কলকাতা: ‘রাত তখন দেড়টা। কলিংবেল বেজেছিল। আমি বুঝেছিলাম পুলিশ এসেছে। আগে থেকেই প্রস্তুত ছিলাম…” ঠিক এইভাবে গ্রেফতারির রাতের কী ঘটেছিল Tv9 বাংলাকে তার বর্ণনা শোনালেন কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী তথা কংগ্রেস মুখপাত্র কৌস্তভ বাগচী (Koustav Bagchi)। শনিবার ভোর-রাতে গ্রেফতার করা হয় এই আইনজীবীকে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্যের প্রতিবাদ করেছিলেন কৌস্তভ। সে কারণেই এভাবে পুলিশ পাঠিয়ে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে মনে করছেন তিনি। শনিবার বিকেলে ১ হাজার টাকার ব্যক্তিগত বন্ডে জামিন পান কৌস্তভ।
রবিবার TV9 বাংলাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সেদিনের সেই কাহিনী তুলে ধরেন তিনি। বলেন, “চেম্বারের কাজ কর্ম সেরে ঘুমোতে-ঘুমোতে রাত দেড়টা বেজে গিয়েছিল। এক ঘণ্টাও হয়ত ঘুম হয়নি। আমি আগেই বাড়িতে বলে রেখেছিলাম হয়ত পুলিশ আসতে পারে। মা-কে বলেছিলাম যে রাত্রিবেলার ঘুমটা হয়ত হবে না। তোমাদেরও ব্যাহত হবে। তাই হল। কলিং বেল বাজতেই বুঝলাম পুলিশ এসেছে।” পুলিশের সেদিনের গ্রেফতারির নিন্দা করে কৌস্তভ বলেন, “ওইদিন রাত্রিবেলা বিশাল পুলিশ বাহিনী বেল বাজিয়ে যেভাবে টর্চ মারছিল আমি যেন কোনও সন্ত্রাসবাদী।”
এরপর কিছুটা ব্যাঙ্গের সুরেই কৌস্তভ পুলিশকে বলেন, “এখানে গাড়ির তেল খরচ করে আসার দরকার নেই। এমনিও আপনারা ডি এ পান না। আমায় ফোন করলে গাড়ি তেল খরচ করে এমনই চলে যেতাম।” কংগ্রেসে মুখপাত্রের দাবি, গ্রেফতারির সময়ে প্রথমে পুলিশ যোগ্য নথি দেখাতে পারেনি। যেহেতু তিনি পেশায় আইনজীবী, আইনের মারপ্যাঁচ জানেন সেই কারণে পুলিশ তাঁকে অন্য কোনও কেসে ফাঁসাতে পারেনি। কৌস্তভ বলেন, “পুলিশ বলল গ্রেফতারির নির্দেশ রয়েছে। আমি বললাম কাগজ দেখান। কিন্তু পুলিশ কোনও কাগজ দেখাতে পারেননি। ৩টে থেকে ৫ টার মধ্যে কাগজ সব ম্যানুফ্যাকচার করা হয়েছে। আমি যদি আইনজীবী না হতাম তাহলে আমায় গাঁজার কেস দিয়েও দিতে পারত। এরপর যখন কাগজ আসে তখন সেখানেও আইনের ধার-ধারেনি। স্বৈরাচারীভাবে আমায় গ্রেফতার করা হল।”
যদিও, এই বিষয়টিকে হালকাভাবে দেখতে নারাজ এই কংগ্রেস নেতা। দৃপ্তকন্ঠে জানালেন, “আমি খুব শীঘ্রই হাইকোর্ট যাব। এই সরকার কোর্টে কতটা নাস্তানাবুদ হয় আমি দেখব। যে পুলিশ অফিসাররা রাত্রিবেলা আমার পরিবারের রাতের ঘুম নষ্ট করেছে তাদের আমি ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে কড়ায়-গন্ডায় বুঝে নেব।”
তাঁর গ্রেফতারি প্রসঙ্গে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন, “সম্প্রতি দুর্নীতি ও স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে যে কটি যুব কণ্ঠ সোচ্চার হয়েছে তার মধ্যে কৌস্তভ বাগচী অন্যতম। ব্যক্তিগতভাবে ও আমার ভাইয়ের মতো। লড়াকু ও অত্যন্ত উজ্জ্বল ভবিষ্যতের একটা ছেলে। ওর এই প্রতিবাদী লড়াইকে আমি সমর্থন করি। একজন কলকাতা হাইকোর্টের বিশিষ্ট তরুণ আইনজীবীর বাড়িতে যে কায়দায় রাত তিনটের সময় পুলিশ হানা দিয়েছে তার প্রতিবাদ হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে।” অপরদিকে, পুলিশ দিয়ে কৌস্তভ বাগচীকে গ্রেফতার করা ঠিক হল না বলে মন্তব্য করেন তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ। তাঁর দাবি, কৌস্তভ অন্যায় করেছেন, ‘মাতৃসমা’ মুখ্যমন্ত্রী সম্পর্কে ওই চরম কুৎসা বরদাস্ত করা যায় না। তবে কুণালের মতে, পুলিশ দিয়ে গ্রেফতারের সিদ্ধান্ত সঠিক নয়। তিনি লিখেছেন, ‘আমাদের ছাত্রযুবরা কৌস্তভের অসভ্যতা বুঝে নিতে পারত। পুলিশ দিয়ে গ্রেফতার ঠিক হল না।’