কলকাতা: শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা নিয়ে জট যেন আর কিছুতেই পর্ষদের পিছু ছাড়ছে না। এবার টিচার এলিজিবিলিটি টেস্ট বা টেট (TET)-এর ওএমআর (Optical mark recognition) সিট প্রকাশের নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট। শুক্রবার এক মামলার শুনানি চলাকালীন এই নির্দেশ দেন বিচারপতি অমৃতা সিনহা। দ্রুত এই ওএমআর দেখানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদও জানিয়েছে, আদালতের নির্দেশ মেনে ওএমআর শিট দেখাতে তাদের কোনও সমস্যা নেই। ২০১৪ সালের টেট পরীক্ষা নিয়ে এর আগেও একাধিক মামলা হয়েছে। সেই তালিকায় আরও এক মামলার সংযোজন হল এবার। শান্তনু সিট নামে এক পরীক্ষার্থীর পরীক্ষা পুরোপুরি বাতিল করে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। এরপরই আদালতের দ্বারস্থ হন তিনি। তাঁর বক্তব্য, টেটের ফল নিয়ে সংশয় রয়েছে তাঁর মনে।
শান্তনু সিট আদালতে গিয়ে দাবি করেন, টেটের ওএমআর সিট বা উত্তরপত্র দেখাতে হবে। কিন্তু নিয়ম অনুযায়ী এই ওএমআর সিট দেখানো হয় না। শান্তনুর পাশাপাশি আরও ২৭ জন আদালতে এই একই দাবি করেন। তাঁদের দাবি, ওএমআর সিট দেখালেই পরিষ্কার হয়ে যাবে কে কেমন পরীক্ষা দিয়েছেন।
এই মামলার প্রেক্ষিতেই শুক্রবার বিচারপতি অমৃতা সিনহা নির্দেশ দেন, মামলাকারীদের ওএমআর সিট দিতে হবে। প্রাথমিক পর্ষদকে এই প্রথমবার কোনও মামলার প্রেক্ষিতে ওএমআর সিট দেখানোর নির্দেশ দেওয়া হল। যদিও পর্ষদের ওএমআর দেখাতে কোনও আপত্তি নেই বলেই জানানো হয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি মানিক ভট্টাচার্যের দাবি, স্বচ্ছতার সঙ্গে নিয়োগ হচ্ছে। স্পিড পোস্টের মাধ্যমে যথাযথ আবেদন এলে ওএমআর-এর প্রতিলিপি দিয়ে দেওয়া হবে।
শান্তনু সিট-সহ অন্যান্যদের দাবি, ডিসেম্বর মাসে তাঁদের নথিপত্র খতিয়ে দেখে ইন্টারভিউ নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল হাইকোর্ট। কিন্তু বোর্ড জানায়, তাঁরা লিখিত পরীক্ষাতেই পাশ করেনি। তারপরই টেটের ওএমআর সিট বা উত্তরপত্র দেখানোর দাবি জানিয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু প্রাথমিক পর্ষদের তরফে তাঁদের দাবি খারিজ করে দেওয়া হয়। এরপরই তাঁরা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। নিয়ম অনুযায়ী এই ওএমআর সিট দেখানো হয় না। কিন্তু মামলাকারীদের দাবি, ওএমআর সিটেই প্রমাণিত হবে তাঁরা পরীক্ষায় কত নম্বর পেয়েছেন।
২০১৪ সালের প্রাইমারি টেটে সম্প্রতি ৭৩৮ জনের নামের তালিকা প্রকাশ করে বোর্ড। সেই তালিকা প্রকাশের পরদিনই একটি মামলা দায়ের হয়। ২০১৪ সালে যে টেট পরীক্ষা হয়েছিল, তাতে প্রশ্নভুলের একটা বিতর্ক তৈরি হয়। অনেকে অকৃতকার্য হন। এরপরই কলকাতা হাইকোর্টে যান বেশ কয়েকজন পরীক্ষার্থী। সেই মামলার প্রেক্ষিতে হাইকোর্টের নির্দেশে গত বছর ২০ ডিসেম্বর এই ৭৩৮ জনের চাকরিপ্রার্থীর নামের তালিকা পর্ষদের তরফে প্রকাশ করা হয়। কিন্তু তাতেও ভুল থাকার অভিযোগ ওঠে। যা নিয়ে আদালতে ছোটেন প্রার্থীরা।
শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছিল প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ সভাপতি মানিক ভট্টাচার্যকে। খুব বেশিদিন আগের ঘটনা নয়। ২০১৪ সালের টেট পরীক্ষায় প্রশ্নপত্রে ভুল থাকার জন্য ২০১৮ সালে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি সমাপ্তি চট্টোপাধ্যায় নির্দেশ দিয়েছিলেন, ভুল প্রশ্নের উত্তর যারা দিয়েছেন তাদের পূর্ণাঙ্গ নম্বর দিতে হবে। কিন্তু পর্ষদ তা করেনি। যা আদালত অবমাননার শামিল বলেই মনে করে আদালত। এ নিয়ে মামলাও হয়। পর্ষদ সভাপতিকে নির্দেশ দেওয়া হয়, প্রত্যেক মামলাকারীকে জরিমানা দেবেন তিনি।
আরও পড়ুন: Bankura BJP: ‘কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা ছাড়তে চাই’, চিঠি বাঁকুড়ার দুই বিজেপি বিধায়কের