
কলকাতা: বয়স সবে আট মাস পেরিয়েছে। আর এই একরত্তিকেই রোজ চারবার করে নেবুলাইজার আর সারাদিনে ৭টি ওষুধ খেতে হয়। ঠিকমতো হাত-পা নাড়তে পারে না। কারণ, শিশুকন্যাটি একটি বিরল রোগে আক্রান্ত। চিকিৎসার জন্য প্রয়োজন ৯ কোটি টাকার একটি ইঞ্জেকশন। শিশুকন্যাটির নাম অংশিকা। একমাত্র মেয়ের চিকিৎসার জন্য সাধারণ মানুষের কাছে সাহায্যের আর্তি জানিয়েছেন অংশিকার বাবা-মা।
জন্মের এক মাস ১৭ দিন পর থেকেই মেয়ে ঠিক মতো হাত-পা নাড়ছে না দেখে চিকিৎসকদের শরণাপন্ন হন শিশুটির বাবা অনিমেষ মণ্ডল এবং তাঁর স্ত্রী বিটপী মণ্ডল। চিকিৎসকদের পরামর্শ মেনে কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষা করেন। বেঙ্গালুরু থেকে রিপোর্ট আসার পর মাথায় বাজ পড়ে অনিমেষ ও বিটপীর। জানা যায়, অংশিকা এক ধরনের জিন ঘটিত রোগ স্পাইনাল মাসকুলার অ্যাট্রফি (এসএমএ) টাইপ ওয়ান-এ আক্রান্ত। চিকিৎসায় এই রোগ সারানো সম্ভব। কিন্তু সেই চিকিৎসার জন্য সুইজারল্যান্ড থেকে আনাতে হবে একটি ইঞ্জেকশন। যার দাম ভারতীয় মুদ্রায় ১৪ কোটি টাকা!
একমাত্র মেয়ের চিকিৎসার জন্য কলকাতার এসএসকেএম থেকে শুরু পিয়ারলেস এমনকী দিল্লির অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্সেও ছুটেছেন অনিমেষ ও বিটপী। কিন্তু সকলেই জানিয়েছে, এক রোগের চিকিৎসার জন্য ওই ইঞ্জেকশনটি দিতেই হবে। অংশিকার পরিবারের সামর্থ্য নেই জেনে ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থা ইঞ্জেকশনটি ৯ কোটি টাকায় দিতে রাজি।
মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে অংশিকা। অনিমেষ এক সময়ে রাজ্য সরকারের পূর্ত দফতরে জুনিয়র ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে কাজ করতেন। পরে সেই চাকরি ছেড়ে মালদহের রতুয়ায় একটি কলেজে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে শিক্ষকতা করেন। তাঁর বাড়ি দক্ষিণ ২৪ পরগনায়। বর্তমানে কর্মসূত্রে মালদহের রতুয়ারই মাটিগঞ্জে থাকেন।
মেয়ের চিকিৎসার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার, রাজ্য সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছেন। সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীতে ফোনও করেছেন। তবে এখনও কোনও সাড়া পাননি। পাশাপাশি ক্রাউড ফান্ডের জন্য আবেদন করে উঠেছে মাত্র ৩৫ লক্ষ টাকা।
মেয়ের চিকিৎসায় সাহায্যের জন্য সাধার মানুষের কাছে কাতর আর্জি অংশিকার বাবা-মায়ের
এ দিকে যত দিন যাচ্ছে অংশিকার শরীর কখনও খারাপের দিকে যায়। আবার কখন ভাল থাকে। প্রতি মাসে একবার কলকাতার পিয়ারলেস হাসপাতালে নিয়ে এসে চিকিৎসা করাতে হয়। আবার প্রতি ২ মাস অন্তর এসএসকেএম থেকে ফোন করে ডাকা হয়। শরীর অতিরিক্ত খারাপের দিকে গেলে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়। একটু সুস্থ হলে বাড়িতে এনে চিকিৎসা চলে। অংশিকার বাবা অনিমেষ মণ্ডল জানান, চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন মেয়ের বয়স দুই হওয়ার আগেই ইঞ্জেকশনটা দিতেই হবে। নাহলে এক এক করে অঙ্গ বিকল হতে থাকবে।
কিছুদিন আগেই নদিয়ার রাণাঘাটের ছোট্ট অস্মিকা দাসকে বাঁচাতে ‘দূত’ হিসেবে এগিয়ে এসেছিলেন সাধারণ মানুষ। অস্মিকাও এই বিরল জিনঘটিত রোগে আক্রান্ত। ক্রাউড ফান্ডিংয়ের পর ওই বহুমূল্য ইঞ্জেকশন পায় অস্মিকা। এখন অংশিকার বাবা-মায়েরও সাধারণ মানুষের কাছে কাতর আবেদন, তাঁদের ছোট্ট শিশুকে বাঁচাতে এগিয়ে আসুন সবাই। সকলে মিলে একটু করেও সাহায্য করে যদি বাকি টাকাটা জোগাড় হয়, মেয়েকে বাঁচাতে পারবেন তাঁরা।