
কলকাতা: কথায় আছে দেরিতে বিচার হওয়া, আদতে বিচার না হওয়ার সমান। অনেক ক্ষেত্রেই বিচার পেতে পেতে দেরি হয়ে যায় অনেক। তারপর নির্দোষ প্রমাণিত হলেও অপরাধীর তকমা ঘোচানো কঠিন হয়ে যায়। ঠিক যেমনটা হয়েছে অপরাজিতার সঙ্গে। ১৩ বছর জেলে কাটানোর পর জানা গেল তিনি নির্দোষ। কিন্তু ততদিনে পাল্টে গিয়েছে সম্পর্কগুলো। দূরে চলে গিয়েছে আপনজনেরাও। আজ যখন তিনি মূলস্রোতে ফিরতে চাইছেন, সেখানেও বাধা। রাজ্য়ের বক্তব্যে বিরক্ত বিচারপতি অমৃতা সিনহা।
২০০০ সালের ঘটনা। খুন হন কলকাতার অভিজাত পরিবারের ছেলে কুণাল বসু। কুণালের মা সেই সময় অভিযোগ করেন, কুণালের বন্ধু ও তাঁর বউমা অপরাজিতার সম্পর্ক ছিল। সেই কারণেই নাকি দু’জনে মিলে খুন করেন কুণালকে!বৃদ্ধার সেই অভিযোগেপ ভিত্তিতেই গ্রেফতার হন অপরাজিতা।
দুই শিশুপুত্রকে ছেড়ে সেদিন অপরাজিতার ঠাঁই হয় কারাগারে। মাঝে ১৩ বছর পর কেটে যায়। তারপর আদালতে প্রমাণিত হয় অপরাজিতা নির্দোষ। ততদিনে শিশুপুত্ররা কৈশোরে পা রেখেছে। মা’কে মা বলে গ্রহণই করতে চায়না তাঁরা। নিজের সন্তানদের ঘৃণা, অবজ্ঞা নিয়ে বাঁচতে হয় অপরাজিতাকে। এখন সেই অপরাজিতা চান নতুনভাবে বাঁচতে। নিজের পায়ে দাঁড়াতে তাই রাজ্যের কাছে আবেদন করেন তিনি।
অপরাজিতার ইচ্ছা, তিনি শিশুদের পড়াবেন। রাজ্যের বক্তব্য, এসব আবদার বেসরকারি ক্ষেত্রে করা যায়। কিন্তু রাজ্যের এমন কোনও স্কিম নেই। রাজ্য জানায়, তাদের স্কিম রয়েছে যাতে তিনি টোটো চালাতে পারেন অথবা পোল্ট্রি খুলতে পারেন, তার জন্য সরকার ঋণ দেবে। উপায় না দেখে অপরাজিতা ফের আদালতের দ্বারস্থ। তাঁর আইনজীবী জয়ন্ত নারায়ণের বক্তব্য শিক্ষিতা, সম্ভ্রান্ত পরিবারের মেয়ে অপরাজিতা বাচ্চাদের পড়াতে চান। কিন্তু রাজ্য তাঁকে টোটো চালাতে বলছে। তাঁর প্রশ্ন, তাহলে সাজাপ্রাপ্ত আসামীরা মূল স্রোতে ফিরবেন কীভাবে?
এই বক্তব্য শুনে ক্ষুব্ধ বিচারপতি অমৃতা সিনহা। রাজ্যের স্কিমের সমালোচনা করে তিনি পাল্টা প্রশ্ন করেন, লোন নিয়ে কীভাবে পরিশোধ করবেন অপরাজিতা?
বিচারপতি অমৃতা সিনহা বিরক্ত হয়ে মন্তব্য করেন, ‘একজন মূল স্রোতে ফিরবেন আর রাজ্য তাকে লোন দিতে চায়?’ আর্থিক সহয়তার বিষয়ে রাজ্যকে রিপোর্ট দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি।