নয়া দিল্লি : ওমিক্রনের হাত ধরে করোনার তৃতীয় ঢেউ আছড়ে পড়তে পারে, এমন আশঙ্কাই করেছিলেন বিশেষজ্ঞরা। তবে রাজ্যে বছর শেষে যে এ ভাবে সংক্রমণ বাড়বে, তেমন আঁচ আগে পাওয়া যায়নি। সদ্য খুলেছে স্কুল, চালু হয়েছে লোকাল ট্রেন, ছন্দে ফিরতে শুরু করেছে দৈনন্দিন জীবন। এরই মধ্যে উদ্বেগ বাড়াল করোনার গ্রাফ। বুধবার রাজ্যে দৈনিক সংক্রমণ ১০০০ ছাড়িয়েছে বলে স্বাস্থ্য ভবন সূত্রে খবর। এ দিনই রাজ্যের বিশেষজ্ঞদের নিয়ে জরুরি বৈঠক বসছে স্বাস্থ্য দফতরে।
মঙ্গলবার রাজ্যে করোনার দৈনিক সংক্রমণ ছিল ৭৫২। বুধবার সেই সংখ্যা বেড়ে ১০০০ পার হতে পারে বলেই আগেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকরা। আর আজ গঙ্গা সাগরে প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় করোনা পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে, স্বাস্থ্য সচিব নারায়ণ স্বরূপ নিগম জানান, ‘গতকাল সংক্রমণ ছিল প্রায় ৮০০, আজ হাজার পার করে গিয়েছে।’ স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, বুধবার নতুন করে করোনা আক্রান্ত হয়েছে অন্তত ১০৮৯ জন। জুলাই মাসের শুরুর দিকে শেষবার হাজার ছাড়িয়েছিল সংক্রমণ।
বুধবার গঙ্গা সাগরে প্রশাসনিক বৈঠকে করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কার কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পরিস্থিতির ওপর নজর রাখার নির্দেশ দেন আধিকারিকদের। কলকাতায় কনটেনমেন্ট জ়োন তৈরি করা যায় কি না, সে দিকেও নজর দেওয়ার কথা বলেন তিনি। এরপরই জরুরি বৈঠক বসল স্বাস্থ্য দফতরে।
বুধবার বিকেলে বিশেষজ্ঞদের ডেকে পাঠানো হয়েছে স্বাস্থ্য ভবনে। আগামিদিনে কী কী পদক্ষেপ করা যাবে, সেই বিষয়েই সম্ভবত আলোচনা হবে বলে সূত্রের খবর।
করোনা সংক্রমণ বাড়ছে রাজ্যে। এখনও সব নমুনার জেনোম সিকোয়েন্সিং হয়নি, তাই কোন ভ্যারিয়েন্ট আক্রমণ করছে, তা বলা কঠিন। তবে করোনার রেখচিত্র দেখে, বিশেষজ্ঞদের অনুমান, ওমিক্রনের প্রভাব ছাড়া এ ভাবে সংক্রমণ বাড়া সম্ভব নয়। আশঙ্কা করা হচ্ছে, ডেল্টাকে ছাপিয়ে বাড়ছে ওমিক্রনের সংক্রমণ। বর্তমানে রাজ্যে মোট ১১ জন ওমিক্রন আক্রান্তের খোঁজ পাওয়া গিয়েছে। এর মধ্যে বেশ কয়েকজনের খোঁজ মিলেছে যাঁরা সাম্প্রতিককালে বিদেশ ভ্রমণ করেননি। তাই ওমিক্রনের গোষ্ঠী সংক্রমণ হচ্ছে কি না, সেই আশঙ্কাও রয়ে যাচ্ছে।
ক্রিসমাসে পার্ক স্ট্রিটে চোখে পড়েছে প্রবল ভিড়। ভাইরাল হয়েছে সেই ছবি। তাই প্রশ্ন উঠেছে, সেই ভিড় থেকেই কি করোনার এমন বাড়বাড়ন্তের শুরু? বিশেষজ্ঞদের একাংশের দাবি, পুরভোট হতে পারে অন্যতম কারণ। সাধারণত সংক্রমণের কিছুদিন পর উপসর্গ দেখা যায়। তখনই হয় নমুনা পরীক্ষা। আর কলকাতার পুরভোট কতদিন আগে হয়েছে, সেই হিসেব কষে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সেখান থেকেই হতে পারে সূত্রপাত।
আজ প্রশাসনিক বৈঠকে ফের নতুন করে কিছু বিধি- নিষেধ জারি হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পরিস্থিতির অবনতি হলে প্রয়োজনে পুনরায় স্কুল বন্ধ করার পরিকল্পনার কথাও জানিয়েছেন তিনি। বুধবার গঙ্গা সাগরে প্রশাসনিক বৈঠক থেকে সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের এই বিষয়ে নির্দেশ দিয়েছেন মমতা। কলকাতায় কনটেনমেন্ট জোন তৈরি করা, লোকাল ট্রেনের সংখ্যা কমানো হতে পারে বলেও ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি।