ মিনিট সিসিটিভিতে দেখা যাচ্ছে না থানার এমন অংশে ছিলেন সুশ্রীতা। যার মধ্যে ২৪ মিনিট ওয়াশরুমে ছিলেন। প্রাথমিক পর্যায়ে ৩৭ মিনিট নিরীক্ষণ হয়েছে। ৮ মিনিট ওসির ঘরে ছিলেন, যেখানে তাঁর নেতা ভবানী চক্রবর্তী ছিলেন। বাকি ১৩ মিনিট এবং ৪ মিনিট অন্য ঘরে ছিলেন বলে আদালতে জানাল রাজ্য।
রাজ্যের তরফ থেকে সওয়াল করা হয়, ওসির ঘরে যে ধরনের অত্যাচারের অভিযোগ করা হচ্ছে সেটা ৮ মিনিটে করা সম্ভব না। থানার সিসিটিভি ফুটেজের সময় অনুযায়ী সকাল ১০:৪০ মিনিটে সুশ্রীতাকে থানায় আনা হয় এবং রাত ১:৪১ মিনিটে ছেড়ে দেওয়া হয়। যদি সিসিটিভির ঘড়ি এবং প্রকৃত সময়ের মধ্যে কিছুটা পার্থক্য আছে বলেও আদালতে জানায় রাজ্য।
এদিন আদালতের তরফ থেকে সওয়াল করা হয়, “যে অভিযোগ করা হয়েছে সেটা গ্রহণযোগ্য নয়।” এক্ষেত্রে রাজ্যের আরও যুক্তি, “যদি এধরনের কোনও ঘটনা ঘটে থাকত, তাহলে থানায় উপস্থিত, তাঁদের নেতা কাউকে তো জানাতেন। তিনি তো কাউকেই জানাননি।”
মামলাকারীর তরফ থেকে পাল্টা প্রশ্ন করা হয়, “৮৬ মিনিট কেন সিসিটিভি -র বাইরে ছিলেন সুশ্রীতা? ওয়াশরুমের সময় বাদ দিলে বাকি সময় সিসিটিভি-তে দেখা যাচ্ছে না, সেই এলাকায় কেন ছিলেন সুশ্রীতা ? ওসির ঘরে কেন সিসিটিভি নেই ?” মামলাকারীর আরও প্রশ্ন, “ওসির ঘর কি মারার ঘর?”
রাজ্যের তরফে দাবি করা হয়, “অভিযোগ তুললে প্রমাণ করতেই হবে, নাহলে উপযুক্ত জরিমানা করতে হবে।” মামলাকারীর আইনজীবী বলেন, “কেমন করে লাঠি মারতে হয় সেটা জানে না পুলিশ ? লাথির কথা না হয় ছেড়েই দিলাম।” মামলাকারীর পাল্টা প্রশ্ন, “আমাদেরকে মারা হলো। আবার আমাদেরই প্রমাণ করতে বলা হচ্ছে। আমরা কী প্রমাণ করব ?”
মামলাকারীর আইনজীবীর তরফে আরও প্রশ্ন করা হয়, “গরম মোম যে আমাদের গায়ে ঢালা হয়নি, তার প্রমাণ কোথায়? রাজ্য বলছে যে পুলিশ আমাদের পোশাক দিয়েছে। কেন ? পোশাক দেওয়ার প্রয়োজন কেন হল ? কারণ, আমাদের পোশাক ছিঁড়ে গেছিল। SC – ST আইনও বা কেন প্রয়োগ করা হল না ?” ২১ এপ্রিল এই মামলার অন্তর্বর্তী নির্দেশ দেবে আদালত।
প্রসঙ্গত, যাদবপুরকাণ্ডের প্রতিবাদে সামিল হওয়ায় AIDSO-র মহিলা সদস্যের ওপর অকথ্য অত্যাচারের অভিযোগ ওঠে। মোমের ছ্যাঁকা থেকে শুরু করে চুল ধরে শূন্যে উঁচু করে পায়ের তলায় মার দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। ভয়ঙ্কর অভিযোগ করেন এআইডিএসও-র নিগৃহীত চার মহিলা কর্মী সমর্থক। সাংবাদিক বৈঠক করে প্রথমে লকআপে পুলিশের নৃশংস অত্যাচারের অভিযোগ সামনে আনেন তাঁরা। এমনকি নিগৃহীতারা রাজ্যের একাধিক মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ঘোরার পরও, তাঁকে চিকিৎসা করে কোনও ইনজুরি রিপোর্ট দেয়নি বলেও অভিযোগ তোলেন তাঁরা। আদালতেও সেই বিষয়টি তুলে ধরেন।