
কলকাতা: সংঘাত, বিবাদ কোনও কিছুরই আর জায়গা রাখল না কলকাতা হাইকোর্ট। দীর্ঘ প্রতীক্ষিত মেট্রোর কাজ শেষ করতেই হবে। ৩৬৬ মিটার পিলার তৈরির জন্য এবার ডেডলাইন বেঁধে দিল রাজ্য়ের উচ্চ আদালত। এদিন কলকাতা হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি সুজয় পাল এবং বিচারপতি অজয় কুমার গুপ্তর বেঞ্চের সাফ নির্দেশ ১৫ই ফেব্রুয়ারির মধ্য়ে চিংড়িঘাটা মেট্রোর পিলার তৈরির কাজ শেষ করতেই হবে।
এই মর্মে তিন রাত যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ রাখার নির্দেশ দিয়েছে ডিভিশন বেঞ্চ। মেট্রো রুট তৈরির দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা RVNL-র কর্তাদের এই প্রসঙ্গে রাজ্যের আলোচনা করে দিনক্ষণ ঠিক করে নিতে বলেছেন কলকাতা হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি। পাশাপাশি, যান নিয়ন্ত্রণের জন্য রাজ্যকে আগামী ৬ই জানুয়ারির মধ্যে চূড়ান্ত তারিখ নির্ধারণ করে RVNL কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে বলেও নির্দেশ আদালতের।
তবে এজলাসে এই ডেডলাইন নিয়ে আপত্তি তুলেছিলেন রাজ্যের পক্ষের সওয়ালকারী। তাঁর যুক্তি, ‘আগামী বছরের ২০ ফেব্রুয়ারির আগে যান নিয়ন্ত্রণ করা মোটেই সম্ভব নয়। ইতিমধ্য়েই উৎসবের মরসুম শুরু হয়ে গিয়েছে। ট্র্যাফিক ব্লক করা হলে সাধারণ মানুষ সমস্যায় পড়বেন।’ তবে এই যুক্তি মানতে নারাজ ডিভিশন বেঞ্চ। বিচারপতিদের পর্যবেক্ষণ, ভারতবর্ষের মতো দেশ, যেখানে উৎসব লেগেই থাকে, সেখানে উৎসববিহীন কোনও মরশুম কি চিহ্নিত করা সম্ভব? আর এই ‘ট্র্যাফিক ব্লক’ রাতের দিকে মাত্র তিনদিন করতে হবে, ফলে নাগরিক স্বার্থে ওই কাজ দ্রুত শেষ করা জরুরি।
বলে রাখা প্রয়োজন, শেষ শুনানিতেই ফেব্রুয়ারিতে কাজ করার প্রস্তাব দিয়েছিল রাজ্য সরকার। প্রধান বিচারপতির বেঞ্চকে রাজ্যের পক্ষে সওয়ালকারী জানিয়েছিলেন, ‘দশক ধরে মেট্রোর কাজ চলছে। সুতরাং, আরও কয়েক দিন অপেক্ষা করে ফেব্রুয়ারিতে কাজ করা যেতে পারে। কিন্তু এতে RVNL-এর অসুবিধা কোথায় তা বোঝা যাচ্ছে না?’ অন্যদিকে RVNL-এর আইনজীবী বলেছিলেন, ‘মাত্র তিন দিন রাত ১০টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত ট্র্যাফিক নিয়ন্ত্রণ করলেই আমাদের কাজ শেষ হয়ে যাবে।’ মঙ্গলবার সেই দাবিতেই যেন সিলমোহর দিল কলকাতা হাইকোর্ট।
মঙ্গলবারের শুনানিতে দীর্ঘদিন ধরে চলা এই মামলাকে জনস্বার্থ মামলা হিসাবে অগ্রাহ্য বলে দাবি করেন রাজ্যের পক্ষে সওয়ালকারী। তারপরই তীব্র ভর্ৎসনা ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির। তিনি বলেন, ‘ওই কাজ হয়ে গেলে নিউ গড়িয়া থেকে সেক্টর ফাইভ পর্যন্ত মেট্রো ছুটবে। এটা যদি জনস্বার্থ না হয়, তা হলে কোনটা জনস্বার্থ হবে?‘ ডিভিশন বেঞ্চের আরও পর্যবেক্ষণ, রাজ্য়ের অসহযোগিতার কারণে দিন দিন প্রকল্পের খরচও বেড়ে যাবে। যার প্রভাব পড়বে জনগণের টাকার উপরেই। তাই এই বিষয়ে আদালতের হস্তক্ষেপ করা জরুরি।