কলকাতা: ‘গ্রেফতারিতে আইন মানেনি পুলিশ’কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী তথা কংগ্রেস (Congress) মুখপাত্র কৌস্তভ বাগচী বারংবার একটাই অভিযোগ করেছেন। জামিন পাওয়ার পরও সুর বদলায়নি তাঁর। তিনি বলেছেন, “আমি যদি আইনজীবী না হতাম তাহলে আমায় গাঁজার কেস দিয়েও দিতে পারত।” ফলে বিরোধীরা প্রশ্ন করছে যদি বিধায়ক-আইনজীবীর সঙ্গে এহেন আচরণ করা হয়, তাহলে সাধারণ মানুষ তাঁর ক্ষেত্রে কী হতে পারে? TV9 বাংলাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কৌস্তভের পরামর্শ যদি শাসক স্বৈরাচারী হয়, সকলকে একটু হলেও আইন জানতে হবে। একই প্রসঙ্গ তোলেন সদ্য জেল থেকে ছাড়া পাওয়া আইএসএফ নেতা নওশাদ সিদ্দিকিও।
রবিবার জেলের অভিজ্ঞতা বলেন, “বাড়িতে যদি পুলিশ আসে যতক্ষণ না তারা কাগজ দেখাচ্ছেন, অ্যারেস্ট মেমোতে সই করাচ্ছেন ততক্ষণ প্রশ্ন করতে হবে। পুলিশ দেখলে ভয় পেলে চলবে না। এই স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হলে সচেতন হতে হবে। বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে কথা বলতে হবে।”
কংগ্রেস নেতার দাবি বিরোধীদের মিথ্যে মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কৌস্তভ বললেন, “পশ্চিমবঙ্গের জেলের ভিতর গেলে দেখা যাবে কত বিরোধী দলের লোকেদের মিথ্যে গাজার মামলা, ডাকাতি মামলায় ফাঁসানো হচ্ছে। এখন নতুন ট্রেন্ড শুরু হয়েছে পকসো আইনে ফাঁসিয়ে দেওয়া। এই বিষয়গুলিতে পশ্চিমবঙ্গের একটা সংখ্যার মানুষ মারাত্মক ভাবে জেলে বন্দি হয়ে পড়ে রয়েছেন।” একই কথা বলেন নওশাদ সিদ্দিকিও। তিনি জানান, “জেলে গিলে বোঝা যাবে কীভাবে মানুষকে ভুল পথে পরিচলিত করা হচ্ছে। এমন-এমন মিথ্যে মামলা দিয়েছে পুলিশ যার সর্বোচ্চ সাজা পাঁচ বছর হতে পারে। বিরোধী দল করার জন্য ছ’বছর অস্বাভাবিক মৃত্যু মামলায় ফাঁসিয়ে দিচ্ছে।”
প্রসঙ্গত, শনিবার ভোর-রাতে গ্রেফতার করা হয় এই আইনজীবী কৌস্তভ বাগচীকে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্যের প্রতিবাদ করেছিলেন কৌস্তভ। সে কারণেই এভাবে পুলিশ পাঠিয়ে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে মনে করছেন তিনি। শনিবার বিকেলে ১ হাজার টাকার ব্যক্তিগত বন্ডে জামিন পান কৌস্তভ।
তাঁর গ্রেফতারি প্রসঙ্গে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন, “সম্প্রতি দুর্নীতি ও স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে যে কটি যুব কণ্ঠ সোচ্চার হয়েছে তার মধ্যে কৌস্তভ বাগচী অন্যতম। ব্যক্তিগতভাবে ও আমার ভাইয়ের মতো। লড়াকু ও অত্যন্ত উজ্জ্বল ভবিষ্যতের একটা ছেলে। ওর এই প্রতিবাদী লড়াইকে আমি সমর্থন করি। একজন কলকাতা হাইকোর্টের বিশিষ্ট তরুণ আইনজীবীর বাড়িতে যে কায়দায় রাত তিনটের সময় পুলিশ হানা দিয়েছে তার প্রতিবাদ হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে।” অপরদিকে, পুলিশ দিয়ে কৌস্তভ বাগচীকে গ্রেফতার করা ঠিক হল না বলে মন্তব্য করেন তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ। তাঁর দাবি, কৌস্তভ অন্যায় করেছেন, ‘মাতৃসমা’ মুখ্যমন্ত্রী সম্পর্কে ওই চরম কুৎসা বরদাস্ত করা যায় না। তবে কুণালের মতে, পুলিশ দিয়ে গ্রেফতারের সিদ্ধান্ত সঠিক নয়। তিনি লিখেছেন, ‘আমাদের ছাত্রযুবরা কৌস্তভের অসভ্যতা বুঝে নিতে পারত। পুলিশ দিয়ে গ্রেফতার ঠিক হল না।’