কলকাতা: গার্ডেনরিচে নিসার আহেমদ খান নামে এক পরিবহণ ব্যবসায়ীর বাড়ি থেকে কোটি কোটি টাকা উদ্ধার করেছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। এখনও পর্যন্ত ১৫ কোটি টাকারও বেশি উদ্ধার হয়েছে। টাকা গোনার কাজ এখনও চলছে। ঘটনায় মূল অভিযুক্ত নিসার খানের ছেলে আমির খান। ইডির তরফে জানানো হয়েছে, ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে পার্ক স্ট্রিট থানায় একটি এফআইআর করা হয়েছিল। সেই সূত্র ধরেই এদিন কলকাতার ছয় জায়গায় হানা দেয় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার পৃথক পৃথক দল। ইডি জানিয়েছে, ‘ই-নাগেট’ নামে একটি মোবাইল গেমিং অ্যাপ ব্যবহার করে প্রতারণার ফাঁদ পেতেছিল নিসারের ছেলে আমির খান।
গার্ডেনরিচ এলাকার এক ঘিঞ্জি সরু গলির মধ্যে বাড়ি নিসার আহমেদ খানের। ভাবতেই পারবেন না, এই বাড়ির মধ্যে খাটের তলায় কোটি কোটি অঙ্কের টাকা লুকিয়ে রাখা ছিল। আশপাশের বাসিন্দারাও অবাক এই টাকার অঙ্কের কথা শুনে। নিসারের বাড়ির লোকেদের চালচলনও খুব যে বিলাসবহুল তাও নয়। একেবারে সাধারণ, মধ্যবিত্ত ঘরের মতো। এমন বাড়ি থেকে কোটি কোটি অঙ্কের টাকার পাহাড় উদ্ধার হওয়ায় তাজ্জব এলাকাবাসীরা।
গার্ডেনরিচ এলাকায় একটি সরু গলির মধ্যে নিসার খানের দোতলা বাড়ি। বাইরে থেকে দেখে খুব একটা আতিশয্য চোখে পড়ে না। বাড়ির বাইরে এসির ভেন্ট রয়েছে। নাসিরের বয়স সত্তরের ঘরে। পেশায় পরিবহণ ব্যবসায়ী। খোঁজখবর নিয়ে জানা যায়, বিভিন্ন কন্টেনারের ব্যবসা রয়েছে তাঁর। দীর্ঘদিনের ব্যবসা। এর পাশাপাশি নাসিরের আমদানি-রফতানির ব্যবসা রয়েছে বলেও সূত্র মারফত জানা গিয়েছে। নাসিরের তিন ছেলে। তাদের মধ্যেই একজন আমির। ঘটনায় মূল অভিযুক্ত।
‘ই-নাগেট’ গেমিং অ্যাপটি তৈরি করেছিল নাসের আহমেদ খানের ছেলে আমির খান। মূলত, মানুষকে প্রতারণা করার জন্যই এই অ্যাপটি তৈরি করা হয়েছিল। শুরুর দিকে আর পাঁচটা সাধারণ গেমিং অ্যাপের মতোই চলত। ওই গেমিং অ্যাপের মাধ্যমে ব্যবহারকারীদের ওয়ালেটে কমিশন হিসেবে টাকা দেওয়া হত। নিজের ইচ্ছামতো সময়ে সেই টাকা সহজেই তুলে নিতে পারতেন ব্যবহারকারীরা। ফলে ব্যবহারীদের কারও মনে কোনও সন্দেহও ছিল না। ফলে তাঁরা আরও বেশি বেশি করে টাকা এই গেমিং অ্যাপের জন্য ব্যবহার করতে শুরু করেন। এরপরই সুযোগ বুঝে সব টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়।
যখন অ্যাপ ব্যবহারকারীরা ধরে নেন, অ্যাপটি ঠিকঠাক, তখন তাঁরা আরও বেশি অর্থ এই অ্যাপে ব্যবহার করতে শুরু করেন। ব্যবহারকারীরা ভেবেছিলেন, বড় অঙ্কের টাকা ব্যবহার করা হলে, আরও বেশি টাকা তাঁরা ফেরত পাবেন। আর তাতেই হল কাল। ব্যবহারকারীরা যখনই একটি মোটা অঙ্কের টাকা এই অ্যাপে বিনিয়োগ করে ফেললেন, তখনই হঠাৎ করে টাকা তোলার অপশনটি বন্ধ করে দেওয়া হয় অ্যাপে। অজুহাত দেওয়া হয়, সিস্টেম আপগ্রেডেশন। এরপর সব ব্যবহারকারী আগের প্রোফাইলের যাবতীয় তথ্য উড়ে যায়। আর তখনই ব্যবহারকারীরা বুঝতে পারেন, কীভাবে প্রতারণার ফাঁদ পাতা হয়েছিল।
২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে পার্ক স্ট্রিট থানায় প্রতারণার অভিযোগ দায়ের করা হয় আমির খান এবং অন্যান্যদের বিরুদ্ধে। ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪২০, ৪০৬, ৪০৯, ৪৬৮, ৪৬৯, ৪৭১ এবং ৩৪ ধারায় এফআইআর করা হয়েছিল। সেই সূত্র ধরেই এদিন অভিযানে নামে ইডির তদন্তকারী দল। আর তাতেই আসে সাফল্য।