কলকাতা: কখনও বাড়িতে ফাটল, কখনও আবার সুড়ঙ্গে জল ঢুকতে শুরু করা, বারে বারে বাধার মুখে পড়ছিল ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর কাজ। তবে আর অপেক্ষা নয়। একদম শেষ “টাচ” দেওয়া শুরু হল ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর রুটে। অর্থাৎ শেষ ল্যাপের কাজ চলছে এখন। আর শেষ ধাপে মেট্রোর সবথেকে কঠিন অংশে কাজ শুরু। কোথায় সেটা? অবশ্য়ই বউবাজার।
বউবাজারের ভূ-গর্ভের সুড়ঙ্গ তৈরির অন্তিম পর্যায়ের সবথেকে কঠিন কাজে হাত দিল ইস্ট – ওয়েস্ট প্রকল্প রূপায়ণকারী কেএমআরসিএল। শিয়ালদহ থেকে এসপ্ল্যানেড-কে জুড়তে কাজ চলছে সুড়ঙ্গের। এই পাতাল সুড়ঙ্গ দিয়েই ছুটবে মেট্রো। কিন্তু এই বউবাজারেই বারেবারে ঘটেছে বিপর্যয়। এবার নতুন করে বিপর্যয় যাতে না হয়, তার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে।
জানা গিয়েছে, বউবাজারের রুটে কংক্রিট সুড়ঙ্গের মধ্যে তৈরি হচ্ছে আরেকটি সুড়ঙ্গ, লোহার। একটি টানেলে ১০৮ মিটার জায়গায়, অপর টানেলে ৯২ মিটার জায়গায় বসানো হচ্ছে বিশেষ স্টিলের রিং। মেট্রোর প্রকল্পের ইঞ্জিনিয়ারদের কথায়, এই রিং লাগানোয়, বাকি কাজ শেষ করতে অনেক সুবিধা হবে।
কী সেই সুবিধা? ভূ-গর্ভের ভিতরে খোঁড়াখুঁড়ির সময় জল বেরনো আটকাবে এই লোহার রিং। এমনকী, ভিতরের টানেল বা সুড়ঙ্গের দু’পাশ আরও মজবুত করতেও সাহায্য করবে।
বউবাজারে একাধিকবার ঘটে গিয়েছে দুর্ঘটনা। ভূ-গর্ভের বিপত্তিতে মাটির উপরে থাকা মানুষজন ঘর ছাড়া হয়ে মেট্রোর উপর ক্ষোভ দেখিয়েছে। মাটির তলার জল বেরিয়ে এসে, মাটি বসে গিয়ে বহুবার বাড়িতে ধরেছে ফাটল।
তাই এবার বাড়তি সুরক্ষার ব্যবস্থা মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষের।
বউবাজারের ভূ-গর্ভের পরিস্থিতি নিয়ে খোদ মেট্রো জেনারেল ম্যানেজার উদ্বেগ প্রকাশ করে সংশ্লিষ্ট প্রকল্প নিয়ে কার্যত অনিশ্চয়তার কথা বললেও, নতুন কারিগরি ব্যবস্থা আবার আসার আলো দেখাচ্ছে বলেই মনে করছেন মেট্রোর কর্তারা।
এই লোহার রিং বসানোর কাজ সম্পূর্ণ হয়ে গেলে আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যেই শিয়ালদহ-এসপ্ল্যানেড জুড়ে দেওয়া যাবে বলেই দাবি তাঁদের। এই প্রকল্প যে ইঞ্জিনিয়ারিং সংস্থার হাতে বাস্তবায়ন হচ্ছে অর্থাৎ আইটিডির কর্তা রূপক সরকার এই প্রসঙ্গে বলেন, “বৌবাজারের সুড়ঙ্গ নিয়ে কিছু সমস্যা হয়েছিল। আমরা সমস্ত সমস্যা কাটিয়ে দুটো টানেলের কাজ সম্পূর্ণ করেছি। কোনও সমস্যা পাওয়া যায়নি। তাও সতর্কতার জন্য আমরা সুড়ঙ্গে স্টিলের প্লেট দিয়ে তৈরি রিং বসাচ্ছি। আড়াই কিমি দীর্ঘ এক একটি টানেল। মোট ৪ জায়গায় এই প্লেট বসাচ্ছি। এটা অতিরিক্ত সুরক্ষা দেবে। যাত্রীদের নিরাপত্তাও নিশ্চিত হবে।”
অর্থাৎ সবকিছু ঠিক থাকলে, নতুন বছরেই জুড়ে যাবে শিয়ালদহ-এসপ্ল্যানেড। ইতিমধ্যেই এসপ্ল্যানেড-হাওড়া ময়দানের রুটও সচল। যাত্রীদের মধ্যেও ইতিবাচক সাড়া মিলছে নতুন রুটে। শিয়াদহ-এসপ্ল্যানেড রুট জুড়ে গেলে, হাওড়া থেকে শিয়ালদহও পৌঁছে যাওয়া যাবে কয়েক মিনিটেই।