
কলকাতা: শিক্ষকদের কর্মসূচিতে যে এমনও হতে পারে, তা কখনও কেউ ভাবতেও পারেনি। কসবা কাণ্ডে এবার মুখ খুললেন সিপি মনোজ বর্মা। সাংবাদিক বৈঠকে তিনি বললেন, শিক্ষকদের কর্মসূচি ‘তালা লাগাও’, কিন্তু আদতে হয়েছে ভাঙা। দুটো সম্পূর্ণ পৃথক বিষয়।
প্রেস ক্লাবে সাংবাদিক বৈঠক করেন সিপি। তিনি বলেন, “এটা শিক্ষকদের কর্মসূচি। আপনি এই কর্মসূচি নিয়ে কতদূর ভাবতে পারবেন, শিক্ষকরা কী করতে পারেন? সেই ভাবেই পুলিশের তরফ থেকে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল। কেউ ভাবতেও পারেননি, শিক্ষকরা ওখানে গিয়ে হিংসা ছড়াবেন, মারধর করবেন, এটা কখনই আশা করা যায় না।” তাঁর কথায়, “তালা লাগানোর কর্মসূচি ছিল, কিন্তু তালা লাগানো হয়নি, তালা ভাঙা, সেটা সম্পূর্ণই ভিন্ন জিনিস।”
সিপি-র বক্তব্য, শিক্ষকদের তরফেই আগে পুলিশের ওপর হামলা হয়েছে। কসবায় শিক্ষকদের ওপর পুলিশি লাঠিচার্জ, লাথি মারার অভিযোগে সোচ্চার বাংলা। সামাজিক মাধ্যম থেকে শুরু করে সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ এই নিয়ে মুখ খুলছেন। কীভাবে চাকরিহারা শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের ওপর এহেন পদক্ষেপ করতে পারে পুলিশ, প্রশ্ন উঠতে থাকে। কিন্তু সিপি-র বক্তব্য, হামলা আগে হয়েছে পুলিশের ওপরেই। কীভাবে? সেই হামলা কতটা ভয়ঙ্কর, তারও ব্যাখ্যা দিলেন সিপি।
সিপি বলেন, “যাঁর বিরুদ্ধে এরকম অভিযোগ আসছে, তাঁর মেডিক্যাল রিপোর্ট দেখলে ভাল হত। কী রকম ইনজুরি ওর রয়েছে, শিক্ষকরা পুলিশকে মারবে, এরকমটা কেউ কখনও ভাবেনি। তবু মারা হয়েছে। আহত পুলিশ কর্মী তিন দিন হাসপাতালে ছিলেন। চিকিৎসক ওকে বাড়ি পাঠিয়েছে। ১৪ দিন বেড রেস্ট, তারপর এমআরআই হবে। ও কবে ঠিকভাবে হাঁটতে পারবে, সেটা তো পরের প্রশ্ন, কিন্তু বিষয় হল কখনও কি আশা করা যায়, একজন শিক্ষক এভাবে পুলিশকে মারবে!”
পুলিশের লাথি মারার তীব্র চর্চা হচ্ছে, পুলিশের বিরুদ্ধে বিভিন্ন বিশেষণ যোগ্য করে বিঁধা হচ্ছে, কিন্তু সে সবের উর্ধ্বে পুলিশের সঙ্গে কী হয়েছে, তার ব্যাখ্যা দিলেন সিপি। পুলিশ কর্তার বক্তব্য, “যে পুলিশ কর্মীর বিরুদ্ধে লাথি মারার অভিযোগ রয়েছে, ওর আঘাত বুকে, কানে চড় মারা হয়েছে। ইয়ার ড্রাম যদি ইনজুরি হত, তাহলে কে দায়ী থাকত? চশমা ভেঙে গিয়েছে, যদি কাচ চোখে ঢুকে যেত, তাহলে দায় কে নিত। সবথেকে দুর্ভাগ্যজনক, পুলিশের বিরুদ্ধে অনেক কথা বলা হচ্ছে, বিশেষণ সহকারে বলা হচ্ছে… কিন্তু পুলিশকে আঘাত যাঁরা করেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে একটাও কথা বলা হচ্ছে না। পুলিশের প্রধান হিসাবে এই গোটা বিষয়টি আমার কাছে একদমই গ্রহণযোগ্য নয়।”
তবুও পুলিশের লাথি মারার বিষয়টি কখনই কাম্য নয় বলেই জানিয়েছেন সিপি। যাতে ভবিষ্যতে না হয়, তার জন্য বিভাগীয় পদক্ষেপও করারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আর সেটি যে কেবল এই ঘটনার প্রেক্ষিতে, তা নয়, সিপির বক্তব্য, “কীভাবে পুলিশ আরও বেশি সহনশীলতার সঙ্গে পরিস্থিতি সামলায়, তা দেখতে বলেছি। আরজিকরের পর পুলিশকে অনেক ট্রেনিং দেওয়া হয়েছে। পুলিশের ভুল হতেই পারে, কিন্তু সেটা যাতে পুনরায় না হয়, প্রত্যেক মাসে থানার আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক হয়।”