কলকাতা : তৃণমূল বিধায়ক তথা চিকিৎসক নেতা নির্মল মাজির বিরুদ্ধে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ তুলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দ্বারস্থ হয়েছিলেন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসক ড. কুণাল পান। আর সেই চিকিৎসককেই এবার মিথ্যাবাদী তকমা দিল প্রোগ্রেসিভ ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন। চিকিৎসক সংগঠনের মুখপাত্র বীরূপাক্ষ বিশ্বাসের দাবি, কুণাল পান অনেক রোগীকেই ফিরিয়ে দেন। তারই প্রতিবাদ করতে গিয়েছিলেন নির্মল মাজি। তবে চিকিৎসকের দাবি, এমন কয়েকজন রোগীরে হাসপাতালে ভর্তি করাতে চেয়েছিলেন নির্মল মাজি, যাঁদের নাম বা বয়স ঠিক ছিল না। আর তা খতিয়ে দেখতে গিয়েই দেরি হয় ভর্তি করাতে। তখনই হাসপাতালে গিয়ে চোটপাট শুরু করেন বিধায়ক।
বিতর্ক আর নির্মল মাজি যেন সমার্থক হয়ে উঠেছে। বারবার উঠছে একই অভিযোগ। গত বুধবারের ঘটনা। একদিকে যখন সরকারি হাসপাতালের কর্তাদের সঙ্গে নবান্নে বৈঠক করছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তখনই কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের এমার্জেন্সিতে কর্মরত এক সিনিয়র চিকিৎসককে ‘ছাগল’, ‘গাধা’ বলে সম্বোধন করার অভিযোগ উঠল মেডিক্যালের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে।
কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ সূত্রে খবর, নির্মলের পাঠানো রোগী ভর্তি করতে দেরি করার জন্য ৬৩ বছরের প্রবীণ চিকিৎসক কুন্তল পানের বিরুদ্ধে খড়্গহস্ত হন নির্মল। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ সূত্রে খবর, প্রবীণ চিকিৎসককে নির্মল বলেন, ‘কেন ছাগলের মতো তাকিয়ে আছেন’! ‘গাধার মতো কাজ করেন কেন?’ এমনকী, প্রবীণ চিকিৎসকের রেজিস্ট্রেশন স্থগিত করে দেওয়ার হুঁশিয়ারিও দেন বলে অভিযোগ।
এখানেই শেষ নয়। আরও অভিযোগ, এমার্জেন্সিতে কর্মরত ইন্টার্ন, হাউস স্টাফদের উদ্দেশে তিনি বলেছেন, তাঁরা এমডি-এমএসে কী করে সুযোগ পান তা তিনি দেখে নেবেন। সম্প্রতি মালদহ মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসকদের একাংশকে ‘হার্মাদ’ বলার অভিযোগ উঠেছিল নির্মলের বিরুদ্ধে।
মেডিক্যাল কলেজ সূত্রের খবর, সরিফুদ্দিন নামে এক রোগীকে সিসিইউয়ে ভর্তি করানোর জন্য নির্মল মাজি সুপারিশ করেন। কিন্তু বিকেল তিনটে নাগাদ এমার্জেন্সিতে যে রোগী নির্মলবাবুর নাম করে ভর্তি হতে আসেন তাঁর নাম ছিল সইফুদ্দিন। কলকাতা মেডিক্যালের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে রোগীর নাম ভুলের পাশাপাশি বয়সের তথ্যেও ভুল ছিল। হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের তথ্য অনুযায়ী, রোগীর বয়স ৬০ বছর। কিন্তু বাস্তবে যিনি আসেন তাঁর বয়স ছিল ৫৭।
পাশাপাশি, এমার্জেন্সির চিকিৎসকদের বক্তব্য যে রোগীকে ভর্তির জন্য পাঠানো হয়েছিল তাঁর সিসিইউ বেড না হলেও চলত। সেই জায়গায় একজন মুমূর্ষু রোগীকে বঞ্চিত করে কেন ওই ব্যক্তিকে ভর্তি করা হচ্ছে তা যাচাই করার চেষ্টা করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। তাতে ভর্তি প্রক্রিয়ায় দেরি হয়। এতেই চটে যান নির্মল। ঘটনাস্থলে উপস্থিত চিকিৎসকদের একাংশের দাবি, বিকেল চারটে নাগাদ এমার্জেন্সিতে ঢুকে চিকিৎসকদের হুঁশিয়ারি দেওয়া শুরু হয় নির্মলের।
বিতর্ক প্রসঙ্গে নির্মল মাজির প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হলে তিনি ফোন ধরেননি। হোয়াটসঅ্যাপেও জবাব দেননি। মুখে কুলুপ কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষেরও।
পিডিএ-র তরফে অভিযোগ জানানো হয়েছে, কুণাল পান একজন মিথ্যাবাদী। এসআরওডি হিসাবে, তিনি অতীতে একাধিক রোগীকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। তাঁদের দাবি, একজন অসুস্থ রোগী ৬ ঘণ্টা ধরে চিকিৎসার জন্য শুয়েছিলেন। রোগীর পরিবার গুগল থেকে নির্মল মাজির নম্বর খুঁজে বের করেন সাহায্যের জন্য। রোগীর চিকিৎসার ক্ষেত্রে, মাননীয় মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ অনুসারে নির্মল মাজি অত্যন্ত কঠোর বলে উল্লেখ করেছে ওই চিকিৎসক সংগঠন।