কলকাতা: বকেয়া ডিএ, রাজ্য জুড়ে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে সরকারি কর্মীদের সংগ্রামী যৌথ মঞ্চ। শহর-জেলা জুড়ে ধর্মঘটের আঁচ। স্কুলে স্কুলে কর্মবিরতি শিক্ষকদের। ফেরিঘাটেও ধর্মঘটের প্রভাব। জরুরি পরিষেবা ছাড়া সরকারি কর্মচারীরা কোন কাজ করবেন না, জানিয়েছে যৌথ মঞ্চ। ধর্মঘট সফল করতে নাছোড়বান্দা সরকারি কর্মীরা। এদিন ধর্মঘট রুখতে কড়া পদক্ষেপ করেছে রাজ্য সরকারও। অনুপস্থিত থাকলে কর্মজীবনে ছেদ পড়বে।
দিনহাটার বিভিন্ন স্কুল পরিদর্শনে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী উদয়ন গুহ। খতিয়ে দেখলেন হাজিরা খাতা। যারা ছুটিতে, কেন ছুটিতে বিস্তারিত খোঁজ নেন মন্ত্রী। কথা বলেন শিক্ষক-অশিক্ষক কর্মীদের সঙ্গে। এমনকী যাঁরা হাজিরা খাতায় সই করেননি, তাঁদের অনেকেই ধমক দিয়ে সই করান তিনি।
বকেয়া মহার্ঘভাতার দাবিতে ধর্মঘটকে সমর্থন নওশাদ সিদ্দিকির। নিজে বিধানসভায় না গিয়ে ধর্মঘটকে সমর্থন করেছেন তিনি। দলের কর্মীদেরও সমর্থন করতে আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, এটা শুধু সরকারি কর্মচারীদের সমস্যা নয়, গোটা বাংলার ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে।
বাঁকুড়া জেলা স্কুল পরিদর্শকের অফিসে পুলিশ ও আন্দোলনকারীদের ধস্তাধস্তি। কর্মচারীদের ঢুকতে বাধা দেয় ধর্মঘটীরা। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় বাঁকুড়া সদর থানার পুলিশ। এরপরেই পুলিশের সাথে ধর্মঘটীদের ধস্তাধস্তি বেধে যায়। বেশ একজন কে আটক করেছে পুলিশ।
পুরুলিয়া জেলার বিভিন্ন জায়গায় ধর্মঘট পালিত হচ্ছে। বেশ কয়েকটি জায়গা থেকে ঝামেলার খবরও এসেছে। বড়বাজারের অবর বিদ্যালয় পরিদর্শকের দফতরে ঢোকার রাস্তা বনধ্ সমর্থকরা বন্ধ করে দিলে ঝামেলা বাধে। ঠেলাঠেলিও হয়। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আনে। একইভাবে পুরুলিয়া জেলা শিক্ষা দফতরেও মূল প্রবেশ পথ বন্ধ করে দিলে উত্তেজনা ছড়ায়। ঘটনাস্থলে পৌঁছয় পুরুলিয়া সদর থানার পুলিশ। পুলিশি হস্তক্ষেপে এখানে দরজা খুলে দেওয়া হয়।
বকেয়া ডিএ-র দাবিতে বালুরঘাট জেলা আদালতে সরকারি কর্মচারীরাও ধর্মঘটে সামিল হলেন। শুক্রবার সকাল সাড়ে দশটার পর থেকে বালুরঘাট জেলা আদালতের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। আদালতে সরকারি কর্মচারীদেরও দাবি একই, বকেয়া ডিএ অবিলম্বে প্রদান করতে হবে।
সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের ডাকা ধর্মঘট নিয়ে বর্ধমানের রাস্তায় আন্দোলনকারীরা। বেলা দশটা থেকে বর্ধমান ট্রেজারির গেট, প্রশাসনিক ভবন, স্কুল বোর্ড ও প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের সামনে পিকেটিং শুরু করেন ধর্মঘটের সমর্থনকারীরা। তবে অফিসে ঢুকতে তাঁরা কাউকে বাধা দেননি। বর্ধমান আদালতে এদিন ধর্মঘটের বড় রকমের প্রভাব দেখা গেছে।
কোচবিহারে ডিআই অফিস সম্পূর্ণ ভাবে বন্ধ । কিছু আধিকারিক দফতরে ঢোকার জন্যে এলেও ধর্মঘট সমর্থকদের বাধায় তারা দফতরে ঢুকতে পারেননি । পরবর্তীতে তাঁরা চলে যান । যৌথ মঞ্চের সদস্যরা প্রচুর পরিমাণে জমায়েত হয়ে আছে গোটা অফিস চত্বরে।
