কলকাতা : ১১ বছর আগে ছেলেকে হারিয়েছেন। দুর্ঘটনায় ছেলের মৃত্যুতে বিচার ও ক্ষতিপূরণের দাবিতে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। ছেলের মৃত্যুতে ক্ষতিপূরণ হিসাবে মাকে প্রায় ২০ লক্ষ টাকা দেওয়ার নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট (Calcutta High Court)। শুক্রবার বিচারপতি রবীন্দ্রনাথ সামন্তের একক বেঞ্চের নির্দেশ, একটি বিমা সংস্থাকে ৬ শতাংশ সুদ-সহ ১৯ লাখ ৭৫ হাজার ৭৮৬ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। ক্ষতিপূরণের টাকা পাবেন পুত্রহারা মা সায়রা বানু। চার সপ্তাহের মধ্যে এই নির্দেশ কার্যকর করতে হবে।
কিন্তু কেন এই টাকার অঙ্ক এত?
বিচারপতি সামন্ত এই মামলায় সুপ্রিম কোর্টের বেশ কয়েকটি রায় পর্যবেক্ষণ করেন। সেখান থেকে তাঁর নির্দেশ, ২৬ থেকে ৩০ বছর বয়সী কোনও কর্মরত যুবকের দুর্ঘটনায় মৃত্যু হলে, তাঁর বেতন বাবদ ১৭ গুণ টাকা ক্ষতিপূরণ হিসাবে দেওয়া যায়। এ ক্ষেত্রেও তা দেওয়া হবে। এ ছাড়া ওই যুবকের পরিবারের ভবিষ্যতের কথা ভেবে আয়ের ৫০ শতাংশ টাকা আরও দিতে হবে। ফলে সব মিলিয়ে প্রায় ২০ লাখ টাকার কাছাকাছি ক্ষতিপূরণ পাবেন মা সায়রা।
বছর ঊনত্রিশের শেখ মেহতাব হোসেন একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের কর্মচারী ছিলেন। আয়কর দিয়ে তাঁর মাসিক বেতন ছিল ১৩ হাজার ৬২৬ টাকা। বছরে আয় ১ লাখ ৬৩ হাজার ৫১২ টাকা।
২০১১ সালের ১৫ জুলাই সন্ধ্যাবেলা সিজিআর রোড ধরে পূর্ব থেকে পশ্চিম দিকে বাইকে করে যাচ্ছিলেন শেখ মেহতাব হোসেন। সে সময় পিছন থেকে একটি লরি বেপরোয়া ভাবে এসে তাঁকে ধাক্কা মারে। মাথায় গুরুতর চোট পান মেহতাব। এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। এই ঘটনায় পশ্চিম বন্দর থানায় এফআইআর দায়ের হয়। ছেলে মেহতাবের মৃত্যুতে বিচার এবং ক্ষতিপূরণের দাবিতে আদালতের দ্বারস্থ হন মা সায়রা বানু। মামলায় প্রতিপক্ষ ছিল বিমা সংস্থাটি। তাদের দাবি, দুর্ঘটনার দিন হেলমেট পরে ছিলেন না মেহতাব। সেই কারণে মৃত্যু ঘটতে পারে।
মামলা চলাকালীন স্বামীকেও হারান সায়রা। ২০১৩ সালের ৩১ মে ওই মামলায় আলিপুরের নিম্ন আদালত বিমা সংস্থাটিকে ৯ শতাংশ সুদে ৭ লাখ ৬৯ হাজার ৮১২ টাকা ক্ষতিপূরণের নির্দেশ দেয়। যা মেহতাবের বেতনের আট গুণ ছিল। কিন্তু ওই ক্ষতিপূরণের অঙ্ক কম ছিল বলে দাবি করা হয়। তাই নিম্ন আদালতের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে আসেন মা সায়রা। আজ হাইকোর্ট প্রায় ২০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণের নির্দেশ দিল।