কলকাতা : রাজ্যের একের পর এক নাবালিকা নির্যাতনের ঘটনায় ইতিমধ্য়েই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা নিয়ে। এরই মধ্যে সম্প্রতি এক গুরুত্বপূর্ণ রায় দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। আদালতে ১৩ বছর বয়সি এক নাবালিকাকে যৌন নির্যাতন সংক্রান্ত এক মামলার শুনানি চলছিল। ওই মামলায় হাইকোর্ট জানিয়েছে, যদি এটি প্রমাণিত হয়ে যায় যে অভিযুক্ত নির্যাতিতার শরীরের নির্দিষ্ট অঙ্গে যৌন অভিপ্রায়ে স্পর্শ করেছিল, তাহলে নাবালিকার উপর যৌন অপরাধের ক্ষেত্রে ১৩ বছরের নির্যাতিতার স্তন বিকশিত হয়েছে কি না, তা গুরুত্বপূর্ণ নয়।
মামলা চলাকালীন অভিযুক্তের পক্ষ থেকে আইনজীবী জানান, যেহেতু সংশ্লিষ্ট মেডিকেল অফিসার নির্যাতিতা কিশোরীর স্তন বিকশিত হয়নি বলে জানিয়েছেন, তাই অভিযুক্তের স্তন স্পর্শ করার প্রশ্নই ওঠে না। কিন্তু অভিযুক্তের আইনজীবীর এই দাবি আদালতে খারিজ করে দেন বিচারপতি বিবেক চৌধুরী। বিচারপতির পর্যবেক্ষণ,”এই মামলায়, নির্যাতিতা মেয়েটি ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে এবং বিচার চলাকালীন স্পষ্ট ভাষায় বলেছে যে অভিযুক্ত তার স্তন স্পর্শ করেছিল এবং তাকে চুম্বন করেছিল। এক্ষেত্রে ১৩ বছর বয়সি একটি মেয়ের স্তন তৈরি হয়েছে কি না, তা একেবারেই গুরুত্বপূর্ণ নয়। পকসো আইনের ৭ ধারায় স্তনের পরিভাষা অনুযায়ী, ১৩ বছর বয়সি এক কিশোরীর শরীরের নির্দিষ্ট অঙ্গকে বোঝানো হবে এবং এক ধারণ করা হবে এবং যদি তাঁর স্তন বিকশিত না হয় শারীরবৃত্তীয় কারণে, তাহলেও একই হবে।”
উল্লেখ্য, এর আগে নিম্ন আদালতে ওই অভিযুক্তকে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪৪৮ ধারা এবং ৩৫৪ ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধের জন্য দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল। সেই সঙ্গে পকসো আইনের ৮ নং ধারাতেও দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল তাকে। ঘটনাটি ২০১৭ সালের। নির্যাতিতা নাবালিকার মা ওই বছরের ৩১ মে পুলিশের কাছে মামলা দায়ের করেছিলেন। মামলা করার সময় নির্যাতিতার বয়স ছিল ১৩।
নির্যাতিতার মায়ের অভিযোগ, অভিযুক্ত রোহিত পাল নামে একটি ব্যক্তি ওই নাবালিকাকে বাড়িতে খেলতে দেখেন। ওই সময় নাবালিকার বাড়িতে কেউ ছিলেন না। সেই সুযোগে অভিযুক্ত ব্যক্তি নির্যাতিতা নাবালিকাকে ঘরের ভিতরে টেনে নিয়ে যায় এবং তার স্তন ও শরীরের অন্যান্য অংশে স্পর্শ করে। এরপর নাবালিকাকে জোর করে চুম্বনও করেছিল বলে অভিযোগ। ঘটনায় নাবালিকা চিৎকার করে এবং অভিযুক্তের খপ্পর থেকে নিজেরে মুক্ত করার জন্য। নির্যাতিতার চিৎকারে ভয় পেয়ে অভিযুক্ত যুবক পালিয়ে যায়।
এই ঘটনায় আদালত আরও জানিয়েছে, কোনও একজন ব্যক্তির যৌন অভিপ্রায় অভিযুক্তর পারিপার্শ্বিক পরিবেশ থেকেও বোঝা যেতে পারে। অভিযুক্তের আচরণ মূল্যায়ণ করে আদালত জানিয়েছে, এই মামলায় নির্যাতিতা মেয়েটি বলছে অভিযুক্ত তাঁর শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ স্পর্শ করেছে, চুম্বনও করেছে। অভিযুক্ত ব্যক্তি মেয়েটিকে বাড়িতে ঢুকে চুম্বন করে যখন তার অভিভাবকরা বাড়িতে ছিলেন না। এতেই বোঝা যায় অভিযুক্তর যৌন অভিপ্রায় ছিল এবং তাকে পকসো আইনের ৮ ধারায় যথাযথভাবে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল (নিম্ন আদালতে)।
আরও পড়ুন : Kolkata Metro: পয়লা বৈশাখের দুপুরে মানি ব্যাগ ভর্তি টাকা নিয়ে মেট্রোয় ঝাঁপ! আংশিক ব্যাহত পরিষেবা