
কলকাতা: লোকসভা থেকে বহিষ্কৃত। আর সাংসদ রইলেন না মহুয়া মৈত্র। ‘ক্যাশ ফর কোয়ারি’ বিতর্কে যে কোপ পড়তে চলেছে মহুয়ার সাংসদ পদে, এমন আন্দাজ বেশ কিছুদিন আগে থেকেই করা যাচ্ছিল। অবশেষে সংসদীয় এথিক্স কমিটির রিপোর্ট জমা পড়তেই, আজ মহুয়াকে লোকসভা থেকে বহিষ্কারের প্রস্তাব পেশ করেন কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী প্রহ্লাদ যোশী। ধ্বনিভোটে পাশ হয়ে যায় প্রস্তাব। টাকার বিনিময়ে সংসদে প্রশ্ন তোলার অভিযোগে শেষ পর্যন্ত কোপ পড়ল মহুয়ার সাংসদ পদে। তবে এই প্রথমবার নয়, এর আগেও বার বার বিতর্কের মধ্যে জড়িয়েছেন তিনি।
গতবছরের কথা। কানাডার এক তথ্যচিত্রের পোস্টার ঘিরে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। সেখানে কালী ঠাকুরকে যেভাবে তুলে ধরা হয়েছিল, তা নিয়ে হইচই পড়ে গিয়েছিল দেশে। এক সংবাদমাধ্যমের অনুষ্ঠানে গিয়ে সেই পোস্টার ঘিরে মহুয়ার মন্তব্য কার্যত সেই বিতর্কের মধ্যে ঘি ঢেলে দিয়েছিল। দেবী কালীর শাক্ত আচারে পুজো নিয়ে মহুয়ার মন্তব্যে নতুন করে বিতর্ক দানা বেঁধেছিল। পরিস্থিতি এমন হয়েছিল, যে মহুয়ার মন্তব্যের থেকে দল দূরত্ব তৈরি করে নিয়েছিল। ওই মন্তব্যে যে তৃণমূলের সমর্থন নেই, তাও জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
সাংবাদিকদের উদ্দেশে শ্লেষমিশ্রিত খোঁচা দিতে দেখা গিয়েছিল মহুয়াকে। সেটা ২০২০ সালের কথা। বিধানসভা ছেড়ে তখন মহুয়া সংসদে বসছেন। শুধু সাংসদই নন, দলেরও বড় দায়িত্বে। নদিয়া জেলার সভানেত্রী। সেই সময় গয়েশপুরে এক দলীয় কর্মসূচিতে গিয়ে মেজাজ হারিয়েছিলেন মহুয়া। কর্মিসভা চলছিল। সেখানে আবার দু’পক্ষের মধ্যে ঝামেলাও শুরু হয়ে গিয়েছিল। মহুয়া দু’পক্ষকে বুঝিয়ে কর্মিসভার ভিতরে নিয়ে যান। আর সেখানেই কয়েকজন সাংবাদিকও ঢুকে পড়েছিলেন। তাতে একেবারে তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠেন মহুয়া। মেজাজ হারিয়ে বলেছিলেন, “কে এই দু’পয়সার প্রেসকে ভেতরে ডাকে?” সেই মন্তব্য ঘিরেও জোর বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। শেষে ক্ষমা চাইতে বাধ্য হয়েছিলেন মহুয়া। কিন্তু সেই ক্ষমার মধ্যেই ছিল ঝাঁঝের সুর। সোশ্যাল হ্যান্ডেলে লিখেছিলেন, “আই অ্যাপোলোজাইজ ফর দ্য মিন হার্টফুল অ্যাকিউরেট থিংস আই সেড।”
দলের মধ্যেও বিভিন্ন সময়ে চর্চা হয়েছে মহুয়াকে নিয়ে। নদিয়া জেলার রাজনীতিতেও বিভিন্ন সময়ে কানাঘুষো শোনা গিয়েছে। সাংসদ হয়ে যাওয়ার আগে মহুয়া ছিলেন করিমপুরের বিধায়ক। কিন্তু সাংসদ হয়ে যাওয়ার পরেও নাকি তিনি নিজের পুরনো বিধানসভা কেন্দ্রের কাজে ‘নাক গলাতেন’ বলে অভিযোগ। এমনকী দলনেত্রীও একবার মহুয়াকে বলেছিলেন, নিজের এলাকায় কাজ করতে। করিমপুর নিয়ে না ভাবতে বলেছিলেন।
সংসদে টাকার বিনিময়ে প্রশ্ন তোলার অভিযোগ উঠে এসেছে মহুয়ার বিরুদ্ধে। সংসদে প্রশ্ন তোলার জন্য দুবাইয়ের ব্যবসায়ী হিরানন্দানির থেকে তিনি উপহার নিয়েছেন বলে অভিযোগ। এমনকী তাঁর সংসদীয় ইমেলের লগ ইন আইডি ও পাসওয়ার্ডও হিরানন্দানিকে দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ। সেই অভিযোগের প্রেক্ষিতে লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লার সংসদীয় এথিক্স কমিটিকে বিষয়টি খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেন। এথিক্স কমিটির সুপারিশের রিপোর্টের ভিত্তিতে আজ লোকসভা থেকে বহিষ্কার করা হয় মহুয়াকে। যদিও মহুয়ার দাবি, আর্থিক লেনদেনের কোনও প্রমাণই নেই এথিক্স কমিটির কাছে। পুরোটাই রাজনৈতিক চক্রান্ত বলে অভিযোগ মহুয়ার।