কলকাতা: ভোট পরবর্তী হিংসা মামলায় রাজ্য় প্রথম গ্রেফতার ২। নদিয়ার হৃদয়পুর গ্রাম পঞ্চায়েতে নিহত বিজেপি কর্মী ধর্ম মণ্ডল মৃত্যু-মামলায় অসীমা ঘোষ ও বিজয় ঘোষকে জিজ্ঞাসাবাদের পর খুনের ঘটনায় সরাসরি যুক্ত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার করল সিবিআই (CBI)। শনিবারই, সকালে ধৃতদের আটক করেছিলেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। পাশাপাশি, আরও ১০ টি নতুন এফআইআর দায়ের সিবিআইয়ের। মূলত, তদন্তে গতি আনতে এই সিদ্ধান্ত কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার।
গত ১৪ মে হৃদয়পুরে নিজের বাড়িতেই খুন হন ধর্ম মণ্ডল। অভিযোগ তীর ছিল তৃণমূলের দিকে। বাড়িতে ঢুকে ওই বিজেপি কর্মীর উপরে হামলা চালায় দুষ্কৃতীরা। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁকে ভর্তি করা হয় চাপড়া গ্রামীণ হাসপাতালে। সেখান থেকে তাঁকে পাঠানো হয় শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে। তারপর তাঁকে স্থানান্তরিত করা হয় কলকাতার এনআরএস হাসপাতালে। সেখানেই গত ১৬ মে মৃত্যু হয় ধর্মের।
পারিবারিক অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ প্রাথমিকভাবে গ্রেফতার করে ৭ জনকে। তবে পরিবারের অভিযোগ, পঞ্চায়েত সদস্য কালু শেখের নেতৃত্বে ওই হামলা হলেও তাঁকে গ্রেফতার করা হয়নি। এছাড়াও, অসীমা ঘোষ ও বিজয় ঘোষও এই খুনের ঘটনায় জড়িত বলে অভিযোগ করেছিল মৃতের পরিবারের। এ নিয়ে সিবিআই তদন্তের দাবিও জানিয়েছিলেন তাঁরা।
নিহত বিজেপি কর্মীর বাড়িতে বাড়িতে শুক্রবারই গিয়েছিলেন সিবিআইয়ের প্রতিনিধিরা। ফের শনিবার সেখানে যান তাঁরা। গ্রামপঞ্চায়েত অফিসে ঢোকে সিবিআই। সেখানেই অসীমা ঘোষ ও বিজয় ঘোষকে আটক করে সিবিআই। এদিন সারাদিন জিজ্ঞাসাবাদের পর ধর্ম মণ্ডলের খুনের ঘটনায় প্রত্য়ক্ষে যুক্ত থাকার অভিযোগে অসীমা ঘোষ ও বিজয় ঘোষকে গ্রেফতার করে সিবিআই।
অন্যদিকে, রাজ্যে ১৫টি খুন ও ৬ টি ধর্ষণের মামলায় নতুন করে আরও ১০ টি এফআইআর দায়ের করেছে সিবিআই। ভোট পরবর্তী হিংসা মামলায় দিল্লিতে সিবিআই-এর সদর দফতরে ৯টি এফআইআর রুজু করা হয়েছিল আগেই। শুক্রবার, এই মামলায় আরও ২ টি এফআইআর রুজু করা হয়। শনিবার আরও ১০ টি এফআইআর দায়ের করায় এই মুহূর্তে সিবিআই কৃত মোট দায়ের করা এফআইআরের সংখ্যা ২১টি।
রাজ্য়ে ভোট পরবর্তী হিংসা মামলায় জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের (NHRC) সুপারিশকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছিল রাজনৈতিক তরজা। পক্ষপাতিত্ব করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছিল তৃণমূল। কিন্তু, সেই মামলায় জোর ধাক্কা খেয়েছে রাজ্য সরকার। ধর্ষণ ও খুনের ঘটনাগুলির তদন্তভার তুলে দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই-এর হাতে। অন্যদিকে, বাকি হিংসার ঘটনার তদন্তের জন্য রাজ্য পুলিশের তিন সদস্যের একটি সিট গঠন করা হয়েছে। দুই দলকেই আগামী ৬ সপ্তাহের মধ্যে তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট জমা দিতে বলেছে আদালত।
সেই মোতাবেক, চার জোনে ক্যাম্প করে তদন্ত করছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা (CBI)। একটি ক্যাম্প দুর্গাপুরে। সেখান থেকে মূলত বাঁকুড়া, বীরভূম, পশ্চিম মেদিনীপুর-সহ কয়েকটি পশ্চিমের জেলার ভোট পরবর্তী মামলার তদন্ত করা হবে। একটু ক্যাম্প হচ্ছে উত্তরবঙ্গের জন্য। সেই ক্যাম্পের প্রস্তুতি কোচবিহারে। এই জেলা থেকে সব থেকে বেশি ভোট পরবর্তী হিংসার অভিযোগ এসেছে। কলকাতা থেকে ওত দূরে গিয়ে আক্রান্ত ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলা সময় সাপেক্ষ। সে কথা মাথায় রেখেই তদন্তকারীরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বাকি দুটি ক্যাম্প চলবে কলকাতাকে কেন্দ্র করে। কলকাতা সংলগ্ন কয়েকটি জেলার ভোট পরবর্তী মামলার তদন্ত করবে এই দুটি ক্যাম্প।
উল্লেখ্য, আদালতের নির্দেশে রাজ্যজুড়ে ভোট পরবর্তী হিংসার তদন্ত করে যে রিপোর্ট মানবাধিকার কমিশন জমা দিয়েছিল তাতে ‘নটোরিয়াস ক্রিমিন্যাল’ বলে উল্লেখ করেছিল জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, পার্থ ভৌমিক-সহ একাধিক তৃণমূল নেতাকে। মানবাধিকার কমিশনের প্রতিনিধিদের রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে প্রশ্ন তুলে সরব হন জ্যোতিপ্রিয়বাবু। রাজ্যের প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য ভোট পরবর্তী সন্ত্রাস মামলায় কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার হস্তক্ষেপকে কেন্দ্র করে কটাক্ষ হেনে বলেছেন, ”সিবিআই খাঁচাবন্দি তোতাপাখি।” এই তদন্তের জেরে আরও অভিযুক্তরা ধরা পড়বে বলেই আশা গেরুয়া শিবিরের। যদিও, তাতে চিত্রপট পরিবর্তন হয়নি। এ বার, সিবিআইয়ের গ্রেফতারির ঘটনায় ফের জোরাল হচ্ছে শাসক-বিরোধী তরজা। আরও পড়ুন: সিপিএম নেতার গোপন অডিয়ো ফাঁস! কামারহাটি বোমাকাণ্ডে থানায় অভিযোগ দায়ের মদনের