কলকাতা: সারা রাত যন্ত্রণায় ছটফট করেছে ২৬ বছরের ছেলেটি। খাস কলকাতা (Kolkata) শহরের বাসিন্দা মেঘনাদকে নিয়ে একের পর এক হাসপাতালে ঘুরেছেন তাঁর মা। ডাক্তার অন্তত একবার দেখুন, এটুকুই আর্জি ছিল তাঁর। কিন্তু চিকিৎসা তো দূরের কথা, ফিরেও দেখেননি চিকিৎসক। টলিগঞ্জের মেঘনাদ চন্দ্রের মৃত্যুর পর এমনই সব বিস্ফোরক অভিযোগ সামনে আসছে। মঙ্গলবার সকালে একাধিক হাসপাতালে ঘোরার পর এনআরএস হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে, সেখানেই মৃত্যু হয় ওই যুবকের। তাঁর মা জানিয়েছেন, ছেলে যখন কাতরাচ্ছে, তখন তাঁকে বলা হয়, কাগজ (টিকিট) আনতে হবে। যখন তিনি কাগজ আনার লাইনে, ততক্ষণে সব শেষ! তেমনটাই দাবি মেঘনাদের মায়ের।
পুত্রশোকে অঝোরে কাঁদতে কাঁদতে মেঘনাদের মা বলেন, ‘জানেন স্যর! আমার ছেলের কোনও চিকিৎসাই হয়নি। পায়ে ধরে বলেছি… শুধু বলছেন, কাগজ করে নিয়ে এস। আমি বলেছি কাগজ আনছি স্যর, আপনি চিকিৎসাটা শুরু করুন… না, কাগজ না এলে চিকিৎসা শুরু হবে না।’
মায়ের দাবি, ডাক্তারের কথা মতো কাগজ আনতেও গিয়েছিলেন তিনি। ফিরে দেখেন তাঁর ছেলের বুকে পাম্প করে শ্বাস প্রশ্বাস স্বাভাবিক করার চেষ্টা হচ্ছে। তখনই তিনি বুঝে যান, ছেলে আর নেই।
শুধু মা নন, মেঘনাদের আর এক আত্মীয় জানান, তিনি মেঘনাদের পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন। মেঘনাদের পাশে আরও এক রোগী শুয়ে ছিলেন। ওই আত্মীয়ের দাবি, তিনি বুঝতে পেরেছিলেন মেঘনাদের খুব কষ্ট হচ্ছে। বারবার ডাকা সত্ত্বেও চিকিৎসক নাকি ফিরেও তাকাননি। এরপরই ক্রমশ নিস্তেজ হয়ে পড়েন মেঘনাদ। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে জানিয়েছে, চিকিৎসায় কোনও গাফিলতি হয়নি।
চিকিৎসক দেখেছিলেন কি না, তা নিয়ে বিতর্ক থাকতেই পারে, কিন্তু ‘রেফার’ রোগের সত্যিটা কীভাবে এড়াবে স্বাস্থ্য দফতর? প্রথমে এমআর বাঙুর, তারপর এসএসকেএম, তারপর চিত্তরঞ্জন, তারপর এনআরএস। সেখানেও ভর্তি করতে দেরি করার অভিযোগ। গ্রাম তথা জেলা তো দূরের কথা, কলকাতা শহরের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিয়েই প্রশ্ন তুলে দিয়েছে বছর ২৬-এর যুবকের মৃত্যু। জানা গিয়েছে, দিন কয়েক আগে খেলতে গিয়ে পায়ে চোট পেয়েছিলেন ওই যুবক। সোমবার বাইক থেকে পড়ে গিয়ে আবারও আঘাত লাগে। ওই ঘটনার পর আর যন্ত্রণা সহ্য করতে পারেননি তিনি। এরপরই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রেফার রোগ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করার পরও কীভাবে এমন ঘটনা ঘটল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।