মহার্ঘ ভাতার দাবিতে ধর্মঘটে শামিল ডানকুনি শ্রীরামকৃষ্ণ বিদ্যাশ্রমে উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষিকারা। ২৫ জন শিক্ষক শিক্ষিকাদের মধ্যে সবাই অনুপস্থিত। পঠন পাঠন না হওয়ায় ক্লাস রুমেই বসে আছে ছাত্র-ছাত্রীরা।
আলিপুর সরকারি দফতরের সামনে ধর্মঘটের পক্ষে রাজ্য কোঅর্ডিনেশন কমিটির পক্ষ থেকে সরকারি কর্মচারীদের অনুরোধ করা হচ্ছে কাজে যোগদান না করতে কর্ম বিরতি রাখতে।
রাজ্যজুড়ে আট হাজারেরও বেশি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে রাজ্যজুড়ে ছাত্র ধর্মঘরের ডাক দিয়েছে AIDSO। আর সেই ধর্মঘটকে সমর্থনে সকাল থেকেই মেদিনীপুর কলেজ গেটের সামনে হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে অবস্থান বিক্ষোভে বসেন পড়েন কর্মী সমর্থকরা । কলেজে আসা ছাত্র-ছাত্রী-সহ অধ্যাপক অধ্যাপিকাদের আবেদন জানাচ্ছেন যাতে ধর্মঘটের সমর্থনে তাঁরা কলেজে না যান।
ধর্মঘটকে প্রতিহত করতে হাওড়ায় পুলিশি প্রস্তুতি জোরকদমে। সকাল থেকেই ব্যারিকেড করে রাখা হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলিকে। সকল থেকেই বিভিন্ন জায়গায় পুলিশ মোতায়েন করে রাখা হয়েছে। সকাল থেকেই সেই সব জায়গায় ঘুরে নজরদারি চালান হাওড়া সিটি পুলিশের উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা।
ডিএ আন্দোলনকারীদের অনশন তুলে নেওয়ার আবেদন জানিয়েছেন রাজ্য়পাল। তাঁর বক্তব্য আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান সম্ভব। ধর্মতলায় আন্দোলনরত সরকারি কর্মীদের উদ্দেশে বার্তা রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোসের। রাজ্যপালের বক্তব্য, ডিএ নিয়ে যে অনশন চলছে, তাতে অসুস্থ হয়ে পড়বেন একের পর এক সরকারি কর্মী। মানুষের পরিষেবা ব্যহত হবে। যদিও আন্দোলনকারী সরকারি কর্মীদের বক্তব্য, তাঁরা এ ধরনের কোনও বক্তব্য পাননি।
ডিএ আন্দোলন নিয়ে উত্তেজনার পারদ চড়ছে।এদিকে আন্দোলনে দ্বিধাবিভক্ত তৃণমূল সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত বহু সরকারি কর্মী। একদিকে DA নিয়ে অধিকারের লড়াইয়ে থাকতে চাইছেন তৃণমূল সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত সরকারি কর্মীরা। অন্যদিকে শাসক দলের সংগঠনের একাংশ সরাসরি বিরোধিতায় নামছে বলে অভিযোগ মালদহ শহরে। আজ DA আন্দোলন নিয়ে জমায়েত, মিছিলের আয়োজন। পোস্টার, প্ল্যাকার্ড ছিঁড়ে আন্দোলনে বাধা দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ। তবে আন্দোলনের বিরোধিতা যারা করছেন তাঁদেরকেও DA আন্দোলনে আহ্বান জানিয়েছেন আন্দোলনের সমর্থনকারীরা।
কলকাতায় সকালে ডোরিনা ক্রসিংয়ে সরকারি বাস পরিষেবা স্বাভাবিকই বলা যেতে পারে। সরকারি বাস বেশ ভালই দেখা গিয়েছে। তাতে যাত্রী পরিষেবাও স্বাভাবিক।
এক সরকারি কর্মী বলেন, “আমরা দীর্ঘদিন ধরেই সরকারের হুমকি শুনে এসেছি। এই সরকারের ক্ষমতা নেই চাকরি কেড়ে নেওয়ার। কেবল তো ডিএ নয়, চুক্তিভিত্তিক কর্মচারীদের স্থায়ীকরণেরও দাবি জানাচ্ছি।” সরকারি বাস ডিপোতেও ধর্মঘটের প্রভাব লক্ষ্য করা গিয়েছে।
ধর্মঘটের মিশ্র প্রভাব শহর কলকাতায়। আপাতত স্কুলের উপস্থিতিতে প্রভাব পড়েনি। সরকারি প্রাথমিক স্কুলেও শিক্ষকরা এসেছেন। তবে কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাব পড়বে বলে মত শিক্ষামহলের। মূলত বিরোধী ছাত্র সংগঠনগুলো ক্লাস করবে না। সিপিএম নৈতিক সমর্থন জানিয়েছে।