Bansdroni: কেন এই অবস্থা বাঁশদ্রোণীতে? গলদ ঠিক কোথায়?
Bansdroni: শহরে যেখানে হাইড্রেন হোক বা নর্দমা, ঢাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেখানে এখনও এই এলাকাগুলিতে খোলা নর্দমার মধ্যেই বসবাস সাধারণ মানুষের। সামান্য বৃষ্টি হলেই কোমড় সমান হোক বা হাঁটু সমান জল দাঁড়িয়ে যায়।
কলকাতা: দুর্ঘটনায় নাবালক মৃত্যুকে কেন্দ্র করে মহালয়ার সকাল থেকেই রণক্ষেত্র বাঁশদ্রোণী। কিন্তু কেন এই অবস্থা বাঁশদ্রোণীতে? কী বলছে একেবারে গ্রাউন্ড জিরোর রিপোর্ট? প্রসঙ্গত, কলকাতা পুরসভার ১৪৪টি ওয়ার্ডের মধ্যে সব থেকে পিছিয়ে পড়া এলাকাগুলির মধ্যে পড়ে ১১১, ১১২, ১১৩, ১১৪ নম্বর ওয়ার্ড। যা খোদ রাজ্যের অন্যতম হেভিওয়েট মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের বিধানসভার অন্তর্গত। বাম আমল থেকেই পর্যাপ্ত পরিকল্পনার অভাবে না তৈরি হয়েছে সঠিক নিকাশি ব্যবস্থা, না সড়ক ব্যবস্থা তৈরি হয়েছে এই এলাকায়। অনেকেই বলছেন তৃণমূল আমলেও যে ছবিটা একেবারে বদলে গিয়েছে তা নয়। ১১৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর অনিতা কর মজুমদার তো বলছেনই, “রাস্তাঘাট খারাপ আছে, সেটা তো অস্বীকার করার নয়। রাস্তার কাজ হচ্ছিল। আর তখনই ঘটে এই ঘটনা।
প্রসঙ্গত, পে লোডারের চাকায় পিষ্ট হয়ে চোদ্দো বছরের ওই কিশোরের মৃত্যু হয়েছে। এদিকে শহরে যেখানে হাইড্রেন হোক বা নর্দমা, ঢাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেখানে এখনও এই এলাকাগুলিতে খোলা নর্দমার মধ্যেই বসবাস সাধারণ মানুষের। সামান্য বৃষ্টি হলেই কোমড় সমান হোক বা হাঁটু সমান জল দাঁড়িয়ে যায়। যা নিষ্কাশন করতে এক সপ্তাহের বেশি সময় লেগে যায় পুরসভার। এলাকার নিকাশি ব্যবস্থাকে আম আমূল বদলের জন্য ২০১৬ সালের শেষ দিক থেকে এশিয়ান ডেভলপমেন্ট ব্যাংকের ঋণে কলকাতা পরিবেশ উন্নয়ন প্রকল্পের বা কেইআইপির অধীনে ১১৩ নম্বর ওয়ার্ডে নিকাশি পাম্পিং স্টেশনের তৈরীর কাজ শুরু হয়।
এই কাজ করতে গিয়ে ১১৩ নম্বর ওয়ার্ডের বিস্তীর্ণ অংশে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির কাজ শুরু হয়। এখান থেকেই দুর্ভোগের সূত্রপাত। বেহাল রাস্তা আগেই ছিল। পাইপ বসাতে গিয়ে সেই পরিস্থিতি আরও নরক হয়ে ওঠে বলে অভিযোগ এলাকার লোকজনের। একের পর এক দুর্ঘটনার কবলে পড়তে থাকে ছোট থেকে বড় গাড়ি। চারপাশে শুধুই খানাখন্দ। পুরসভা তরফে ওই এলাকায় যুক্তি দেওয়া হয়, সংশ্লিষ্ট নিকাশি পাম্পিং স্টেশন তৈরির কাজ হয়ে গেলে কলকাতা পুরসভার ১১১, ১১২, ১১৩, ১১৪ নম্বর ওয়ার্ডের এবং সোনারপুর পুরসভার ৩৪ এবং ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডের যাবতীয় নিকাশির জল দ্রুত নিষ্কাশিত হবে। পাম্পিং স্টেশনের মাধ্যমে ওই জল পড়বে কেওড়াপুকুর খালে। কিন্তু, এই কাজ যে বছরের পর বছর লেগে যাবে তা কোনোভাবেই বুঝতেই পারিনি কলকাতা পুরসভা। যে কারণে পাইপ বসানোর ক্ষেত্রে শ্লথ গতি, পাম্পিং স্টেশনের কাজ শম্বুক গতিতে চলা এবং বারবার পরিকল্পনার বদল করা, সব মিলিয়ে সাধারণ মানুষের কাছে মানসিক এবং শারীরিক যন্ত্রণার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
করোনার কারণে বন্ধ হয়েছিল কাজ
২০২১ এবং ২০২২ সালে করোনার সময় সম্পূর্ণ কাজ বন্ধ হয়ে যায়। ফলে বেহাল অবস্থা রেখেই সেখানকার কর্মীরা চলে যান। তৎকালীন সময় ভয়াবহ বৃষ্টিতে এলাকার হাল আরও ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে। বেশ কয়েকজন সাধারণ মানুষ গর্তের মধ্যে পড়ে গিয়ে হাত এবং পা ভেঙে ছিলেন। সেই সময়ও এলাকার মানুষের বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয়েছিল কলকাতা পুরসভাকে। ২০১৬ সালে শুরু হওয়া এই কাজ ৫ বছরের সময়সীমার মধ্যে শেষ করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু, পুরসভার তথৈবচ মনোভাব সাধারণ মানুষকে বিপদের মুখে ঠেলে দিয়েছে।
ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন বিধায়ক থেকে মেয়র
কলকাতা পরিবেশ উন্নয়ন প্রকল্পের আধিকারিকদের নিয়ে বারবার এলাকার বিধায়ক অরূপ বিশ্বাস, কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম বৈঠক করে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। কালো তালিকাভুক্ত করে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ঠিকাদারদের। কিন্তু তাতে কোনও কাজই হয়নি। কারণ শুধুমাত্র হুঁশিয়ারি ছিল, বাস্তবে কড়া কোনও পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষমতা পুরসভার ছিল না বলেই মত বিরোধীদের।
কলকাতা পুরসভার ১১ নম্বর বরো সূত্রে জানা গিয়েছে, এই কাজের জন্য যে ধরনের সঠিক ক্রেডেনশিয়াল সংস্থা নিয়োগ করার প্রয়োজন ছিল, তা করা হয়নি। বরং যে ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়েছিল প্রথমের দিকে, তাদের পরিকল্পনাহীনতার জন্য বারবার ঠিকাদার সংস্থাকে বদল করা হয়েছে। পাশাপাশি পাম্পিং স্টেশন তৈরির পর থেকে এখনও পর্যন্ত মাত্র ৫৫ শতাংশ কাজ হয়েছে। যা অস্বস্তির কারণ কলকাতা পুরসভার কাছেও। এখন দেখার এই ঘটনার পর পরিস্থিতির আদৌও কোনও বদল হয় কিনা।