কলকাতা: বয়স কত কেউ জানে না। কবেই বা এর সূত্রপাত হয়েছিল কার হাত ধরে হয়েছিল সে সম্পর্কেও ওয়াকিবহাল নয় এলাকার সব মানুষ। তবে এলাকার বাসিন্দাদের দাবি রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের আমলে কাশীপুরের এই মন্দিরের প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। তখন থেকেই এখানে একটানা পুজো হয়ে আসছে। ফি বছর সেই মন্দিরের কালীপুজো (Kalipuja 2022) ঘিরেই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির (Communal Harmony) অনন্য নজির ধরা পড়ে ভাঙড়ের কাশীপুর (Kasipur) গ্রামে। এলাকার কাশীপুর কালী মন্দিরেই কালী পুজোর আয়োজন করেন হিন্দু-মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের মানুষ। পুজো উপলক্ষে প্রত্যেকেই মেতে ওঠেন আনন্দে। গভীর রাতে পুজো শেষে খিচুড়ি ভোগ খান আমজনতা। ভোর পর্যন্ত চলে সেই ভোগ বিতরণ।
এলাকার প্রবীন ব্যক্তিদের দাবি তাঁদের বাবা ঠাকুরদারাও মনে করতে পারেন না ঠিক কীভাবে, কবে এই কালী মন্দিরের প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। যদিও কাশীপুর মন্দির কমিটির কর্তা গৌতম কর্মকারের দাবি তাঁদের পূর্বপুরুষরা রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের আমলে ভাঙড়ের কাশীপুরে এই কালী মন্দিরের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। স্বপ্নাদেশ পেয়ে তাঁদের এক পূর্ব পুরুষ এই মন্দিরের প্রতিষ্ঠা করেন। প্রথম দিকে মাটির ঘর আর খড়ের চাল থাকলেও একশো বছর আগে কংক্রিটের নতুন মন্দিরে মায়ের অধিষ্ঠান হয়েছে। কাশীপুর ছাড়াও ভাঙড়ের নাংলা, সাতভাইয়া, পোলেরহাট, নওয়াবাদ, ছেলেগোয়ালিয়া, মঙ্গলপুর সহ পনেরো কুড়িটি গ্রামের মানুষ এখানে পুজো দিতে আসেন বছরভর। তাঁদের পরিজনেদের জন্য করেন মানত। ভক্তদের দাবী মা কালী এখানে বেশ জাগ্রত। নিষ্ঠাভরে মায়ের কাছে কিছু প্রার্থনা করলে মা ভক্তের আহ্বানে সারা দেন।
মায়ের ডাকে বারাসাত, মধ্যমগ্রাম, দমদম, বারুইপুর, হাওড়া থেকেও অনেক ভক্ত কাশীপুর কালীবাড়িতে ছুটে আসেন। মধ্যমগ্রামের বাসিন্দা অরুপ মুখোপাধ্যায় বলেন, “এই মন্দিরে মানত করে জীবনের বেশ কিছু মনস্কমনা পূরণ হয়েছে।তাই বারে বারেই মায়ের দর্শনে এখানে ছুটে আসি, রীতি মেনে পুজো দিই।” মন্দিরের পুরোহিত বিজকৃষ্ণ ভট্টাচার্য বলেন, “অমাবস্যার রাতে প্রথা মেনে ছাগবলি হয়। খিচুড়ি ভোগ বিতরণ হয় সারা রাত ধরে।গত বছর এখানে দু হাজার মানুষ পাত পেড়ে খিচুড়ি খেয়েছিলেন।এবছর লোকসংখ্যা আরও বাড়বে।” এলাকার যুবক মান্নান মোল্লা,ইসমাইল মোল্লা, নূরইসলাম মোল্লারা বলেন, “পুজোর দিন অনেক রাত পর্যন্ত আমরাও জেগে পুজো উপভোগ করি, প্রসাদ খাই।”