
কলকাতা: সওয়াল। পাল্টা সওয়াল। রাজ্যের কারামন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিনহাকে নিজেদের হেফাজতে চেয়ে একদিকে জোর সওয়াল ইডির আইনজীবীর। অন্যদিকে, ইডির আবেদনের বিরোধিতা করে পাল্টা যুক্তি চন্দ্রনাথের আইনজীবীর। দুই পক্ষের শুনানি শেষে কী রায় দেবেন বিচারক? অপেক্ষায় তখন সবাই। কারামন্ত্রীর জামিনের মেয়াদ কি বাড়বে? নাকি আজই মন্ত্রীকে নিজেদের হেফাজতে পাবে ইডি? এই নিয়ে প্রতীক্ষার অবসান এদিন ঘটল না। দুই পক্ষের শুনানি শেষে বিশেষ ইডি আদালতের বিচারক শুভেন্দু সাহা জানিয়ে দিলেন, মঙ্গলবার দুপুর দুটোয় রায় শোনাবেন তিনি।
প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় চন্দ্রনাথকে সাতদিনের হেফাজতে চেয়ে এদিন আদালতে ইডির আইনজীবী বলেন, “আমরা সাতদিনের হেফাজতে চাইছি। ২০২৪ সালের মার্চে আমরা নগদ লক্ষ টাকা ও মোবাইল পেলাম। যখন আমরা ৪১ লক্ষ টাকা পেলাম, তখন বুঝলাম তদন্ত আরও জোরালো করলে আরও কিছু তথ্যপ্রমাণ মিলতে পারে। তাই ওই টাকা উদ্ধারের পরই হেফাজতে নেওয়া হয়নি। তদন্ত চালিয়ে যাওয়া হয়েছে।” এতদিন তাঁকে গ্রেফতার না করার কারণ হিসেবে ইডির আইনজীবী বলেন, “ওঁর সম্পর্কে সব তথ্য জোগাড় না করে গ্রেফতার করতে গেলে ওঁর সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা সতর্ক হয়ে যেতেন। ওঁর লার্জার কানেকশন আছে। আমরা বাকি তথ্য পেতাম না। এখন আমরা সব তথ্য জোগাড় করেছি। তাই হেফাজতে চাইছি।”
ইডির হেফাজতের আবেদনের বিরোধিতা করে চন্দ্রনাথের আইনজীবী বলেন, “তদন্তের জন্য হেফাজতে নেওয়ার প্রয়োজন নেই। চার্জশিট জমা দেওয়ার পর আবার পিছন ফিরে পুরনো কী তদন্ত করতে চাইছে?” একইসঙ্গে কারামন্ত্রীর আইনজীবী যুক্তি দেন, “সন্দেহজনক নথি সম্পর্কে আমার মক্কেলের ব্যাখ্যা না নিয়ে হেফাজতে চাইতে পারে না ইডি।”
এদিন বিচারক শুভেন্দু সাহা ইডির আইনজীবীকে প্রশ্ন করেন, “আপনারা (ইডি) তো চার্জশিট দাখিল করার আগেই অনেক ক্লু পেয়েছিলেন। বয়ান রেকর্ড করার পর ১১ মাস পর কেন চার্জশিট দিলেন? কেন এতদিন অপেক্ষা করলেন?” ইডির আইনজীবী বলেন, “তল্লাশি ও বয়ান রেকর্ডের মাঝে পঞ্চম চার্জশিট জমা পড়েছে। পাশাপাশি সুপ্রিম কোর্ট পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করে বিচার শুরু করতে নির্দেশ দিয়েছিল। অফিসাররা সেইদিকে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। কিন্তু এর মাঝেও তদন্ত এগিয়েছে।”
দুই পক্ষের বক্তব্য শোনার পর বিচারক শুভেন্দু সাহা জানান, মঙ্গলবার দুপুর ২টায় ইডির আবেদন নিয়ে রায় দেবেন তিনি। প্রসঙ্গত, প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে ইডি চার্জশিট জমা দেওয়ার পর গত ৬ সেপ্টেম্বর বিশেষ ইডি আদালতে আত্মসমর্পণ করেন চন্দ্রনাথ। ওইদিন ইডি রাজ্যের কারামন্ত্রীকে হেফাজতে চেয়ে আবেদন করেছিল। তবে অন্তর্বর্তী জামিন পান চন্দ্রনাথ। তাঁর জামিনের মেয়াদ বাড়ানা হবে নাকি তাঁকে হেফাজতে পাবে ইডি, তা নিয়েই এদিন শুনানি হয়। শুনানি শেষে রাজ্যের মন্ত্রী বলেন, আদালতের উপর তাঁর আস্থা রয়েছে।