কলকাতা: প্রথমে কারণ দর্শানোর নোটিস। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সাময়িক বরখাস্তের নোটিস দেওয়া হয় রীতেশ তিওয়ারি এবং জয়প্রকাশ মজুমদারকে। সোমবারই রাজ্য বিজেপির কার্যালয় সম্পাদক প্রণয় রায় জয়প্রকাশ মজুমদার ও রীতেশ তিওয়ারিকে চিঠি পাঠান। এ বার, রাজ্যের প্রধান বিরোধী দলের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে মুখ খুললেন বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ (Dilip Ghosh)।
মঙ্গলবার ইকোপার্কে প্রাতঃভ্রমণ শেষ করে দিলীপ বলেন, “প্রত্যেক দলের অন্দরে একটা শৃঙ্খলারক্ষা কমিটি রয়েছে। সেই শৃঙ্খলারক্ষা কমিটি দলের কোনও কর্মীর আচরণ নিয়ে প্রশ্ন তুলতেই পারে। সেইমতোই পদক্ষেপ করা হয়েছে। যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে তাঁরা যথাসময়ে যথাযোগ্য ফোরামে তার উত্তর দেবেন।” উল্লেখ্য, সোমবারই দলের অন্দরের বিক্ষোভের সুর নিয়ে বর্ষীয়ান সাংসদ মন্তব্য করেছিলেন, “কোন্দলের কিছু নেই। পরিবর্তনের হাওয়ায় একটু আওয়াজ হয়। সময়ের সঙ্গে ঠিক হয়ে যাবে।”
সাময়িক বরখাস্তের যে নোটিস রীতেশ ও জয়প্রকাশকে পাঠানো হয়েছে, তাতে লেখা হয়েছে, ‘রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের নির্দেশ অনুসারে নিম্নলিখিত ব্যক্তিদ্বয়ের বিরুদ্ধে শুরু হওয়া দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাঁদের দল থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হচ্ছে।’ নিচে লেখা রীতেশ তিওয়ারি ও জয়প্রকাশ মজুমদারের নাম।
বিজেপির রাজ্য কমিটি ও সাংগঠনিক জেলা সভাপতিদের নাম ঘোষণার পর থেকেই বিজেপির অন্দরে ‘বিদ্রোহ’-এর সুর শোনা যাচ্ছে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর থেকে শুরু করে একের পর এক বিধায়ক সুর বদলেছেন। কমিটিতে কোথাও স্থান পাননি দলের বহু পুরনো নেতা জয়প্রকাশ মজুমদার, রীতেশ তিওয়ারি, সায়ন্তন বসু, রাজু বন্দ্যোপাধ্যায়রা। জয়প্রকাশ মজুমদার, সায়ন্তন বসু, রীতেশ তিওয়ারিরা এরপর শান্তনু ঠাকুরের বনগাঁর বাড়িতে বৈঠকও করেছেন। হয়েছে শীতকালীন পিকনিকও।
কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী শান্তনুর ‘বিক্ষুব্ধ বৈঠকেও’ প্রথম সারিতে দেখা যায় জয়প্রকাশ ও রীতেশকে। এরইমধ্যে রবিবার জয়প্রকাশ মজুমদার ও রীতেশ তিওয়ারিকে কারণ দর্শানোর নোটিস দেয় দল। তাঁদের বিরুদ্ধে দলীয় শৃঙ্খলা ভাঙার অভিযোগ তোলা হয়। কেন সংবাদমাধ্যমে তাঁরা দলবিরোধী কথা বলেছে, তা জানতেও চাওয়া হয়।
যদিও এ বিষয়ে সোমবার পর্যন্ত রীতেশ তিওয়ারি বা জয়প্রকাশ মজুমদার দলকে কিছু জানাননি বলেই সূত্রের খবর। রীতেশ তিওয়ারি আগেই বলেছেন, “আমি যে চিঠি পেয়েছি, সেখানে বলা হয়েছে আমি নাকি দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছি। দলের বিরুদ্ধে আমি সংবাদমাধ্যমে মুখ খুলেছি। কিন্তু যে চিঠিটা পেয়েছি সেখানে উল্লেখ করা হয়নি কবে কোথায় কী বলেছি। এর কোনও ব্যাখ্যাও নেই।”
সোমবার সন্ধ্যায় জানা যায় দুই নেতাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে দল থেকে। শোনা যাচ্ছে এই চিঠির প্রতিলিপি কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে পাঠানো হবে। যদিও জয়প্রকাশ মজুমদার বা রীতেশ তিওয়ারিরা দলের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে সংবাদমাধ্যমের সামনে মুখ খোলেননি এখনও।
তবে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দুই নেতাকে বরখাস্ত করার পরিকল্পনাই ছিল রাজ্য নেতৃত্বের। সেই জন্যই জবাবি চিঠির কোনও সময়সীমা বেধে দেওয়া হয়নি। শুধু রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার সোমবার বলেছিলেন, “দল বিষয়টি দেখছে। আমরা খুব তাড়াতাড়ি জবাব চাইছি। দলের শৃঙ্খলা রক্ষা কমিটি আছে। তারা এই বিষয়ে ব্যবস্থা নেবে।” এরই মধ্যে সাময়িক বরখাস্তের নির্দেশও সামনে এল।
আরও পড়ুন: ‘লক্ষ্যপূরণ’ অভিষেকের, বিতর্কের মাঝেই ডায়মন্ড হারবার মডেলের সাফল্যে পোস্ট তৃণমূল সাংসদের